তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
✓যে যাত্রা করেছে , সে-ই পরমকে পেয়েছে , যে মধ্যপথে থেমেছে , সে পথ পায় নি , কিন্তু চলা যার থেমে নি , সে কবে বঞ্চিত হয়েছে ?
✓এক বয়সে মানুষ পুতুল নিয়ে খেলা করে, পুতুল খেলার বয়স গেলে ভগবান দেন রক্তমাংসের পুতুল , মানুষকে খেলবার জন্য ।
✓ মানুষ নাকি চিরকালই ছেলেমানুষ থাকে । খেলার শখ , কৌতুকের প্রলোভন কোনো দিনই তার যায় না ।
✓ এ সংসারে মানুষকে কঠোর সমালোচক বললে তার অতি প্রশংসা করা হয় - মানুষ নিন্দুক , পরনিন্দার উপর তার একটি সহজাত লিপ্সা আছে, সাদার গায়ে কালি ছিটিয়ে তার পরম তৃপ্তি ।
✓ চরমের মধ্যে প্রাচুর্য আছে , কিন্তু সে অফুরন্ত নয় , তার ক্ষয় আছে , ওটা সাময়িক ; পরম হল অফুরন্ত , অক্ষয় , চিরন্তন ।
✓ ভাগ্যের নাম হল অদৃষ্ট , ওকি অঙ্ক কষে ধরা যায় ? না রাশিচক্রের মধ্যে দিয়ে দেখা যায় ?
✓ মানুষের স্ত্রী-পুত্র যায়, স্ত্রীলোকের স্বামী-পুত্র যায় । থাকে শুধু ধর্ম । তাকে মানুষ না ছাড়লে, সে মানুষকে ছাড়ে না । যে মানুষ তাকে ধরে থাকে সে দুঃখের মধ্যেও সুখ না হোক শান্তি পায় ।
✓ শাস্ত্রে বলে চলাই জীবন , চলে সে নতুন অনুভবের কল্পলোকের মুখে; চলার পথে তার জীবনে ফুটে ওঠে নবীন একটি মহিমা - অন্তর ও বাইরের মহিমা , যার সঙ্গে পূর্বপুরুষের মহিমার অবিচ্ছিন্ন সংযোগ আছে , সাদৃশ্য আছে , তবুও তার তন্ত্রে একটি স্বকীয়তার পার্থক্য আছে , এই কারনে সংস্কৃতি চলমান ; সংস্কারের গণ্ডীকে অতিক্রম করে মুক্তির মধ্যে তার প্রকাশ । আমার পূর্বপুরুষের সংস্কৃতি আমার ও আমার সংস্কার এবং আমার সংস্কৃতি আমার উত্তর পুরুষের উদ্ভবস্থল , সেও পরিণত হবে সংস্কারে । তবে এই গতি সরলরেখা নয় , অন্তহীন বৃত্তরেখা পথে সংস্কারের বৃত্তকে প্রদক্ষিণ করে ক্রমান্বয়ে প্রশস্ততর বৃত্তমন্ডল সৃষ্টি করেই সে চলেছে । কারন , মধ্যে মধ্যে দেখা যায় , ইতিহাস তার সাক্ষ্য বহন করছে যে কখনো- কখনো সংস্কৃতির বৃত্তগতি সংস্কৃারের বৃত্তমন্ডলে পশ্চাদপসরন করে সংকীর্ণ হয়েছে , ক্ষেত্রবিশেষ সংকীর্ণতার মধ্যে বংশগত , কুলগত , জাতিগত সংস্কৃতির অপমৃত্যু ঘটেছে ।
বুদ্ধদেব গুহ
✓ প্রত্যেক পুরুষই শুধুমাত্র তার নিজের সমাজের , নিজের রুচির , নিজের পছন্দের নারীর কাছে এসেই নিজের শরীরের বিদ্যুৎবাহী তারে হঠাত চৌম্বকত্বের সাড়া পায় । যেকোনো নারী যে-কোনো পুরুষকে জ্বালাতে পারে না , যে-কোনো পুরুষও পারে না যে-কোনো নারীকে । এইখানেই মানুষের এত দুঃখ ।
