দেশলাই আবিষ্কারের কাহিনী

 দেশলাই (১৬৮০)

 হাউক উইৎস 


প্রাগৈতিহাসিক যুগে আদিম মানুষ দুটি কাঠ ঘষে আগুন জ্বালাত, তারপর এল চকমকি পাথর। হাজার হাজার বছর ধরে চকমকি পাথর দিয়ে আগুন জ্বালাবার রীতি ব্যবহৃত হয়ে আসছিল। কিন্তু চকমকি পাথর তো শুধু আগুনের ফুলকিই তৈরি করে, মানুষ চাইছিল এমন এক দাহ্য বস্তু যা সামান্য আগুনের ফুলকি  পেলেই জ্বলে উঠবে। 

১৬৮০ সালে হাউক উইৎস নামক এক বিজ্ঞানীই  প্রথম নরম কাঠকে শরু শরু করে চিরে সে কাঠিকে ভালভাবে শুকিয়ে তাতে গন্ধকের প্রলেপ দিয়ে আধুনিক দেশলাইকাঠির প্রাচিন রুপ সৃষ্টি করলেন। এই কাঠিতে চকমকি পাথর একটু ঠুকলেই জ্বলে উঠত। বহুদিন কেটে যাবার পর ১৮০৫ সালে ইউরোপের চ্যান্সেল নামক এক বিজ্ঞানী পাতলা কাঠির মাথায় পটাশিয়াম ক্লোরেট ও চিনির আঠালো মিশ্রন লাগিয়ে সেই কাঠিকে ঘন সালফিউরিক অ্যাসিডের দ্রবনে ডুবিয়ে আগুন জ্বালালেন। কিন্তু ঘন সালফিউরিক অ্যাসিড খুব বিপজ্জনক। তাই সহজ ও নিরাপদভাবে আগুন জ্বালাবার উপায় ভাবতে লাগলেন বিজ্ঞানীরা।

১৮৩৭ সালে ওয়াকর নামক এক বিজ্ঞানী ভাবলেন দুটি বস্তুর ঘর্ষণে অণুর গতি বৃদ্ধির জন্যই তাপ উৎপন্ন হয়। এই দুটি বস্তুর একটি যদি সহজ দাহ্য পদার্থ হয় তাহলে ঘর্ষণে আগুনও উৎপন্ন হওয়া সম্ভব। এই ভাবনা থেকেই তিনি কাঠির মাথায় অ্যান্টিমনি সালফাইড, পটাশিয়াম ক্লোরেট, হাল্কা ও পাতলা কাঠ দিয়ে বাক্স তৈরি করে দু'চারবার ঘষতেই জ্বলে উঠলো আগুন। এই প্রথম নিরাপদ ঘর্ষণ দেশলাই আবিষ্কৃত হল। 

এর বছর কুড়ি পঁচিশ পড়ে বিজ্ঞানীদের চেষ্টায় আবিষ্কৃত হল আরেক রকম নিরাপদ দেশলাই। এই দেশলাইয়ের কাঠিতে রেড ফসফরাস, পটাশিয়াম ক্লোরেটের সাথে আঠা মিশিয়ে লাগানো হত। বাক্সের দুদিকে রেড লেড, সোডিয়াম নাইট্রেট, বালি বা মিহি কাঁচের গুড়োর মিশ্রণকে আঠা দিয়ে লেপ দেওয়া থাকত। বাক্সের যে কোনো দিকে কাঠি ঘষলেই জ্বলে উঠত।

কাঠি যাতে সহজে ফু দিলে নিভে যায় ও নিভে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে একেবারে ছাই হয়ে যায় তার জন্য কাঠিকে সোহাগার অ্যামোনিয়াম ফসফেটের দ্রবণে ডুবিয়ে শুষ্ক করা হয়।
 বর্তমানে নরম কাঠের পরিবর্তে শক্ত কাগজকেও কাঠি করে ব্যবহার করা হচ্ছে। কাঠির মাথায় আস্তরন লাগাবার আগে একরকম প্লাস্টিকের মধ্যে কাঠিকে ডুবিয়ে রাখলে কাঠি জলে ভিজে গেলেও জ্বলতে অসুবিধা হয় না। 
দেশলাই আবিষ্কারের কাহিনী দেশলাই আবিষ্কারের কাহিনী Reviewed by Wisdom Apps on সেপ্টেম্বর ০৬, ২০১৮ Rating: 5

কোন মন্তব্য নেই:

Blogger দ্বারা পরিচালিত.