ইন্টারনেট(১৯৮০) সাথে বিজ্ঞানী টিম বার্নস লি
বিশ শতকের এক বিরাট আবিস্কার হল ইন্টারনেট। শব্দটা নতুন হলেও এর সূচনা হয়েছিল ১৯৬৯ সালে। পৃথিবীর দুই বিরাট শক্তিশালী দেশের মধ্যে তখন চলছে ঠাণ্ডা লড়াই। দুই দেশেই পরমাণু বোমায় খতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করেছে। তখন দুই দেশেরই প্রতিরিক্ষা দপ্তরের প্রধান চিন্তা হয়ে উঠল যে পরমাণু বোমার ক্ষতির হাত থেকে কিভাবে তথ্য প্রচার ও যোগাযোগ ব্যবস্থাকে রক্ষা করা যায়। আমেরিকার প্রতিরক্ষা বিশেসজ্ঞরা প্রথম একটি উপায় খুঁজে পেলেন।
পেন্টাগন শহরে তখন তথ্য প্রচারে কম্পিউটারের ব্যবহার শুরু হয়ে গিয়েছিল। তাঁরা ভাবলেন কম্পিউটারের তথ্যগুলিকে যদি বিভিন্ন ভাগে ভাগ করে অনেকগুলি চ্যানেলে পাঠানো যায় তাহলে কোন কারণে একটা চ্যানেল ক্ষতিগ্রস্ত হলেও অন্য চ্যানেলের মাধ্যমে তথ্য পাঠানো যাবে। প্রতিরক্ষা বিভাগের অ্যাডভান্স রিসার্চ প্রজেক্ট এজেন্সির(আরপা) আধিকর্তা বব টেলর আরপানেট নামক একটি নেটওয়ার্ক তৈরি করে ফেললেন। এভাবে প্রতিরক্ষা স্তরে তথ্য প্রচারের কাজ শুরু হল। এই পদ্ধতিতে তথ্য গোপন ভাবে প্রচার করার সুবিধাও ছিল।
কম্পিউটারের সঙ্গে টেলিযোগাযাগ ব্যবস্থার প্রথম সংযোগ ঘটে ১৯৪০ সালে। নিউ হ্যাম্পশায়ারের ডার্টমাউথ কলেজ থেকে নিউইয়র্কের বেল ল্যাবরেটরিজ-এর একটি ক্যালকুলেটরে টেলিগ্রাম লাইনের মাধ্যমে ডঃজর্জ স্টিবৎ'স তথ্য পাঠিয়েছিলেন।
১৯৮০ সালে ঘটল এক চমকপ্রদ ঘটনা। সে সময় সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার টিম বার্নস-লি কাজ করেছিলেন সুইজারল্যান্ডের জেনিভায় 'ইউরোপিয়ান ল্যবরেটরি ফর পার্টিকল ফিজিক্স'-এ। তিনি ভাবতে লাগলেন এমন একটা কম্পিউটার প্রোগ্রাম তৈরি করলে হয় যেটা মানুষের মস্তিষ্কের মতো কাজ করে। মস্তিষ্কের মতই সেখানে সঞ্চিত থাকবে তথ্য, প্রয়জনে সুইচ টিপে সেই তথ্য জেনে নেওয়া যাবে। এই ভাবনা থেকে 'হাইপার টেক্সট' নামে একটা নতুন সফটওয়্যার তৈরি করলেন। এর মাধ্যমে তাঁর কম্পিউটারে রাখা তথ্য গুলি পরস্পর জুড়ে দিলেন। প্রতিটি তথ্যকে পৃথক সংখ্যায় আলাদা করলেন। ঐ সংঙ্খার মাধ্যমে এক তথ্য আরেক তথ্যে যাতায়াত করতে লাগলেন। বন্ধুদেরও আনুরোধ করলেন তাঁদের কম্পিউটারের তথ্যগুলিকে এই নতুন সফটওয়ারের মাধ্যমে তাঁর কম্পিউটারের সঙ্গে জুড়ে দিতে। এরপর তিনি 'হাইপার টেক্সট মার্ক ল্যাঙ্গুয়েজ' নামক বিশেষ 'কোডিং সিস্টেম' তৈরি করলেন। এর মাধ্যমে যেকোনো দুটি তথ্যের মধ্যে যোগসুত্র গড়ে উঠল। যাকে বলে 'হাইপার টেক্সট ট্রান্সফার প্রোটকল' ( HTTP )। এজন্য প্রতিটি তথ্যকে নিজস্ব পরিচয় দেওয়া হয়।
কম্পিউটারের নেটওয়ার্ক যখন নির্দিষ্ট আঞ্চলের কম্পিউটারগুলির মধ্যে তামার তার বা ফাইবার দিয়ে সংযোগ করা হয় তখন তাকে বলে লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক বা ল্যান।আর যখন্ নেটওয়ার্ক বিস্তার কোন নির্দিষ্ট গণ্ডীর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না তখন তাকে বলে ওয়াইড এরিয়া নেটওয়ার্ক বা ওয়ান । এই কম্পিউটার গুলির সংযোগ করার জন্য মাইক্রওইয়েভ এর সাহায্য নিতে হয়।
কম্পিউটার যখন তথ্য পাঠায় তখন সেটি নির্দিষ্ট সাংকেতিক ভাষা ব্যাবহার করে। অন্যপ্রান্তের নির্দিষ্ট একটি কম্পিউটারের সংকেতের সঙ্গে সেই সংকেত মিলে গেলেই তথ্য নির্দিষ্ট জায়গায় পৌঁছে যায়।
ইন্টারনেটে কম্পিউটারে পাঠানো বদ্যুতিক সংকেত দুটি নির্দিষ্ট বদ্যুতিক মানের মধ্যে ওঠা নামা করে। তাই এই সংকেত কে পালস বলে। এই পালস কে গ্রন্তব্য স্থানে পৌঁছনর জন্য মডুলেটর, ডিমডুলেটর বা মোডেম নামক একটি যন্ত্রের সাহায্য নেওয়া হয়। এটি রাখা হয় কম্পিউটার বা টেলিফোন নাইনের মধ্যে। মোডেম কম্পিউটারে পাঠানো পালস দুটি আলাদা বৈদ্যুতিক মানের জন্য আলাদা আলাদা নির্দিষ্ট কম্পাঙ্কে একটানা সংকেত তৈরি করে টেলিফোন লাইন এ প্রেরন করে। আবার ঐ কম্পিউটারে সংকেত নেওয়ার আগে নির্দিষ্ট কম্পাঙ্কের সংকেত কে পালসে নিয়ে আসে। অর্থাৎ ইন্টারনেট সুবিধা পাওয়ার জন্য একটি পার্সোনাল কম্পিউটার, একটি মোডেম এবং একটি এস টি ডি লাইন থাকলেই হলো।
ইন্টারনেটের সবথেকে বড় সুবিধা হল এক প্রান্তের গ্রাহক তাঁর বক্তব্য কিবোর্ডের মাধ্যমে কম্পিউটারে ঢুকিয়ে নির্দিষ্ট সময়ে অন্যপ্রান্তের নির্দিষ্ট নম্বরে ডায়াল করার নির্দেশ দিতে পারে। লাইন পেলেই অন্যপ্রান্তের ব্যাক্তির কম্পিউটারে সেটি স্থানান্তরিত হয়ে যায়। সেই ব্যাক্তি যদি তখন কম্পিউটারের কাছে না থাকেন তবে তাঁর সুবিধা মতো সময়ে তিনি কিবোর্ডের মাধ্যমে নির্দেশ দিলেই তারকাছে সমস্ত তথ্য ডিস্প্লে -তে ফুটে উঠবে।
দুটি কম্পিউটারের মধ্যে যদি দূরত্ব খুব বেশী হয় এবং দুরত্বের কারণে যদি সেখানে টেলিফোন লাইনের সাহায্যে যোগাযোগ গড়ে তোলা সম্ভব না হয় তবে সেখানে যোগাযোগের কাজে সাহায্য করবে উপগ্রহ।
ইন্টারনেটের মাধ্যমে চিঠি, ছবি ইত্যদি পাঠাবার সুযোগও মিলছে। এর নাম হল ই-মেল। পৃথিবীর যেখানেই ই-মেল পাঠানে হোক না কেন তার খরচ পড়ে মাত্র কয়েক টাকা মাত্র। আর সবচেয়ে বড় সুবিধা যাকে লেখা হচ্ছে সে ছাড়া ঐ চিঠি আর কেউ পড়তে পারবে না। ই-মেল যেমন লিখে লিখে কথা বলা তেমনি ইন্টারনেট ফোনের মাধ্যমে টেলিফোনের মত কথাবার্তাও বলা যায়। এক্ষেত্রে বাক সাংকেতিক ইন্টারনেট ফোন সফটওয়্যার ডিজিটাল সঙ্কেতে রুপান্তরিত করে পাঠায় ইন্টারনেটের মাধ্যমে।
ইন্টারনেট আবিষ্কারের ইতিহাস - জেনে নিন
Reviewed by Wisdom Apps
on
September 07, 2018
Rating:
Reviewed by Wisdom Apps
on
September 07, 2018
Rating:

No comments: