Results for Biography

সত্যজিৎ রায়ের জীবনী ।। সাল অনুযায়ী সম্পূর্ণ জীবনপঞ্জী ।। কত বছর বয়সে ফেলুদা লেখা শুরু করেন ? জেনে নিন

October 22, 2021

 সত্যজিৎ রায়ের সংক্ষিপ্ত জীবনী 

satyajit ray biography and details life events



"পথের পাঁচালীর তুল্য ছবি বিশ্বে এ যাবৎ নির্মিত হয়নি।"

সত্যজিৎ রায় যে বিশ্বের সর্বকালের শ্রেষ্ঠ চিত্রপরিচালকদের একজন, এ ব্যাপারে দ্বিমত প্রকাশের অবকাশ কম। তিনি সামগ্রিকভাবে বাঙ্গালী জাতিকে বিশ্বের দরবারে গৌরবান্বিত করেছেন। ১৯৫৯ খৃষ্টাব্দে দুনিয়ার সর্বকালের শ্রেষ্ঠতম চিত্রপরিচালক আইজেনস্টাইনের স্ত্রী ও সহকারিণী মেরী সিটন কলকাতায় এসে বলেন, “পথের পাঁচালীর তুল্য ছবি বিশ্বে এ যাবৎ নির্মিত হয়নি। " 

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট স্বয়ং কলকাতায় এসে সত্যজিৎ রায়কে তাদের দেশের সর্বোচ্চ সম্মানে ভূষিত করে যান। চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবে সত্যজিৎ যতবার যতভাবে পুরস্কৃত হয়েছেন, তার দ্বিতীয় নিদর্শন এ দেশে নেই।

জন্মঃ ১৯২১ খৃষ্টাব্দে ২রা মে সত্যজিৎ রায়ের জন্ম কলকাতার এক সুপরিচিত সাংস্কৃতিক পরিবারে। তার বাবা সুকুমার রায় বাংলা সাহিত্যের এক দিকপাল কবি-লেখক। তাঁর ঠাকুরদা উপেন্দ্রকিশাের রায়চৌধুরিও একজন স্বনামধন্য শিশুসাহিত্যিক। মা সুপ্রভা রায় একজন শিক্ষিকা। সত্যজিৎ মাত্র আড়াই বছর বয়সে পিতৃহারা হন।

পড়াশুনাঃ  সত্যজিৎ রায় ১৯৩৬ খৃষ্টাব্দে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। ১৯৪০ খৃষ্টাব্দে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে স্নাতক।কম বয়সেই ফটোগ্রাফিতে চমৎকার হাত। এর জন্য এক প্রতিযােগিতায় তিনি পুরস্কৃতও হন। শান্তিনিকেতনে তিনি যখন চিত্রশিল্পের ছাত্র, রবীন্দ্রনাথ তখন জীবিত। রবিঠাকুরের স্নেহধন্য হয়েছিলেন তিনি।

চিত্রাঙ্কনে ডিপ্লোমা পাবার পর সত্যজিৎ সে সময়ের বিখ্যাত বাংলা প্রকাশন সংস্থা সিগনেট প্রেসের সঙ্গে যুক্ত হন। সিগনেট থেকে প্রকাশিত প্রখ্যাত সাহিত্যিকদের গ্রন্থের প্রচ্ছদ আঁকাই তখন তার কাজ। সেই সময় তিনি বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অমর উপন্যাস ‘পথের পাঁচালী’ পাঠ করেন ও গভীরভাবে প্রভাবিত হন। তাঁর মনে বাসনা জাগে উপন্যাসটির চলচ্চিত্রায়ন করবার।

১৯৫০ খৃষ্টাব্দে কলকাতায় তার সঙ্গে পরিচয় হয় এখানে আউটডাের শুটিং করতে আসা বিশ্বখ্যাত ফরাসী চিত্রপরিচালক জাঁ রেনােয়ার সঙ্গে । কথা বলে নিজেকে সমৃদ্ধ করেন। 

কাজঃ ১৯৫১ খৃষ্টাব্দে সত্যজিৎ ডি, জে, কিমার কোম্পানিতে আর্ট ডিরেক্টরের চাকরি নেন ও সেই সুবাদে ইংল্যান্ডে যান। বিলেতে গিয়ে প্রচুর বিখ্যাত সিনেমা দেখেন। তাঁর চিত্রপরিচালক হবার স্বপ্ন আরও ঘনীভূত হয়। দেশে ফিরে ‘পথের পাঁচালী’-র সচিত্র চিত্রনাট্য রচনা করেন। কিন্তু সিনেমা বানাতে গেলে যে পরিমাণ টাকার দরকার, সত্যজিতের তা ছিল না। তিনি তখন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায়ের সঙ্গে দেখা করে নিজের পরিকল্পনার কথা জানান ও সরকারি সাহায্য প্রার্থনা করেন। নব বাংলার রূপকার বিধানচন্দ্র রায় তাকে আর্থিক সাহায্যের আশ্বাস দেন।

সত্যজিৎ নিজের যতটুকু সম্বল ছিল, সবই ব্যয় করলেন সেই ছবি তৈরি করতে। তারপর এল সরকারি সাহায্য। ১৯৫৫ খৃষ্টাব্দের শেষের দিকে ‘পথের পাঁচালী’ নির্মিত হল। প্রথম প্রদর্শনের পর বাংলার শিক্ষিত জনগােষ্ঠী সত্যজিৎকে বিপুলভাবে অভিনন্দন জানান। ১৯৫৬ খৃষ্টাব্দে কান চলচ্চিত্র উৎসবে ‘পথের পাঁচালী’ পুরস্কৃত হয় ‘শ্রেষ্ঠ মানবিক আবেদনসমৃদ্ধ চলচিত্র’ রূপে।শুরু হয়ে গেল সত্যজিৎ রায়ের জয়যাত্রা।

‘পথের পাঁচালী’-র পর একে একে তার পরিচালনায় বেরিয়ে এল ‘অপরাজিত’ ‘অপুর সংসার’ ‘জলসাঘর’ ‘পরশপাথর’ ‘তিন কন্যা’ ‘মহানগর’ ‘অশনি সংকেত’ ‘নায়ক’ ‘অভিযান’ ‘গণশত্রু’ ‘সােনার কেল্লা' , 'শতরঞ্জ কা খিলাড়ি' , 'শাখা-প্রশাখা’ ‘গুপি গায়েন বাঘা বায়েন’ ‘আগন্তুক’-এর মত ছবি। বেশির ভাগ ছবিরই তিনি একাধারে পরিচালক, চিত্র নাট্যকার ও সঙ্গীত পরিচালক। ‘অপরাজিত’ ছবি ভেনিস থেকে নিয়ে এল ‘গােল্ডেন লায়ন' । 

সত্যজিৎ একজন কুশলী সাহিত্যিকও। ফেলুদা’ ও ‘প্রফেসর শঙ্কু' তার সৃষ্টি দুটি অনবদ্য বুদ্ধিদীপ্ত চরিত্র। তাঁর রচিত প্রতিটি গ্রন্থ আজও খুব পাঠকপ্রিয়। সত্যজিৎ রায় রবীন্দ্র জন্মশতবার্ষিকীতে রবীন্দ্রনাথের ওপর একটি অসাধারণ তথ্যচিত্রও নির্মাণ করেন—যেখানে ভাষ্যকারের ভূমিকা তিনি স্বয়ং পালন করেন।

তিনি সারা বিশ্ব থেকে এত পুরস্কার পান যে তার তালিকা করতে বসলে অবাক হতে হয়। মৃত্যুর পূর্বে তার সমগ্র কীর্তির জন্য সত্যজিৎকে ‘অস্কার’ পুরস্কারও দেওয়া হয়। ভারতবর্ষের সর্বোচ্চ সম্মান ‘ভারতরত্ন’ও তিনি লাভ করেন। 

১৯৯২ খৃষ্টাব্দের ২৩শে এপ্রিল বাংলার এই অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রতিভা পরলােকের পথে যাত্রা করেন।

সত্যজিৎ রায়ের জীবনপঞ্জী 

• ১৯২১- উত্তর কলকাতার গড়পার রােডে ২ মে (১৮ বৈশাখ ১৩২৮ বঙ্গাব্দ) জন্ম হয়েছিল সুকুমার ও সুপ্রভা রায়ের ছেলে সত্যজিতের

• ১৯২৩-১০ সেপ্টেম্বর কালাজ্বরে ভুগে মৃত্যু হল ‘আবােলতাবােল’, ‘হযবরল, ‘ঝালাপালা'র স্রষ্টা সুকুমার রায়ের,মাত্র ৩৬ বছর বয়সে।

• ১৯২৬- সুপ্রভাদেবী বালক সত্যজিৎকে নিয়ে ভবানীপুরে ভাই প্রশান্তকুমার দাসের বাড়ি উঠে আসেন।

• ১৯৩০- সাড়ে আট বছর বয়সে বালিগঞ্জ গভর্নমেন্ট হাই স্কুলে। ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হন সত্যজিৎ।

• ১৯৩৬- উপহার পাওয়া ক্যামেরায় ফোটো তুলে বিলেতের ‘বয়েজ ওন পেপার’ পত্রিকায় প্রথম পুরস্কার পান। ম্যাট্রিক পরীক্ষায় পাশ করে অর্থনীতিতে অনার্স নিয়ে প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন

• ১৯৪০-বি এ পাশ করার পর ১৩ জুলাই ভর্তি হয়েছিলেন শান্তিনিকেতনের কলাভবনে। ২০ নভেম্বর সত্যজিতের আঁকা প্রথম প্রচ্ছদ ‘পাগলা দাশু’ প্রকাশিত হয়।

• ১৯৪১- প্রথম লেখা ইংরেজি গল্প ‘অ্যাবস্ট্রাকশন’ প্রকাশিত হয় ‘অমৃতবাজার পত্রিকায়, ১৮ মে তারিখে।

• ১৯৪২- কলকাতায় জাপানি বিমান আক্রমণ। মায়ের জন্য চিন্তায় ডিসেম্বর মাসে শান্তিনিকেতনের পাঠ অসমাপ্ত রেখে কলকাতায় ফেরেন। ‘অমৃতবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত হয় দ্বিতীয় ইংরেজি গল্প শেডস অফ গ্রে’, ২২ মার্চ তারিখে।

• ১৯৪৩- দিলীপকুমার গুপ্ত যিনি ‘ডি কে' নামেই বেশি পরিচিত কলকাতার সাংস্কৃতিক মহলে, তাঁর সঙ্গে আলাপ হয়। এর পর থেকে ডি কে-র সিগনেট প্রেসের জন্য ছবি আঁকা শুরু। এপ্রিল মাসে বিজ্ঞাপন সংস্থা ‘ডি জে কিমার’-এ ভিসুয়ালাইজার পদে যােগদান। মৌচাক’ পত্রিকায় সত্যজিতের আঁকা প্রথম ইলাস্ট্রেশন প্রকাশিত হয়।

• ১৯৪৪- চিত্রনাট্য লেখার অভ্যেস শুরু।

• ১৯৪৫- সিগনেট প্রেসের জন্য বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের। ‘পথের পাঁচালী’র সংক্ষিপ্ত কিশাের সংস্করণ ‘আম আঁটির ভেঁপুর। ইলাস্ট্রেশন করেন। তখনই বইটি নিয়ে ছবি করার ভাবনা আসে । 

• ১৯৪৭- হরিসাধন দাশগুপ্ত, চিদানন্দ দাশগুপ্ত, রাম হালথার, তাঁর মনে।বংশী চন্দ্রগুপ্তর সঙ্গে ৫ অক্টোবর প্রতিষ্ঠা করলেন ‘ক্যালকাটা ফিল্ম সােসাইটি।

• ১৯৪৮-চলচ্চিত্রসংক্রান্ত প্রথম লেখা ‘হােয়াট ইজ রং উইথ ইন্ডিয়ান ফিল্মস' প্রকাশিত হয় দ্য স্টেটসম্যান পত্রিকায়। পারিবারিক দুটো ঘটনা উল্লেখযােগ্য। মাকে নিয়ে লেক অ্যাভিনিউতে চলে আসেন মামার বাড়ি ছেড়ে। মাধুরী ও চারুচন্দ্র দাশগুপ্তর কন্যা বিজয়ার সঙ্গে রেজিষ্ট্ৰিমতে বিয়ে হয় মুম্বইয়ে।

• ১৯৫০-‘দ্য রিভার' ছবির জন্য কলকাতায় আসেন বিশ্ববিখ্যাত ফরাসি চিত্রপরিচালক জাঁ রেনােয়া। তিনি বিখ্যাত চিত্রশিল্পী পিয়ের-আগুস্ত রেনােয়ার পুত্রও বটে। তাঁর কাজের সঙ্গে পরিচয় হয় সত্যজিতের। তাঁর লেখা ‘রেনােয়া ইন ক্যালকাটা’ প্রকাশিত হয় ব্রিটিশ পত্রিকা ‘সিকোয়েন্স’-এ। ডি জে কিমারের আর্ট ডিরেক্টর হন। ছ'মাসের জন্য বিদেশযাত্রা। অসংখ্য প্রদর্শনী, থিয়েটার, ফিল্ম। দেখে ও গান শুনে বহুমাত্রিক অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। ফিরে এসে মতানৈক্যে ডি জে কিমার ত্যাগ ও বেনসনস এজেন্সিতে যােগদান। ফিরে আসার পথে ‘পথের পাঁচালী'র চিত্রনাট্যের খসড়া। আন্তর্জাতিক মুদ্রণ প্রদর্শনীতে ‘খাই খাই’ ও ‘অনন্যা বইয়ের প্রচ্ছদের জন্য পুরস্কার অর্জন।

• ১৯৫২ অক্টোবর মাস থেকে ‘পথের পাঁচালী’র দৃশ্যগ্রহণ শুরু করেন।

• ১৯৫৩- ৮ সেপ্টেম্বর একমাত্র পুত্র সন্দীপ রায়ের জন্ম।

• ১৯৫৪- চলচ্চিত্রায়নে আর্থিক বাধার মুখােমুখি। পশ্চিমবঙ্গের সেইসময়কার মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায়ের হস্তক্ষেপে 'পথের পাঁচালী’ প্রযােজনায় এগিয়ে আসে পশ্চিমবঙ্গ সরকার।

• ১৯৫৫- এপ্রিল মাসে নিউ ইয়র্কে মিউজিয়াম অফ মডার্ন আর্ট-এ ‘পথের পাঁচালী'র প্রথম প্রদর্শন। ২৩ সেপ্টেম্বর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেনেট হলে বাংলাদেশের তরুণ সাহিত্যিক ও শিল্পীরা (ছিলেন পূর্ণেন্দু পত্রী, সন্দীপন চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ) সত্যজিৎ রায় এবং কলাকুশলীদের সংবর্ধনা জানান।

• ১৯৫৬- কান চলচ্চিত্র উৎসবে ‘পথের পাঁচালী’ ‘সর্বশ্রেষ্ঠ মানবিক আবেদনসম্পন্ন চলচ্চিত্র হিসেবে সম্মানিত হয়। ১১ অক্টোবর মুক্তি পায় ‘অপরাজিত।

• ১৯৫৭- ভেনিসের চলচ্চিত্র উৎসবে ‘অপরাজিত’ সেখানকার সেরা পুরস্কার ‘গােল্ডেন লায়ন অফ সেন্ট মার্ক’ পায়। এবছরই সুকুমার রায় এথেনিয়াম ইনস্টিটিউশন কলকাতার ইডেন উদ্যানে সত্যজিৎ রায়কে নাগরিক সংবর্ধনা দেওয়া হয়।

• ১৯৫৮- পরশুরামের কাহিনিনির্ভর ‘পরশপাথর' ছবিটি ও তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাহিনি নিয়ে নির্মিত 'জলসাঘর’ও এবছরই মুক্তি পায়।

• ১৯৫৯- সঙ্গীত নাটক আকাদেমি পুরস্কার পান। পদ্মশ্রীও পান এই বছরই। মুক্তি পায় ‘অপুট্রিলজি’র শেষ ছবি ‘অপুর সংসার'। ক্যামেরায় চোখ রেখে স্ত্রী

• ১৯৬০-১৯ ফেব্রুয়ারি প্রভাতকুমার মুখােপাধ্যায়ের গল্প নিয়ে ‘দেবী’ মুক্তি পায়। নভেম্বরে মায়ের মৃত্যু।

• ১৯৬১- সুভাষ মুখােপাধ্যায়ের সঙ্গে সম্পাদনায় ‘সন্দেশ পত্রিকা নতুন করে প্রকাশ। বাংলায়। সাহিত্যরচনা শুরু। প্রথম রচনা এডওয়ার্ড লিয়রের ছড়া অবলম্বনে ‘পাপাঙ্গুল'-- 'তারা ছাঁকনি চড়ে সাগর পাড়ি দেবে দেবেই দেবে।..নীল মাথাতে সবুজ রঙের চুল পাপাঙ্গুল’। এ বছরই সন্দেশে প্রথম শঙ্কুর গল্প ‘ব্যোমযাত্রীর ডায়রি’ প্রকাশিত। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মশতবর্ষে মুক্তি পায় তাঁর লেখা তিনটি ছােটগল্প অবলম্বনে ছবি ‘তিনকন্যা।

জ্যোতিরিন্দ্র মৈত্র সুরারােপিত তথ্যচিত্র ‘রবীন্দ্রনাথ’ও এবছর তৈরি।

• ১৯৬২- ১১ মে মুক্তি পায় প্রথম রঙিন ছবি 'কাঞ্চনজঙ্ঘা”। তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাহিনি নিয়ে তৈরি ‘অভিযান’ ছবিটিও এবছরে সেপ্টেম্বরে মানুষ দেখতে যায় চলচ্চিত্রঘরে।

• ১৯৬৩- ‘টাইম’ পত্রিকার মতে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ১১জন চিত্রপরিচালকের মধ্যে অন্যতমর শিরােপা পান। নরেন্দ্রনাথ মিত্রের ‘অবতরণিকা' ছােটগল্প অবলম্বনে ‘মহানগর’ ছবিটি মুক্তি পায়।

• ১৯৬৪- রবীন্দ্রনাথের ‘নষ্টনীড়' অবলম্বনে ‘চারুলতা’র মুক্তি। দুই অসম অবস্থানের শিশুকে নিয়ে দূরদর্শন চিত্র ‘টু’র মুক্তিলাভ। বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবে ‘মহানগর’জন্য শ্রেষ্ঠ চিত্রপরিচালকের ‘রৌপ্য ভল্লুক'। 

• ১৯৬৫- যথাক্রমে প্রেমেন্দ্র মিত্রের। ‘জনৈক কাপুরুষের কাহিনী ও পরশুরামের ‘বিরিঞ্চিবাবা’ গল্প নিয়ে ‘কাপুরুষ ও মহাপুরুষ' ছবির মুক্তি। পদ্মভূষণ প্রাপ্তি। প্রথম ‘ফেলুদা’ সিরিজের গল্প ‘ফেলুদার গােয়েন্দাগিরি’ প্রকাশিত ‘সন্দেশ' পত্রিকায়। 

• ১৯৬৬- উত্তমকুমার অভিনীত সত্যজিৎ রায়ের নিজের কাহিনি নিয়ে তৈরি ‘নায়ক’ মুক্তি পায়।

• ১৯৬৭- শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের গােয়েন্দা ব্যোমকেশকে নিয়ে চিড়িয়াখানা’ ছবি হলে মুক্তি পায়। ম্যাগসাইসাই’ পুরস্কারে সম্মানিত। বছরের শ্রেষ্ঠ শিশুসাহিত্যের বইয়ের জন্য ‘প্রােফেসর শঙ্কু’ মনােনীত হয় ‘আকাদেমি সােনার কেল্লা ছবির

• ১৯৬৯- ৮ মে মুক্তি পেল 'গুপী গাইন বাঘা বাইন'। সেপ্টেম্বর মাসেই প্রথম ফেলুদার বই ‘বাদশাহী আংটি’ প্রকাশ পায়। বিশিষ্ট শিশুসাহিত্যিক পিসি সুখলতা রাও মারা যান।

• ১৯৭০- মুক্তি পায় সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের উপন্যাস নিয়ে তৈরি ছবি ‘অরণ্যের দিনরাত্রি'। প্রকাশিত হয় ‘প্রােফেসর শঙ্কুর কাণ্ডকারখানা',

প্রথম গল্পসংকলন ‘একডজন গপ্পো’। সঙ্গে সুকুমার রায়ের কবিতার ইংরেজি অনুবাদ “ননসেন্স রাইমস'। বছরের শেষের দিকে মুক্তি পায় সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়েরই কাহিনি-অবলম্বনে পুরস্কারের জন্য।

প্রতিদ্বন্দ্বী’ ছবি।

• ১৯৭১- সাহিত্যকৃতির জন্য আনন্দ পুরস্কার' লাভ। প্রকাশিত হয় ‘গ্যাংটকে গন্ডগােল’ ও ‘সােনার কেল্লা'।'রে রােমান টাইপােগ্রাফির জন্য আন্তর্জাতিক পুরস্কার। “সীমাবদ্ধ' ও তথ্যচিত্র ‘সিকিম’ও এবছরই মুক্তি পায়।

• ১৯৭৩- বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপন্যাস-অবলম্বনে ‘অশনি সংকেত' মুক্তি পায়। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘ডক্টর অফ লেটার্স’ পান। বাক্স রহস্য’ বইটি ও তাঁর সম্পাদিত বই ‘সুকুমার সাহিত্য সমগ্র'র প্রথম খণ্ড প্রকাশিত হয় এবছর।

• ১৯৭৪- ২৭ ডিসেম্বর ‘সােনার কেল্লা’ ছবি হলে মুক্তি পায়।এবছর এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত হয় তাঁর। ‘কৈলাসে কেলেঙ্কারি’, ‘সাবাস প্রােফেসর শঙ্কু’ বই হয়ে বেরয়। এবছরের নভেম্বরে তাঁর আর-এক পিসি পুণ্যলতা চক্রবর্তীর অজয় বন্দ্যোপাধ্যায় ও কামু মুখােপাধ্যায়ের সঙ্গে সত্যজিৎ মৃত্যু হয়। ইনিও ছােটদের জন্য সরস ও রম্য লেখা লিখেছেন। শান্তিনিকেতনে সত্যজিৎ রায়ের শিল্পগুরু বিনােদবিহারী

মুখােপাধ্যায়কে নিয়ে তথ্যচিত্র 'ইনার-আই' নির্মাণ।

• ১৯৭৫- ব্রিটিশ ফেডারেশন অফ ফিল্ম সােসাইটি তাঁকে ‘বিংশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধের অন্যতম শ্রেষ্ঠ চিত্রপরিচালক'-এর সম্মান দেয়। প্রকাশিত হয় রয়্যাল বেঙ্গল রহস্য’ ও সম্পাদিত 'সুকুমার সাহিত্য সমগ্র’র দ্বিতীয় খণ্ড।

• ১৯৭৬- ‘পদ্মবিভূষণ’ লাভ। “জয় বাবা ফেলুনাথ’, ‘আরাে এক ডজন’, ‘ফটিকচাঁদ’ প্রকাশ। এছাড়া ছাপার অক্ষরে মুক্তি পায় চলচ্চিত্রবিষয়ক প্রবন্ধ সংকলন ‘বিষয় চলচ্চিত্র, ইংরেজি বই ‘আওয়ার ফিল্মস, দেয়ার ফিল্মস। সাহিত্যিক ছবির শুটিংয়ে শংকরের কাহিনি অবলম্বনে ‘জন-অরণ্য ও দক্ষিণ ভারতীয় নৃত্যশিল্পী বালা সরস্বতীকে নিয়ে ‘বালা’ তথ্যচিত্রও এবছরেই মুক্তি পায়।

• ১৯৭৭- ‘ফেলুদা অ্যান্ড কোং' (বােম্বাইয়ের বােম্বেটে, গোঁসাইপুর সরগরম), ‘মহাসঙ্কটে শঙ্কুর প্রকাশ।

• ১৯৭৮- মুন্সী প্রেমচন্দর গল্প নিয়ে তৈরি ‘শতরঞ্জ কে খিলাড়ি’-র মুক্তি। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি লিট উপাধি প্রাপ্তি। বিশ্বভারতী থেকে 'দেশিকোত্তম' সম্মান। চার্লি চ্যাপলিন ও ইঙ্গমার বার্গম্যানের সঙ্গে বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসব কমিটি থেকে সর্বকালের তিনজন সেরা পরিচালক’-এর সম্মানলাভ।

• ১৯৭৯- ‘গােরস্থানে সাবধান’, ‘একেই বলে শুটিং’ প্রকাশিত হয়। জানুয়ারিতেই মুক্তি পায় 'পাঁচ ভাই একসাথ মারছে ঘুসি খাচ্ছে ভাত'...আর নিশ্চয়ই বলার অপেক্ষা নেই। অর্থাৎ ‘জয় বাবা ফেলুনাথ’। এবছর সম্মান আসে মস্কো থেকে। বিংশ শতাব্দীর সেরা ন’জন পরিচালকের অন্যতম হওয়ার সম্মান।

• ১৯৮০- ‘হীরক রাজার দেশে মুক্তি পেল। স্বয়ং প্রােফেসর শঙ্কু প্রকাশিত হল। ধানের শিষের শিশিরবিন্দুর দিকে ভারতীয় জনগণের নজর পড়ল। যাদবপুর ও বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় সত্যজিৎকে এবছর ডি লিট উপাধি দিল।

• ১৯৮১- ‘ছিন্নমস্তার অভিশাপ’, ‘হত্যাপুরী’, ‘আরাে বারাে’ বইয়ের সঙ্গে প্রকাশিত হল সম্পাদিত বই ‘সেরা সন্দেশ: ১৩৬৮৮৭। বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় ও উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ডক্টরেট প্রদান। এছাড়া শিশিরকুমার সাহিত্য পুরস্কার পেলেন সত্যজিৎ রায়। শুটিংয়ের মজার অভিজ্ঞতা নিয়ে একেই বলে শুটিং’-এর জন্য ‘ফটিক স্মৃতি পুরস্কার। নিউ ইয়র্কে ‘মিউজিয়াম অফ মডার্ন আর্ট’-এ ‘ ফিল্ম ইন্ডিয়া’ উৎসবের প্রথম পর্যায়ে তাঁর এযাবৎ সব ছবির প্রদর্শনী হয়।

•১৯৮২- ফরাসি টেলিভিশন প্রযােজিত ‘পিকু’ ছবি করলেন। ছবিটির কেন্দ্রে একটি বাচ্চা থাকলেও ছবিটি বড়দের জন্যই তৈরি। ২৫ এপ্রিল ভারতীয় দূরদর্শন প্রযােজিত ‘সদগতি’ প্রদর্শনের মাধ্যমে দূরদর্শনের রঙিন ছবি সম্প্রচার শুরু। ফেলুদাকাহিনি ‘যত কাণ্ড কাঠমান্ডুতে' প্রকাশিত হয়। শিশুসাহিত্যিক অসামান্য অবদানের জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকার বিদ্যাসাগর ‘হীরক রাজার দেশে' ছবিতে গুপী গাইন ও বাঘা বাইন পুরস্কার দেয় তাঁকে। এছাড়াও বিদেশের অসংখ্য পুরস্কারলাভ। রােম চলচ্চিত্র উৎসবে ‘ভিসকোন্তি পুরস্কার', কান চলচ্চিত্র উৎসব।কমিটি দেয় ‘হেডলেস এঞ্জেল ট্রোফি’, ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবে ‘গােল্ডেন লায়ন অফ সেন্ট মার্ক' পুরস্কার পান এই আকাশচারী মানুষটি।

• ১৯৮৩- 'টিনটোরেটোর যীশু’, ‘শঙ্কু একাই ১০০' প্রকাশ পায়। ১ অক্টোবর হৃদরােগে আক্রান্ত হন তিনি।

• ১৯৮৫-‘ফেলুদা ওয়ান ফেলুদা টু’ (নেপােলিয়নের চিঠি', এবার কাণ্ড কেদারনাথে’), “তারিণীখুড়াের কীর্তিকলাপ’, ‘মােল্লা নাসিরুদ্দীনের গল্প’ ও ‘দ্য অপু ট্রিলজি’ চিত্রনাট্য প্রকাশ। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডক্টরেট প্রদান, দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার লাভ। 

• ১৯৮৬- ওইদিকে দেখাে দেখি তাকিয়ে বিদঘুটে রাক্ষস নাকি এ/আরে না না এ যে হরু হয়েছে সে এত সরু মামা তার রাখে। তারে পাকিয়ে...সত্যজিতের নিজের লেখা ছড়া, লুইস ক্যারল,এডওয়ার্ড লিয়র প্রমুখর কবিতার অনুবাদ নিয়ে বই ‘তােড়ায় বাঁধা ঘােড়ার ডিম’ প্রকাশিত হয়।

• ১৯৮৭-আড়াই বছর বয়সে হারানাে বাবাকে নিয়ে তথ্যচিত্র করলেন 'সুকুমার রায়'। ফেলুদার বই ‘দার্জিলিং জমজমাট, ছােটদের আশ্চর্য রূপকথার বই 'সুজন হরবােলা’, কোনান ডয়েল,আর্থার সি ক্লার্ক, রে ব্র্যাডবেরির গল্পের অনুবাদ-বই ‘ব্রেজিলের কালাে বাঘ ও অন্যান্য প্রকাশিত হল। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় ‘ডি লিট’ দিল। রাশিয়ার ‘ডুসানডে' শহরে ‘সত্যজিৎ রায় ফিল্ম সােসাইটি' উদ্বোধন।

• ১৯৮৯- ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট মিতের কলকাতায় এসে লিজিয়ন অফ অনার দেন। ১৯৯১-‘আগন্তুক’ ছবি মুক্তি পায়। বিভিন্ন দেশ থেকে