✓ মানুষ যখন একেবারে একা থাকে তখন সে যে মানসিক স্তরে থাকে , সে আসলে ঠিক সেই স্তরেরই মানুষ । অর্থাৎ , যে মানুষ একা হলেই ইশ্বর চিন্তা করে সে ধার্মিক । যে প্রেমিকার কথা ভাবে, সে প্রেমিক । যে ছেলেমেয়ে , স্ত্রীর কথা ভাবে সে সংসারী । যে খাওয়ার কথা ভাবে সে পেটুক । টাকার চিন্তা যে করে সে বৈষয়িক ।
✓ সৌন্দর্যের বুকের মধ্যেই অসৌন্দর্য থাকে । আর যা অসুন্দর বলে মনে হয় , তার মধ্যেও সৌন্দর্য থাকে ।
✓ প্রেমের মানুষকে জীবনে কখনও পেতে নেই , প্রাপ্তিতে প্রেমকে প্রায়শই পরাস্ত করে । প্রেমের দীপ্তি চিরদিনই অম্লান থাকে তার অপ্রাপ্তিতেই ।
✓ ভালোবেসে তা অস্বীকার করাতেই পাপ । ভালোবেসে ভালোবাসার লোককে খুশি না করাই পাপ । নিজে খুশি না হওয়াও পাপ ।
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
✓ পাখিদের যৌন ব্যাপারের মতই মানুষেরও যৌন ব্যাপার - নিজেদের নতুন করে সৃষ্টি করা আর বাচার লড়াই চালিয়ে যাওয়া । মানুষের যৌন ব্যাপারে আরেকটা বাড়তি বাস্তব ব্যাপার আছে - প্রেম । কাব্য সাহিত্যে ফেনিয়ে ফাঁপিয়ে এবং রং দিয়ে এই বাস্তব রহস্যটাই ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করে আসা হচ্ছে । ফেনা আর রং বাতিল করে যৌনবিজ্ঞান প্রেমের মানে বোঝাতে চেয়েছিল - পারেনি । শরীরবিজ্ঞান , মনোবিজ্ঞান , যৌনবিজ্ঞান , প্রেমের এদিক ওদিক সেদিক বুঝিয়েছে , প্রেমকে বোঝাতে পারেনি ।
✓ দেশের মুক্তি যার যত বেশি কাম্য , স্বাধীনতার আদর্শ যার কাছে যত বড় সত্য , যে যত বেশী নির্ভীক , বেশী তেজস্বী , কর্মঠ , জীবন্ত , সে-ই যেন তত বেশি উন্মাদ বিপ্লবে ঝাপ দিতে , প্রান দিতে দেরি যেন তারই তত বেশী অসহ্য । অথচ এই দেরি চাই বিপ্লবী দল গড়তে , অথচ ধীর শান্ত , নিরুদ্বেগ মানুষের অহিংস ভালোমানুষের যৌবনে বিপ্লব নেই ।
✓ এ কথা কে না জানে যে পরের টাকা ঘরে আনার নাম অর্থ উপার্জন এবং এ কাজটা বড়ো স্কেলে করতে পারার নাম বড়লোক হওয়া ।
✓ প্রেমকে যারা বাস্তব জীবনের চেয়ে বড় করে তোলে , জীবনের আর সমস্ত সার্থকতা তুচ্ছ হয়ে যায় যাদের কাছে , মানুষ হিসাবে তাদের বেশী মূল্য নেই
✓ আনন্দ , ব্যাথা , ভয় এইসব উত্তেজনা মনে দেখা দিলেই শরীরের অনেকগুলি গ্লান্ড থেকে রসস্রাব শুরু হয় । আনন্দ কম আর স্বাভাবিক হলে যে রস বার হয় শরীরের তাতে উপকার হয় , কিন্তু অস্বাভাবিক প্রবল আনন্দের রস ঠিক বিষের মত কাজ করে ।
✓ দেহ তো আর অশ্লীল নয় , দেহের চেতনাও নয় - ঐ চেতনার বিকৃতিই শুধু অশ্লীলতা ।
বাংলার ৩ লেখকের বাস্তববাদী কয়েকটি বাণী
Reviewed by Wisdom Apps
on
August 29, 2018
Rating:
No comments: