" লাহিড়ী মহাশয় " - যোগীরাজ শ্যামাচরণ লাহিড়ী-র জীবনী ও অত্যাশ্চর্য কিছু ঘটনা

"আধুনিক বিজ্ঞানের শক্তি সীমিত। বিজ্ঞান যেখানে পৌঁছতে পারে না, ভারতীয় সাধকদের যােগবল সেখানে অনয়াসে প্রবেশ করতে সক্ষম। "-  যােগী শ্যামাচরণ লাহিড়ী 

biography of shyamacharan lahiri

ভারতবর্ষের শ্রেষ্ঠ যােগীদের নাম স্মরণ করতে বসলে শ্যামাচরণ লাহিড়ীর কথা মনে আসবেই। শ্যামাচরণ লাহিড়ী যােগবিভূতির যে সকল আশ্চর্য নিদর্শন রেখে গেছেন, তা আমাদের যুগপৎ বিস্মিত ও শ্রদ্ধায় আপ্লুত করে রাখে। তিনি গৃহী হয়েও ঐশী সাধনায় বিপুল সাফল্য অর্জন করেন। 

শ্যামাচরণ লাহিড়ীর আবির্ভাব ১৮২৮ খৃষ্টাব্দে। অল্প বয়সে তিনি মাতৃহারা হন। তার পিতা ধার্মিক গৌরমােহন তাঁকে নিয়ে বেনারসে বসবাস শুরু করেন। মহাতীর্থ কাশীর পরিবেশ শ্যামাচরণকে প্রথম থেকেই ধর্মপ্রাণ করে তােলে। তিনি প্রথমে রাজা জয়নারায়ণ ঘােষালের স্কুলে পড়াশুনা করেন। তারপর শিক্ষালাভ করেন সরকারী সংস্কৃত কলেজে। বাংলা, ইংরেজি, সংস্কৃত ও ফার্সী ভাষায় তার ব্যুৎপত্তি অর্জিত হয়।

তার বয়স যখন মাত্র আঠারাে বছর, আট বছরের বালিকা কাশীমণির সঙ্গে শ্যামাচরণের বিবাহ হয়। তেইশ বছর বয়সে তিনি পূর্ত দপ্তরে কর্মচারী হিসেবে কাজ শুরু করেন। কর্মসূত্রেই তিনি উত্তর ভারতের নানা স্থান পরিভ্রমণ করেন। ওই সময়ে কর্ম উপলক্ষে তিনি রানীক্ষেতে আসেন এবং আকস্মিকভাবে তার জন্মান্তরের গুরুর দেখা পেয়ে যান। তিনি তখন লাভ করেন পূর্বজন্মের সঞ্চিত সাধানার সুফল। গুরু ‘বাবাজী’ তাঁকে দীক্ষা দিলেন পর্বতকন্দরে নিয়ে গিয়ে।

বিস্ময়কর দ্রুততার সঙ্গে শ্যামাচরণ যােগ সাধনার গৃঢ়শক্তি প্রাপ্ত হলেন। বহু প্রকারের অলৌকিক শক্তির তিনি পরিচয় দিয়েছেন বারবার। প্রতিদিন অফিসের কাজ সাঙ্গ হলে তিনি যােগসাধনায় বসতেন। সহকর্মীরা প্রথমে তাকে বুঝতে পারেননি। উর্ধতন অফিসার তার নাম দিয়েছিলেন ‘পাগলাবাবু। 

যে অফিসার তাকে ওই নামে ডাকতেন, সেই সাহেবই একদিন শ্যামাচরণের অনুরক্ত হয়ে পড়েন। কারণ, শ্যামাচরণ যােগবলে সাহেবের ইংল্যান্ডনিবাসী স্ত্রীর রােগমুক্তি ঘটান। শ্যামাচরণ লাহিড়ীর গুরুদেব তাঁর প্রিয় শিষ্যকে বহু বছর প্রত্যক্ষ বা অপ্রত্যক্ষভাবে সঙ্গ দিয়েছেন এবং যােগবিদ্যার মূল শক্তি শিষ্যের ভেতর সঞ্চারিত করেন।

শ্যামাচরণ সর্ব জীবে নারায়ণকে দেখতে পেতেন। এমনকি বদ ও পাপী লােককেও তিনি নমস্কার করতেন। ভক্তরা তাকে প্রণাম করলে তিনিও তাদের প্রণাম করতে উদ্যত হতেন। শ্যামাচরণ লাহিড়ীর সঙ্গে একবার তৈলঙ্গস্বামীর সাক্ষাৎ ঘটে। স্বভাবগম্ভীর তৈলঙ্গস্বামী শ্যামাচরণকে দেখেই খুব আহ্লাদিত হন ও শ্যামাচরণকে বুকে জড়িয়ে ধরেন। পরে স্বামীজি তাঁর শিষ্যদের বলেছিলেন, শ্যামাচরণ যে কত বড় যােগী, সাধারণভাবে তা টের পাওয়া যায় না। উনি অত্যন্ত উচ্চমার্গে পৌছে - যাওয়া সিদ্ধপুরুষ। শ্যামাচরণ যােগবলে অনেককে দুরারােগ্য ব্যাধি থেকে মুক্ত করেন। মৃত প্রায়কে প্রাণ দান করেন। একজন চিকিৎসক তার এই বিস্ময়কর ক্ষমতা দেখে হতবাক হয়ে পড়লে যােগীবর তাকে বলেছিলেন, আধুনিক বিজ্ঞানের শক্তি সীমিত। বিজ্ঞান যেখানে পৌঁছতে পারে না, ভারতীয় সাধকদের যােগবল সেখানে অনায়াসে প্রবেশ করত সক্ষম।

যােগীরাজের স্ত্রী কাশীমণি দেবী তার স্বামীর অসাধারণ সমস্ত যােগ বিভূতির কাহিনি বলে গেছেন আচার্য যােগানন্দ মহারাজকে। যােগানন্দ আবার এর কিছু অংশ লিপিবদ্ধ করে গেছেন। 

শ্যামাচরণ লাহিড়ী কখনও নিজের ফটো তুলতে দিতেন না। কেউ এরকম প্রস্তাব নিয়ে এলে তিনি সরাসরি না বলে দিতেন এবং তারা চলে গেলে যেন হাঁপ ছেড়ে বাঁচতেন। কিন্তু একবার কাশীতে তাঁর একদল ভক্ত তাকে এ ব্যাপারে খুব পীড়াপীড়ি করতে থাকায় তিনি সম্মতি দেন। স্থানীয় নামকরা ফটোগ্রাফার গঙ্গাধরবাবু এলেন। কিন্তু ভিউফাইন্ডারে চোখ রেখে গঙ্গাধরবাবু হতবাক। বিস্ময়ে তার হাত-পা থানুবৎ। সব কিছুই দেখা যাচ্ছে; দেখা যাচ্ছে না কেবল যােগীরাজকে। ফটোগ্রাফার যােগীরাজের পা জড়িয়ে ধরে বললেন, আপনার যােগের কাছে যন্ত্রের কারিকুরি খাটাখাটুনি সব বৃথা। আপনি এ অধমকে আপনার চরণে ঠাই দিন। শ্যামাচরণ তখন স্মিত হাসির সঙ্গে ছবি তুলতে দিলেন। তার সেই অবয়বখানিই এখন বহুল প্রচারিত একমাত্র ছবি। যােগীরাজ তার ভক্তদের নিষ্ঠার সঙ্গে সংসার ধর্ম পালন করতে বলতেন। 

তিনি বলতেন, সংসার করেও মানুষ ঈশ্বরের আরাধনা করতে পারে। আর যােগসাধনা করতে হবে গােপনীয়তার সঙ্গে। মৃত্যুর কয়েকমাস আগে যােগীরাজ তার স্ত্রী কাশীমণিকে ডেকে বললেন, “দেখ, আমার যাবার সময় ঘনিয়ে এল। অন্যলােকে আমি যাবার পর কিন্তু শােক করতে পারবে না।

কয়েকজন বিশিষ্ট ভক্তকেও তিনি তার মহাপ্রয়াণের আভাস দেন। তার খুব খারাপ জাতের পৃষ্ঠব্রণ হয়েছিল। ১৮৯৫ খৃষ্টাব্দের ২৬শে সেপ্টেম্বর গীতার শ্লোক আওড়াতে আওড়াতে যােগীরাজ শ্যামাচরণ লাহিড়ী গােলকধামে যাত্রা করলেন।

" লাহিড়ী মহাশয় " - যোগীরাজ শ্যামাচরণ লাহিড়ী-র জীবনী ও অত্যাশ্চর্য কিছু ঘটনা " লাহিড়ী মহাশয় " - যোগীরাজ শ্যামাচরণ লাহিড়ী-র জীবনী ও অত্যাশ্চর্য কিছু ঘটনা Reviewed by Wisdom Apps on সেপ্টেম্বর ০৩, ২০২১ Rating: 5

কোন মন্তব্য নেই:

Blogger দ্বারা পরিচালিত.