সম্মানস্রোত অব্যাহত। যেমন একটি, বেলজিয়াম থেকে ‘সত্যজিৎ রায় অ্যাট সেভেন্টি' শ্রদ্ধার্ঘ্য-গ্রন্থ প্রকাশ।

• ১৯৯২- ভারতরত্ন পেলেন। ৩০ মার্চ ‘লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট'-এর জন্য অস্কারলাভ। ২৩ এপ্রিল সন্ধে ৫:৪৫কলকাতার বেলভিউ নার্সিংহােমে তাঁর মৃত্যু। অবশ্য খাতায় কলমে। আমরা জানি, তাঁর মৃত্যু নেই। হতে পারে না কখনও।


সত্যজিৎ রায়ের জীবনী ।। সাল অনুযায়ী সম্পূর্ণ জীবনপঞ্জী ।। কত বছর বয়সে ফেলুদা লেখা শুরু করেন ? জেনে নিন সত্যজিৎ রায়ের জীবনী ।। সাল অনুযায়ী সম্পূর্ণ জীবনপঞ্জী ।। কত বছর বয়সে ফেলুদা লেখা শুরু করেন ? জেনে নিন Reviewed by Wisdom Apps on October 22, 2021 Rating: 5

নিরক্ষর বাবার প্রি ম্যাচুওর চাইল্ড থেকে জগতসেরা বিজ্ঞানী - স্যার আইজ্যাক নিউটন । পড়ুন আইজ্যাক নিউটনের জীবনী

October 20, 2021

 স্যার আইজ্যাক নিউটনের জীবনী 

biography of sir isaac newton bangla


এক অনিশ্চিত টালমাটাল অবস্থার মধ্য দিয়ে যাঁর শৈশবকালের সূচনা,তিনিই উত্তরকালে নিজের অনন্য বৈজ্ঞানিক প্রতিভার দ্বারা মানুষের সভ্যতাকে বৃহত্তাবে সমৃদ্ধ করে যান। 

বিজ্ঞানের আশ্চর্য প্রতিভা আইজ্যাক নিউটন। তাঁর মায়ের নাম Hannah এবং বাবার নাম আইজ্যাক নিউটন সিনিয়র । জন্ম ১৬৪২ খৃষ্টাব্দে। তিনি অকালজাত। মাতৃগর্ভে মাত্র সাত মাস থাকবার পর ভূমিষ্ঠ হন। তার জন্মের তিন মাস আগেই বাবা মারা যান । তাঁর বাবা ছিলেন নিরক্ষর । আর নিউটনের বয়স যখন মাত্র দু’বছর, তার মা হ্যানা নিউটন একজন জমিদার পাদ্রীকে বিয়ে করে বসলেন। সেই পাদ্রী আবার রুগ্ন নিউটনের দায়িত্ব গ্রহণে অস্বীকার করলেন। অর্থাৎ এক অনিশ্চিত, টালমাটাল অবস্থার মধ্য দিয়ে যাঁর শৈশব কালের সূচনা, তিনিই উত্তরকালে নিজের অনন্য বৈজ্ঞানিক প্রতিভার দ্বারা মানুষের সভ্যতাকে বৃহভাবে সমৃদ্ধ করে যান।

কিশাের নিউটন বেশ কয়েকবছর তার ঠাকুরমার কাছে থাকেন। বারাে বছর বয়স হলে তাকে আশ্রয় দেন ক্লার্ক নামক এক ভদ্রলােক। ক্লার্কের স্ত্রী ছিলেন নিউটনের মার বান্ধবী। তিনি নিউটনকে মাতৃস্নেহ দান করেন। ক্লার্কের বাড়িতে ছিল ওষুধ তৈরি কারখানা। আর ছিল রসায়ন ও পদার্থ বিদ্যার ওপর রচিত প্রচুর বই। কিশাের নিউটন ওই বইগুলি গভীর আগ্রহে পড়ে ফেলেন। ওষুধ তৈরির ব্যাপারটাও খেয়াল করেন। ক্লার্কের বাড়িতে থাকবার সময় নিউটন নিজের চেষ্টায় কয়েকটি জলঘড়ি ও বাতাসঘড়ি তৈরি করে পরিচিতদের তাক লাগিয়ে দেন।

ষােল বছর বয়সে নিউটন তার জন্মদাত্রী মার কাছে ফিরে গেলেন; কারণ, ইতিমধ্যে হ্যানার দ্বিতীয় স্বামীর মৃত্যু ঘটেছে। প্রথমে নিউটনের মা চেয়েছিলেন ছেলে একজন চাষি হয়ে চাষবাস করে জীবন চালাক । সেই মতো স্কুল ছাড়িয়ে তিনি নিউটনকে চাষের কাজে যুক্ত করে দেন কিন্ত নিউটন চাষের কাজে কোনো আগ্রহ না দেখানোয় শেষ পর্যন্ত মা ছেলেকে ভর্তি করে দেন ট্রিনিটি কলেজে। সেখানে অঙ্কের অধ্যাপক আইজাক ব্যারাে নিউটনের মধ্যে বিরাট সম্ভাবনার সন্ধান পান। বেশ কম সময়ের মধ্যেই নিউটন গণিতে তার বিশেষ ব্যুৎপত্তি দেখালেন।

১৬৬৪ খৃষ্টাব্দে নিউটন তার মেধার জন্য সরকারি বৃত্তি পান। এই সময় ভয়ঙ্কর প্লেগরােগ মহামারীর আকার নেওয়ায় কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়। নিউটন তখন তার মায়ের আশ্রয় উলসথরপে ফিরে আসেন। উলসথরপে বছর দেড়েক অবস্থানকালে নিউটন একের পর এক বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার সম্পূর্ণ করেন। তিনটিই গণিত বিষয়ক। প্রথমটির নাম বাইনােমিয়াল থিয়ােরেম, দ্বিতীয়টি ডিফারেনশিয়াল ক্যালকুলেশন এবং তৃতীয়টি ইন্টিগ্রাল ক্যালকুলাস

নিউটনের সবচেয়ে চমকপ্রদ আবিষ্কার হল মাধ্যাকর্ষণ সূত্র বা Law of gravitation কে খুঁজে বার করা । যে কারণে পৃথিবীর তাবৎ বস্তুর গতি নিয়ন্ত্রিত হয় সেই একই শক্তি নিয়ন্ত্রণে রাখে সৌরজগতের গ্রহ তারকাদের। যে বলের টানে গাছের আপেল শূন্যে না উঠে মাটিতে পতিত হয়, সেই একই কারণে সূর্য, গ্ৰহসকল, নক্ষত্রাদি নিজেদের পারস্পরিক আকর্ষণের সূত্রে সংঘর্ষ এড়াতে পারছে। এটা ছিল এক যুগান্ত কারী আবিস্কার । 

১৬৬৬ খৃষ্টাব্দে নিউটন আবিষ্কার করলেন আলাের প্রতিসরণ সূত্র বা Law of Refraction of light. নিউটন দূরবীন যন্ত্রের উন্নতি ঘটান। তার দূরবীনে বর্ণ ঘটিত বিভ্রান্তি বা Chromatic Aberration নেই। এই দূরবীনের সাহায্যে গ্রহণক্ষত্রদের প্রকৃত দূরত্ব নির্ণয় সম্ভব হল।

১৬৬৭ খৃষ্টাব্দে নিউটন কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অঙ্কের অধ্যাপক হলেন। আশ্চর্য ব্যাপার হলো , অধ্যাপক হিসাবে তিনি একেবারেই জনপ্রিয় ছিলেন না , তিনি পড়াতে খুব একটা ভালো বাসতেন না , ফলে ওনার ক্লাসে বেশিরভাগ সময় ছাত্র ছাত্রীরা আসতেন না । উনি নিজের রিসার্চ ওয়ার্কেই বেশী মন দিতেন ।  

১৬৮৪ খৃষ্টাব্দে সৌরবিজ্ঞানী এডমান্ড হ্যালির সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা হয়। এই হ্যালির নামানুসারেই পরবর্তীকালে হ্যালির ধূমকেতু নাম রাখা হয়। নিউটন তার গবেষণাকে একটি দীর্ঘ প্রবন্ধে লিখে রাখেন। নাম Mathematical Principle of Natural Philosophy তিনটি সূত্র নিয়ে গ্রন্থিত হল ‘প্রিন্সিপিয়া। 

ছোটবেলার পারিবারিক সমস্যার কারনেই হয়ত স্যার আইজ্যাক নিউটন কোনোদিনো বিয়ে করেননি । সারাজীবন রিসার্চ ওয়ার্ককেই নিজের ধ্যান জ্ঞান করে রাখেন ।

নিউটনের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বব্যাপী। ১৭০১ খৃষ্টাব্দে তাঁকে করা হল ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্য। ১৭০২ খৃষ্টাব্দে তাকে করা হল দেশের নােট ছাপবার ব্যবস্থাপনার অধ্যক্ষ। এই সময় তিনি নতুন নতুন পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে এমন নোট ও কয়েন তৈরি করান জেগুলো জাল করা প্রায় অসম্ভব ছিলো। তিনি অ্যাল্কেমী তে ইন্টারেস্টেড ছিলেন এবং অন্য ধাতু থেকে সোনা তৈরির জন্য বিভিন্ন গবেষণা করেছিলেন ।   ১৭০৩ খৃষ্টাব্দে তাকে বরণ করে নেওয়া হয় রয়্যাল সােসাইটির সভাপতির পদে। ১৭০৫ খৃষ্টাব্দে ইংল্যান্ডের মহারানী অ্যান আইজ্যাক নিউটনকে ‘নাইট’ উপাধিতে ভূষিত করেন।

১৭২৭ খৃষ্টাব্দে পঁচাশি বছর বয়সে এই মহা বিজ্ঞানী ধরাধাম ত্যাগ করেন।

নিরক্ষর বাবার প্রি ম্যাচুওর চাইল্ড থেকে জগতসেরা বিজ্ঞানী - স্যার আইজ্যাক নিউটন । পড়ুন আইজ্যাক নিউটনের জীবনী নিরক্ষর বাবার প্রি ম্যাচুওর চাইল্ড থেকে জগতসেরা বিজ্ঞানী - স্যার আইজ্যাক নিউটন । পড়ুন আইজ্যাক নিউটনের জীবনী Reviewed by Wisdom Apps on October 20, 2021 Rating: 5

লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির জীবনী ও তাঁর আশ্চর্য বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের কাহিনী

September 04, 2021

 লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির জীবনী 

leonardo va vincci biography


‘এই আবিষ্কারগুলির মৌলিকত্বে আমার ন্যায্য অধিকার ।' - লিওনার্দো দা ভিঞ্চি

নাসা তীক্ষ্ণ, মােটা ভূরুতে চোখের পাতার এক-চতুর্থাংশ ঢাকা, চুলের ঢল ও দাড়ির ঢেউ মিলেমিশে একাকার। নিজের হাতে স্বপ্রতিকৃতি স্কেচ করেছেন। সামগ্রিকভাবে এক বুদ্ধিদীপ্ত মানুষের উপস্থিতি। সময়টা এত পুরােনাে যে চড় চড় করে বিস্ময় বাড়ে। 

পাঁচশ বছর আগেকার কথা। সময়টা তাে তখন ছবিরই। সাড়া তুলতে পারলে যশ ও অর্থ দুই-ই মেলে। দ্য ভিঞি জীবনের একটা সময়ে তা পেয়েছেন। আবার পরবর্তীকালে নানা অভিঘাতে তিতিবিরক্ত হয়ে নিজেকে একজন বঞ্চিত অপমানিত চূর্ণ স্রষ্টা বলে মনে করেছেন। বিষােদগার করেছেন অনেক তাবড় প্রতিষ্ঠিত দিকপালদের বিরুদ্ধে। 

তার কিছু আগে শিল্পীরা ছবি আঁকতে শুরু করেছেন প্রকৃতির স্বাভাবিক পারিপার্শ্বিকতা নিয়ে যা এতদিন প্রায় অলভ্য ছিল। ছবিতে স্বাভাবিকত্ব এনে মানুষের চোখ ও মনকে অবিষ্ট করে রাখবার এই যে অনায়াস দক্ষতা, দ্য ভিঞ্চির ভিতর তার ব্যপক স্ফুরণ দেখা গিয়েছিল। কিন্তু এই বিষয়ে দ্য ভিঞ্চিকে যদি পথিকৃত ভাবি, ভুল করা হবে। বরং সেই শিরােপাটা এনে বসিয়ে দেওয়া যায় তার অগ্রজ শিল্পী সাঁতােবত্তিচেলির মাথায়। 

লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির মতন বহুমুখী প্রতিভা মানুষের ইতিহাসে দ্বিতীয় কেউ নেই। তিনি যুগপৎ সিভিল ও মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। তিনি তুখােড় স্থপতি। তার মতন পদার্থবিদ কোটিতে গুটি মেলে না। তিনি গণিতের বাঘা বাঘা জটিলতার সহজ সমাধান করে গেছেন। প্রাণীজগতের যে সব গূঢ়তত্ত্বের কথা লিওনার্দো বলে গেছেন, তাবৎ জীববিজ্ঞানীদের কাছে তা ধ্রুব সত্য। তিনি বিশ্বের শ্রেষ্ঠ যুদ্ধাস্ত্র বিশেষজ্ঞদের একজন। লিওনার্দোর চেয়ে বড় মাপের চিত্রকর আর কেউ জন্মেছেন কি না, তা নিয়ে বিতর্ক চলতে পারে। 

লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির জন্ম ১৫ই এপ্রিল, ১৪৫২, ইতালিতে ফ্লোরেন্সের কাছাকাছি ভিঞি নামক অভিজাত এলাকায়। স্থান ভিঞির নামটাকে জুড়ে দেওয়া হয়েছিল তাঁদের প্রত্যেকের পারিবারিক পরিচিতির সঙ্গে। বাল্যকাল থেকেই দ্য ভিঞি ভাবুক প্রকৃতির। কবিতা লেখেন না। কিন্তু ছবি আঁকেন। মৌলিকত্ব আছে। ফ্লোরেন্সের শাসক তখন মেদিচিরা। তিনি নিজেকে শিল্প ও সংস্কৃতির রক্ষক বলে মনে করতেন। দ্য ভিঞ্চিকে তিনি তাঁর রাজসভার সদস্য করে নেন। রাজসভা থেকে অর্থ ও সম্মান—দুই-ই ছিল তৃপ্তিদায়ক। দ্য ভিঞি সৃষ্টিশীল কর্মে মগ্ন হয়ে। থাকেন। সৃষ্টিশীল কর্ম মানে কেবল মাত্র চিত্রাঙ্কনে নয়, বরং ছবি আঁকার চেয়ে

বেশি সময় দিচ্ছেন স্থাপত্য, যন্ত্র ও বিজ্ঞান চর্চায়, রাজসভাতেও তিনি বিজ্ঞান নিয়ে আলােচনায় বিতর্কের ঝড় তুললেন। তার সমালােচনা করবার ভঙ্গীটি ছিল চাঁছাছােলা। যাঁদের এতকাল মানুষ প্রণম্য করে রেখেছে, তাদেরই অনেক ভ্রান্তি ও ক্ষুদ্রতাকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখাতে শুরু করলেন। ফলে মেদিচিরা সমেত সকল ক্ষমতাবানরাই লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির ওপর চটে লাল। প্রাণভয়ে দ্য ভিঞ্চি ফ্লোরেন্স ছেড়ে পালালেন। এসে ঢুকলেন মিলানে। মিলানের শাসক কাউন্ট লুদোভিচো ফোর্জাকে তিনি যে চিঠি লিখেছিলেন, তার বঙ্গানুবাদটা এই রকম : ..... 

মিলানের শক্তি ও সমৃদ্ধিবর্ধনে আপনার যে দুর্লভ নেতৃত্ব, আমি তার অনুগত হয়ে থাকতে চাই। আমি অবশ্যই কোনও মনসবদারি তালুকদারি দাবি করছি না। আমার প্রত্যাশা কেবল স্বীকৃতি ও নিরাপত্তা। কারণ, আমার রয়েছে এমন বহুমুখী প্রতিভা ও ব্যুৎপত্তি, যাকে কাজে লাগিয়ে আপনার মতাে অনন্য বীর অচিরে গােটা ইতালিকে পদানত করবেন। আমিই এই যুগের শ্রেষ্ঠ যন্ত্রবিদ ও বিজ্ঞানী। আমি যে সমস্ত আয়ুধ নির্মাণ করেছি, তা নিমেষে যুদ্ধের রং বদলে দিতে পারে। আমি একটা বিশেষ ধরনের সেতু আবিষ্কার করেছি। এই সেতু অত্যন্ত হালকা হওয়া সত্বেও খুব মজবুত। সৈন্যরা এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় এটা বহন করে নিয়ে যেতে পারবে। পাহাড়ি নদী পার হবার পক্ষে এই সেতু খুবই উপযােগী।

কেবল তাই নয়, ওই সেতু আগুনে পােড়ে না, অস্ত্রাঘাতে খণ্ড-বিখণ্ড হয় না, অনেক ওজনদার বস্তুকে বুক পেতে ধরে রাখতে পারে। পরীক্ষা প্রার্থনীয়।.....আমি এক দুরন্ত বারুদের গেলা বানিয়েছি, যা নিক্ষেপ করে আমাদের গােলন্দাজরা প্রতিপক্ষের বড় বড় মিনার ও সেতুকে পলকে গুঁড়িয়ে দিতে পারবে। ....আমি একটি বিশেষ ধরণের হালকা কামান আবিষ্কার করেছি। এই কামানের সাহায্যে অনবরত বড় বড় পাথরের খণ্ডকে বহুদূর নিক্ষেপ করা যাবে.....দ্য ভিঞ্চির এই চিঠি পেয়ে এবং তার সত্যতা যাচাই করে ফোর্জা এই বিরল প্রতিভাকে তাঁর রাজসভায় স্থান দিলেন। দ্য ভিঞ্চি সেখানে গিয়ে একদিকে যেমন তার বিখ্যাত ছবিগুলি আঁকলেন, অন্যদিকে তেমনি বহু নতুন ধরনের অস্ত্র ও যন্ত্রপাতিও নির্মাণ করে দিলেন।

কিন্তু ফোর্জা ছিলেন যুদ্ধবাজ লােক। ফলে একদিন তার পতন ঘটে। দ্য ভিঞ্চি আবার পালালেন। এরপর তিনি কখনও থপতির কাজ করেছেন, কখনও বা হয়েছেন মহামান্য পােপের টাকশালের বড় অফিসার। মনে শান্তি ছিল না, যেহেতু তিনি তাঁর প্রতিভা অনুযায়ী মান্যতা পাননি।

শেষে একদিন অসুথ শরীর নিয়ে নিজের সমস্ত ছবিগুলি সহ ইতালি ছেড়ে জলপথে পাড়ি জমালেন ফ্রান্সের উদ্দেশ্যে। সেই দিনটা ছিল ৩রা অক্টোবর, ১৫১৭ খৃষ্টাব্দ। ২রা মে, ১৫১৯ খৃষ্টাব্দ, বিশ্বের সর্বকালের শ্রেষ্ঠ প্রতিভাদের অন্যতম লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি দক্ষিণ ফ্রান্সের ক্লস ল্স নামক স্থানে অন্তিম শ্বাস ত্যাগ করেন। 



লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির জীবনী ও তাঁর আশ্চর্য বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের কাহিনী  লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির জীবনী ও তাঁর আশ্চর্য বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের কাহিনী Reviewed by Wisdom Apps on September 04, 2021 Rating: 5

" লাহিড়ী মহাশয় " - যোগীরাজ শ্যামাচরণ লাহিড়ী-র জীবনী ও অত্যাশ্চর্য কিছু ঘটনা

September 03, 2021

"আধুনিক বিজ্ঞানের শক্তি সীমিত। বিজ্ঞান যেখানে পৌঁছতে পারে না, ভারতীয় সাধকদের যােগবল সেখানে অনয়াসে প্রবেশ করতে সক্ষম। "-  যােগী শ্যামাচরণ লাহিড়ী 

biography of shyamacharan lahiri

ভারতবর্ষের শ্রেষ্ঠ যােগীদের নাম স্মরণ করতে বসলে শ্যামাচরণ লাহিড়ীর কথা মনে আসবেই। শ্যামাচরণ লাহিড়ী যােগবিভূতির যে সকল আশ্চর্য নিদর্শন রেখে গেছেন, তা আমাদের যুগপৎ বিস্মিত ও শ্রদ্ধায় আপ্লুত করে রাখে। তিনি গৃহী হয়েও ঐশী সাধনায় বিপুল সাফল্য অর্জন করেন। 

শ্যামাচরণ লাহিড়ীর আবির্ভাব ১৮২৮ খৃষ্টাব্দে। অল্প বয়সে তিনি মাতৃহারা হন। তার পিতা ধার্মিক গৌরমােহন তাঁকে নিয়ে বেনারসে বসবাস শুরু করেন। মহাতীর্থ কাশীর পরিবেশ শ্যামাচরণকে প্রথম থেকেই ধর্মপ্রাণ করে তােলে। তিনি প্রথমে রাজা জয়নারায়ণ ঘােষালের স্কুলে পড়াশুনা করেন। তারপর শিক্ষালাভ করেন সরকারী সংস্কৃত কলেজে। বাংলা, ইংরেজি, সংস্কৃত ও ফার্সী ভাষায় তার ব্যুৎপত্তি অর্জিত হয়।

তার বয়স যখন মাত্র আঠারাে বছর, আট বছরের বালিকা কাশীমণির সঙ্গে শ্যামাচরণের বিবাহ হয়। তেইশ বছর বয়সে তিনি পূর্ত দপ্তরে কর্মচারী হিসেবে কাজ শুরু করেন। কর্মসূত্রেই তিনি উত্তর ভারতের নানা স্থান পরিভ্রমণ করেন। ওই সময়ে কর্ম উপলক্ষে তিনি রানীক্ষেতে আসেন এবং আকস্মিকভাবে তার জন্মান্তরের গুরুর দেখা পেয়ে যান। তিনি তখন লাভ করেন পূর্বজন্মের সঞ্চিত সাধানার সুফল। গুরু ‘বাবাজী’ তাঁকে দীক্ষা দিলেন পর্বতকন্দরে নিয়ে গিয়ে।

বিস্ময়কর দ্রুততার সঙ্গে শ্যামাচরণ যােগ সাধনার গৃঢ়শক্তি প্রাপ্ত হলেন। বহু প্রকারের অলৌকিক শক্তির তিনি পরিচয় দিয়েছেন বারবার। প্রতিদিন অফিসের কাজ সাঙ্গ হলে তিনি যােগসাধনায় বসতেন। সহকর্মীরা প্রথমে তাকে বুঝতে পারেননি। উর্ধতন অফিসার তার নাম দিয়েছিলেন ‘পাগলাবাবু। 

যে অফিসার তাকে ওই নামে ডাকতেন, সেই সাহেবই একদিন শ্যামাচরণের অনুরক্ত হয়ে পড়েন। কারণ, শ্যামাচরণ যােগবলে সাহেবের ইংল্যান্ডনিবাসী স্ত্রীর রােগমুক্তি ঘটান। শ্যামাচরণ লাহিড়ীর গুরুদেব তাঁর প্রিয় শিষ্যকে বহু বছর প্রত্যক্ষ বা অপ্রত্যক্ষভাবে সঙ্গ দিয়েছেন এবং যােগবিদ্যার মূল শক্তি শিষ্যের ভেতর সঞ্চারিত করেন।

শ্যামাচরণ সর্ব জীবে নারায়ণকে দেখতে পেতেন। এমনকি বদ ও পাপী লােককেও তিনি নমস্কার করতেন। ভক্তরা তাকে প্রণাম করলে তিনিও তাদের প্রণাম করতে উদ্যত হতেন। শ্যামাচরণ লাহিড়ীর সঙ্গে একবার তৈলঙ্গস্বামীর সাক্ষাৎ ঘটে। স্বভাবগম্ভীর তৈলঙ্গস্বামী শ্যামাচরণকে দেখেই খুব আহ্লাদিত হন ও শ্যামাচরণকে বুকে জড়িয়ে ধরেন। পরে স্বামীজি তাঁর শিষ্যদের বলেছিলেন, শ্যামাচরণ যে কত বড় যােগী, সাধারণভাবে তা টের পাওয়া যায় না। উনি অত্যন্ত উচ্চমার্গে পৌছে - যাওয়া সিদ্ধপুরুষ। শ্যামাচরণ যােগবলে অনেককে দুরারােগ্য ব্যাধি থেকে মুক্ত করেন। মৃত প্রায়কে প্রাণ দান করেন। একজন চিকিৎসক তার এই বিস্ময়কর ক্ষমতা দেখে হতবাক হয়ে পড়লে যােগীবর তাকে বলেছিলেন, আধুনিক বিজ্ঞানের শক্তি সীমিত। বিজ্ঞান যেখানে পৌঁছতে পারে না, ভারতীয় সাধকদের যােগবল সেখানে অনায়াসে প্রবেশ করত সক্ষম।

যােগীরাজের স্ত্রী কাশীমণি দেবী তার স্বামীর অসাধারণ সমস্ত যােগ বিভূতির কাহিনি বলে গেছেন আচার্য যােগানন্দ মহারাজকে। যােগানন্দ আবার এর কিছু অংশ লিপিবদ্ধ করে গেছেন। 

শ্যামাচরণ লাহিড়ী কখনও নিজের ফটো তুলতে দিতেন না। কেউ এরকম প্রস্তাব নিয়ে এলে তিনি সরাসরি না বলে দিতেন এবং তারা চলে গেলে যেন হাঁপ ছেড়ে বাঁচতেন। কিন্তু একবার কাশীতে তাঁর একদল ভক্ত তাকে এ ব্যাপারে খুব পীড়াপীড়ি করতে থাকায় তিনি সম্মতি দেন। স্থানীয় নামকরা ফটোগ্রাফার গঙ্গাধরবাবু এলেন। কিন্তু ভিউফাইন্ডারে চোখ রেখে গঙ্গাধরবাবু হতবাক। বিস্ময়ে তার হাত-পা থানুবৎ। সব কিছুই দেখা যাচ্ছে; দেখা যাচ্ছে না কেবল যােগীরাজকে। ফটোগ্রাফার যােগীরাজের পা জড়িয়ে ধরে বললেন, আপনার যােগের কাছে যন্ত্রের কারিকুরি খাটাখাটুনি সব বৃথা। আপনি এ অধমকে আপনার চরণে ঠাই দিন। শ্যামাচরণ তখন স্মিত হাসির সঙ্গে ছবি তুলতে দিলেন। তার সেই অবয়বখানিই এখন বহুল প্রচারিত একমাত্র ছবি। যােগীরাজ তার ভক্তদের নিষ্ঠার সঙ্গে সংসার ধর্ম পালন করতে বলতেন। 

তিনি বলতেন, সংসার করেও মানুষ ঈশ্বরের আরাধনা করতে পারে। আর যােগসাধনা করতে হবে গােপনীয়তার সঙ্গে। মৃত্যুর কয়েকমাস আগে যােগীরাজ তার স্ত্রী কাশীমণিকে ডেকে বললেন, “দেখ, আমার যাবার সময় ঘনিয়ে এল। অন্যলােকে আমি যাবার পর কিন্তু শােক করতে পারবে না।

কয়েকজন বিশিষ্ট ভক্তকেও তিনি তার মহাপ্রয়াণের আভাস দেন। তার খুব খারাপ জাতের পৃষ্ঠব্রণ হয়েছিল। ১৮৯৫ খৃষ্টাব্দের ২৬শে সেপ্টেম্বর গীতার শ্লোক আওড়াতে আওড়াতে যােগীরাজ শ্যামাচরণ লাহিড়ী গােলকধামে যাত্রা করলেন।

" লাহিড়ী মহাশয় " - যোগীরাজ শ্যামাচরণ লাহিড়ী-র জীবনী ও অত্যাশ্চর্য কিছু ঘটনা " লাহিড়ী মহাশয় " - যোগীরাজ শ্যামাচরণ লাহিড়ী-র জীবনী ও অত্যাশ্চর্য কিছু ঘটনা Reviewed by Wisdom Apps on September 03, 2021 Rating: 5

মহানায়ক উত্তমকুমারের অনুপ্রেরণামূলক জীবনী - " ফ্লপ মাস্টার " থেকে " মহানায়ক "

September 02, 2021

 উত্তমকুমারের জীবনী - আশ্চর্য অনুপ্রেরণামূলক জীবনী

biography_of_mahanayak_uttam_kumar

সুচিত্রা সেনকে নায়িকা করে নায়ক উত্তমকুমার যে সমস্ত বাংলা ছবিতে অভিনয় করে গেছেন, আজও সেইগুলির অবিশ্বাস্য জনপ্রিয়তা।

বাংলা চলচ্চিত্রে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ নায়ক যে উত্তমকুমার, এ বিষয়ে কোনও দ্বিমত নেই। সুচিত্রাসেনকে নায়িকা করে নায়ক উত্তমকুমার যে সমস্ত বাংলা ছবিতে অভিনয় করে গেছেন, আজও সেইগুলির অবিশ্বাস্য জনপ্রিয়তা। আর কোনও অভিনেতা যুগ যুগ ধরে এরকম প্রাসঙ্গিক থাকতে পারেননি। 

উত্তমকুমারের আসল নাম অরুণকুমার চট্টেপাধ্যায়। ৩রা সেপ্টেম্বর, ১৯২৬, তিনি জন্মগ্রহণ করেন কলকাতায় এক সামান্য মধ্যবিত্ত পরিবারে। তার বাবা সাতকরি চট্টোপাধ্যায় মেট্রো সিনেমা হলের একজন মেশিন অপারেটর। মা চপলাদেবী সাংসারিক কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন। সাতকড়িবাবু নিজে ছিলেন নাট্যপ্রিয় মানুষ। মাঝে মাঝে যাত্রায় শখের অভিনয় করতেন। বাবার কাছ থেকেই উত্তমকুমার তাঁর অভিনয়প্রিয়তা পেয়েছিলেন। উচ্চাশা ছিল, একদিন বিখ্যাত অভিনেতা হবেন। 

লুনার ক্লাব’ নামক একটি ছােটো সংগঠনের সদস্য ছিলেন তিনি। ওই ক্লাবের অভিনীত নাটক রবীন্দ্রনাথের ‘মুকুট -এ উত্তমকুমারের প্রথম মঞে অভিনয়। উত্তমকুমার ছিলেন স্বাস্থ্যবান ও সুদর্শন। ভালাে সাঁতার কাটতেন। বিখ্যাত মল্লবীর ননী ঘােষের আখড়ায় নিয়মিত কুস্তিচর্চা করতেন। সুকুমার গুপ্তের কাছে শিখেছিলেন লাঠিখেলা। ফুটবল খেলাতেও দক্ষতা ছিল।

১৯৪২-এ ম্যাট্রিক পাস করেন। পরে কমার্স গ্র্যাজুয়েট হন। পাের্ট কমিশনারস অফিসে কেরাণির চাকরি পান। 

uttam kumar biography

উত্তমকুমারের প্রথম সিনেমা কোনটি জানেন ? 

উত্তমকুমার অভিনীত প্রথম ছবি ‘দৃষ্টিদান’ মুক্তি পায় ১৯৪৮ খৃষ্টাব্দে।  “দৃষ্টিদান' বক্স অফিসে ধরাশায়ী হয় অচিরেই। এরপর, আরো বেশ কিছু ছবিতে এই পরাজয়ের ধারা অব্যাহত থাকে। নিন্দুক এবং উন্নাসিকের দল উত্তমকুমারকে “ফ্লপ মাষ্টার জেনারেল" সহ বিভিন্ন তির্যক মন্তব্যে বিদ্ধ করতেও দ্বিধা করেননি। সেই অন্ধকার সময়ে নিজেকে নিয়ে, নিজের অভিনয় এবং নিজের নাম নিয়েও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন উত্তমকুমার , তিনি  নিজেকে প্রথমে অরুণ চ্যাটাজী, অরুণ কুমার, উত্তম চ্যাটাজী এবং অবশেষে উত্তমকুমার নামকরন করেন , এবং প্রকৃতই উত্তম হয়ে ওঠার জার্নি শেষ হয় ।  

তার প্রথম বিশেষ জনপ্রিয় সিনেমার নাম সাড়ে চুয়াত্তর'। এই ছবিতেই তার বিপরীতে নায়িকারূপে আবির্ভূত হলেন সুচিত্রা সেন। তখন থেকেই সুচিত্রা-উত্তম জুটি বাংলার দর্শকদের কাছে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। প্রতিটি বই অসম্ভব জনপ্রিয়।

হারানাে সুর’ ‘শিল্পী’ ‘পথে হল দেরী’ ‘সপ্তপদী’ ‘অগ্নি পরীক্ষা’ শাপ মােচন ‘সবার উপরে’ ইত্যাদি ছবি আজও বার বার দর্শকদের টানে। উত্তমকুমারের চাল চলন, চুলের বাহার, অনন্য হাসি বাঙ্গালী যুবকদের কাছে অনুকরণীয় হয়ে উঠেছিল।

১৯৪৮ খৃষ্টাব্দের ১লা জুন উত্তমকুমার তার প্রেমিকা গৌরী গাঙ্গুলীকে বিয়ে করেন। তাদের একমাত্র সন্তানের নাম গৌতম। তবে পরবর্তীকালে নায়িকা সুপ্রিয়া দেবীর সঙ্গে অতিরিক্ত ঘনিষ্ঠতার সুবাদে উত্তমকুমারের সঙ্গে গৌরী দেবীর মনােমালিন্য বাড়ে। উত্তমকুমার সুপ্রিয়াদেবীর সঙ্গেই বসবাস শুরু করেন।

সুচিত্রা সেন ছাড়াও উত্তম কুমারের আর সমস্ত নায়িকাদের মধ্যে রয়েছেন সুপ্রিয়াদেবী, সন্ধ্যা রায়, সাবিত্রীদেবী, মাধবী মুখার্জী, শর্মিলা ঠাকুর, সুমিত্রা মুখােপাধ্যায় প্রমুখ প্রতিভাময়ী অভিনেত্রীগণ।

    best movie of uttam kumar bengali

সত্যজিৎ রায়ের পরিচালিত ‘নায়ক’ উত্তমকুমারের জীবনের অন্যতম সেরা ছবি। ওই ছবিতে অভিনয় করে তিনি ‘ভরত’ উপাধি পান  ভারতসরকারের কাছ থেকে। তিনি কয়েকটি হিন্দি ফিল্মেও অভিনয় করেছেন।

অত্যধিক পরিশ্রম ও সাংসারিক অস্থিরতা উত্তমকুমারের জীবনী শক্তিকে শেষ করে এনেছিল। একবার হার্ট অ্যাটাক হওয়া সত্ত্বেও তিনি সাবধান হননি। বাংলা সিনেমার কলাকুশলীদের জন্যও সংগঠন করেছেন অকৃত্রিম নিষ্ঠা সহকারে। নিজে চিত্রপরিচালকের ভূমিকা পালন করেছেন।

১৯৮০ খৃষ্টাব্দের ২৩শে জুলাই দ্বিতীয়বার স্ট্রোক হয় এবং ২৪শে জুলাই রাত ৯টায় এই মহানায়ক মহাপ্রস্থান করেন সমস্ত বাঙ্গালী জাতিকে শােকস্তব্ধ করে।



মহানায়ক উত্তমকুমারের অনুপ্রেরণামূলক জীবনী - " ফ্লপ মাস্টার " থেকে " মহানায়ক "  মহানায়ক উত্তমকুমারের অনুপ্রেরণামূলক জীবনী - " ফ্লপ মাস্টার " থেকে " মহানায়ক " Reviewed by Wisdom Apps on September 02, 2021 Rating: 5

ভারতীয় গণিতজ্ঞ শ্রীনিবাস রামানুজন এর সংক্ষিপ্ত জীবনী

September 01, 2021

 শ্রীনিবাস রামানুজন এর সংক্ষিপ্ত জীবনী 

শ্রীনিবাস রামানুজানের সংক্ষিপ্ত জীবনী

আজকের সেরা গণিতজ্ঞও সবিস্ময়ে দেখেন, তার তথাকথিত আবিষ্কৃত যাবতীয় সূত্রই বহু বছর আগে রামানুজন নির্ণয় করে গেছেন। অনেকেই শ্রীনিবাস রামানুজনকে বিশ্বের সর্বকালের সেরা গণিতজ্ঞ বলে মনে করেন। আজকের সেরা গণিতজ্ঞ সবিস্ময়ে দেখেন, তার তথাকথিত ‘আবিষ্কৃত যাবতীয় সূত্রই বহু বছর আগে রামানুজন নির্ণয় করে গেছেন। 

অথচ বেঁচে ছিলেন মাত্র ছত্রিশ বছর এবং সেই ছত্রিশটা বছরই কী সংঘাতপূর্ণ ও বর্ণময়! জন্ম ১৮৮৭ খৃষ্টাব্দে। এক কাপড়ের দোকানের হতদরিদ্র কর্মচারী শ্ৰীনিবাস আয়েঙ্গারের পুত্র। স্কুলে পড়া হয়তাে সম্ভবই হত না, নেহাৎ বৃত্তি পাওয়ায় তা সম্ভব হয়।

একেবারে শিশু বয়স থেকে গণিতের প্রতি অপ্রতিরােধ্য আকর্ষণ। স্কুলে পড়বার সময় তার হাতে আসে গণিতের একখানা নামকরা বই ‘A  synopsis of Elementary Results in Pure and Applied Mathematics.' বইটির সমস্ত কঠিন সমস্যার সমাধান করে ফেলেন শ্রীনিবাস। অঙ্কই হয়ে দাঁড়াল এমন ধ্যান-জ্ঞান যে কলেজে উঠে অন্য বিষয়ের প্রতি তিনি আদৌ মনােযােগ দিলেন না। ফলে কলেজের কোনও পরীক্ষাতেই তিনি পাস করতে পারেননি।

এরই মধ্যে সংসারে অভাব থাকা সত্ত্বেও সামাজিক ও পারিবারিক নিয়ম মেনে শ্রীনিবাসকে যখন বিয়ে দেওয়া হল, তখন তার বয়স মাত্র বাইশ বছর। আর স্ত্রী জানকীর বয়স নয়। বন্ধু হিসেবে পেয়েছিলেন রাজাগােপালাচারীকে। রাজা শ্রীনিবাসকে নিয়ে গিয়েছিলেন গণিত সােসাইটির সেক্রেটারি রামচন্দ্র রাও-এর কাছে। রামচন্দ্র শ্রীনিবাসের গাণিতিক প্রতিভায় মুগ্ধ হন ও তাকে মাসিক বৃত্তির ব্যবস্থা করে দেন।

১৯১১ খৃষ্টাব্দে Indian Mathematical Society'-এর মুখপত্রে শ্রীনিবাস একটি সারগর্ভ নিবন্ধ লেখেন—'Some properties of Bernoulli's numbers.' 

শ্রীনিবাস রামানুজের জীবনে তখন অঙ্ক ছাড়া আর কিছুই যেন নেই। নিত্যনতুন ফর্মুলা উদ্ভাবন করে চলেছেন। দেশ-বিদেশের গণিতজ্ঞদের কাছে। নিজের সেই সমস্ত আবিষ্কারের কথা জানাতে লাগলেন। কিন্তু কেউই পাত্তা দিচ্ছেন না তাকে। অবশেষে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিতের প্রধান অধ্যাপক মিঃ জি. এইচ. হার্ডি ও তাঁর সহকারী মিঃ লিটলউড চমকে উঠলেন শ্রীনিবাস রামানুজের চিঠি ও একগাদা অঙ্কের অভিনব ফর্মুলার গভীরতা তথা কার্যকারিতা দেখে। 

এই হার্ডিরই ঐকান্তিক চেষ্টায় পর্বতপ্রমাণ পারিবারিক ও সামাজিক বাধা অতিক্রম করে শ্রীনিবাস ১৯১৪ খৃষ্টাব্দের ১৭ই মার্চ ইংল্যান্ডের উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন। তাঁর যাবতীয় ব্যয় বহন করেছিল মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯১৪ থেকে ১৯১৮ অবধি শ্রীনিবাস কেমব্রিজে ছিলেন। এই সাড়ে চার বছরে গণিত নিয়ে তিনি যা কাজ করে গেছেন, বিশ্বের আর কোনও গণিতজ্ঞের পক্ষে এর আগে বা পরে সম্ভবপর হয়নি। তিনি ইংল্যান্ডে রয়েল সােসাইটির সদস্য নির্বাচিত হলেন। তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ছে সর্বত্র। কিন্তু ভেঙে পড়ছে শরীর। যক্ষায় আক্রান্ত তিনি তখন। 

১৯১৯ খৃষ্টাব্দের মার্চ মাসে অসুস্থ রামানুজন স্বদেশে ফিরে এলেন। ১৯২০ খৃষ্টাব্দের ২৬শে এপ্রিল চিকিৎসকদের সমস্ত প্রয়াসকে ব্যর্থ করে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ এই গণিতজ্ঞ তরুণ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন।


ভারতীয় গণিতজ্ঞ শ্রীনিবাস রামানুজন এর সংক্ষিপ্ত জীবনী  ভারতীয় গণিতজ্ঞ শ্রীনিবাস রামানুজন এর সংক্ষিপ্ত জীবনী  Reviewed by Wisdom Apps on September 01, 2021 Rating: 5

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সংক্ষিপ্ত জীবনী - biography of Manik Bandopadhyay in bengali

May 21, 2021

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সংক্ষিপ্ত জীবনী 

manik bandopadhyay


" ভাবপ্রবণতার বিরুদ্ধে প্রচণ্ড বিক্ষোভ সাহিত্যে আমাকে বাস্তবকে অবলম্বন করতে বাধ্য করেছিল।"

বাংলা সাহিত্যের উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক মাণিক বন্দ্যোপাধ্যায়। ব্রাত্য জনের সুখদুঃখ-স্বপ্ন-নিরাশা-শপথ-তামাসা তার রচনায় যে ভাবে যে গভীরতায় ফুটে উঠেছে, অন্য কোনও বাঙালী ঔপন্যাসিকের সৃষ্টিতে তেমনটি যেন আমরা খুঁজে পাই না।

নিজের সাহিত্যসৃষ্টি সম্পর্কে বলতে গিয়ে মাণিক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন,

" ভাবপ্রবণতার বিরুদ্ধে প্রচণ্ড বিক্ষোভ সাহিত্যে আমাকে বাস্তবকে অবলম্বন করতে বাধ্য করেছিল।" 

 প্রকৃতপক্ষেই  মাণিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিটি রচনায় যে নির্যাস নিহিত, সেখানে ভাবালুতার স্থান নেই।

মাণিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্ম ২৯শে মে, ১৯০৮। স্থান দুমকা, সাঁওতাল পরগনা। বাবার নাম হরিহর বন্দ্যোপাধ্যায়। মা নিরদাসুন্দরী। পবিরবারটি এসেছিল ঢাকার বিক্রমপুর থেকে। 

মাণিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পিতৃদত্ত নাম প্রবােধকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়। সাহিত্য রচনায় তিনি মাণিক নামটি ব্যবহার করেন। হরিহর বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন সরকারী চাকুরে। সে কারণে তাকে প্রায়শই বদলি হতে হত। মাণিক বন্দ্যোপাধ্যায় বাবা-মার সঙ্গে অনেক জায়গা ঘুরেছেন। বিবিধ পরিবেশে নানান শ্রেণীর নরনারী দেখেছেন—যারা তাঁর গল্প ও উপন্যাসে স্থান পেয়েছে। শােষণ ও অন্যায়ের বিরুদ্ধচারণ করেছে তার বলিষ্ঠ লেখনী। 

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন কৃষ্ণবর্ণ আর অসম্ভব দুঃসাহসী । কোনোকিছুতেই ভয় ছিল না তাঁর ।  ছোটবেলাতে একবার খেলতে খেলতে আঁশবটিতে পেট কেটে ফেলেন , একবার জ্বলন্ত কয়লা দিয়ে পা পুড়িয়ে ফেলেন আর একবার বারুদ দিয়ে বাজি বানাতে গিয়ে ভীষণ ভাবে আহত হয়ে পড়েন , তবু তিনি তাঁর দস্যিপানা ছাড়েননি । কৈশােরে ছিলেন মেদিনীপুরে। মেদিনীপুর জিলাস্কুল থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তারপর বাঁকুড়ার ওয়েসলিয়ান মিশন কলেজ থেকে আই.এস. সি পাশ করেন। অঙ্কে অনার্সসহ বি.এস.সি পড়তে ভর্তি হন কলকাতার প্রেসিডেন্সী কলেজে। 

প্রেসিডেন্সীতে পড়বার সময় তিনি 'অতসী মাসী’ নামে একটি গল্প লিখে সে বিখ্যাত সাহিত্যপত্রিকা বিচিত্রা’-তে পাঠান। 

গল্পটি ছাপা হয় এবং প্রথম গল্পেই মাণিক বন্দ্যোপাধ্যায় এমন সাড়া তােলেন যা অতি অল্পক্ষেত্রে লেখকদের কপালে জুটে থাকে।

মাত্র একুশ বছর বয়সে লিখলেন তার প্রথম উপন্যাস ‘দিবারাত্রির কাব্য' । যথেষ্ঠ বলিষ্ঠ রচনা। লেখালেখিতে এতটাই মগ্ন হয়ে পড়লেন মাণিক

বন্দ্যোপাধ্যায় যে তার পক্ষে আর বি.এস.সি পরীক্ষা দেওয়া সম্ভবপর হল না। তিনি সাহিত্যকে তার জীবিকা হিসেবে গ্রহণ করলেন—যা সেই সময়ে ছিল অত্যন্ত সাহসী সিদ্ধান্ত। মাণিক বন্দ্যেপাধ্যায় নিজেকে কল্লোল’ সাহিত্যগােষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত করেন। কল্লোল পত্রিকাকে ঘিরে তখন একদল শক্তিমান কথাসাহিত্যিক নিজেদের মেলে ধরছেন। এঁদের মধ্যে প্রেমেন্দ্র মিত্র, অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত, প্রবােধ সান্যাল প্রমুখ উল্লেখযােগ্য। তাদের সঙ্গে গিয়ে যুক্ত হলেন মাণিক বন্দ্যোপাধ্যায়।

১৯৩৫ খৃষ্টাব্দে সে সময়ের সুখ্যাত পত্রিকা ভারতবর্ষ’-এ প্রকাশিত হয় তার উপন্যাস ‘জননী'। সেই পত্রিকাতেই ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়েছিল মাণিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কালজয়ী আরও দুটি উপন্যাস—‘পুতুল নাচের ইতিকথা’ এবং ‘পদ্মা নদীর মাঝি' । 

দুঃখ দারিদ্রে জর্জরিত নরনারীর অমন জীবন্ত আলেখ্য এর আগে অন্য কোনও বাঙালী ঔপন্যাসিকের কলমে ফুটে ওঠেনি। অথচ ওই স্তরের অবহেলিত মানুষদের মধ্যেই রয়েছে অযত্নরক্ষিত অমসৃণ কত হীরকখণ্ড। এরকম সমস্ত আপখোেরাকী লােকদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে মিশতেন মাণিক বন্দ্যোপাধ্যায়।

তাদের জীবনযাত্রায় শামিল হতে গিয়ে তিনি নিজে শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তার বহুবিধ অভিজ্ঞতার মহিমা রয়েছে তাঁর রচিত প্রতিটি রচনায়। কিন্তু লিখে যথেষ্ট আয় হত না লেখকের। অথচ লেখার স্বার্থেই তিনি কোথাও চাকরিও নেবেন না। ভালাে বেতনের চাকুরি গ্রহণে অস্বীকার করেছেন। অর্থাভাবে যখন ধুকছেন, পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাকে কিছু বৃত্তি দেবার ব্যবস্থা করেন । 

লেখক জীবনের দ্বিতীয়ার্থে মাণিক বন্দ্যোপাধ্যায় মার্কসবাদে বিশ্বাসী হয়ে ওঠেন। ফলে ভাববাদের আরও বিরােধী হয়ে উঠলেন। কিছু ক্ষেত্রে তাঁর রচনা খানিক শ্লোগানধর্মীও হয়ে ওঠে। তবে মাণিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অধিকাংশ রচনাই বাংলা সাহিত্যের মহামূল্য মণিরত্ন। তার ছােটোগল্পগুলিও অনন্য। আর উপন্যাসগুলির মধ্যে পদ্মা নদীর মাঝি ‘পুতুল নাচের ইতিকথা’ ‘হলুদ নদী সবুজ মন’ ‘অমৃতস্য পুত্রা’ ‘শহরতলী’ ‘প্রাণেশ্বরের উপাখ্যান' ইত্যাদির যেন কোনও তুলনাই হয় না ।

৩রা ডিসেম্বর, ১৯৫৬, মাত্র আটচল্লিশ বছর বয়সে মাণিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রয়াণ ঘটে।


Tags: 
biography of manik bandopadhyay in bengali , মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রথম গল্পের নাম কি , manik bandopadhyay , manik bandopadhyay books, manik bandopadhyay quotes

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সংক্ষিপ্ত জীবনী - biography of Manik Bandopadhyay in bengali  মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সংক্ষিপ্ত জীবনী - biography of Manik Bandopadhyay in bengali Reviewed by Wisdom Apps on May 21, 2021 Rating: 5
Powered by Blogger.