ঐতিহাসিক মুর্শিদাবাদের প্রধান প্রধান দর্শনীয় স্থান

প্রধান প্রধান দর্শনীয় স্থান

“হাজারদুয়ারী প্যালেস”ব্যাতিত বহু দর্শনীয় অট্টালিকা,মন্দির,মসজিদ,উদ্যান,কবরস্থান,বাগবাগিচা ইত্যাদি আছে-এই গুলি শহরের মধ্যে-উত্তর-দক্ষিনে,পূর্ব-পশ্চিমে বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে।সুতরাং শহরের এক প্রান্ত হতে অপর অপর প্রান্ত পর্যন্ত মুর্শিদাবাদ গাইড্‌ বুক বা ঐ জাতীয় কোন পুস্তকের নির্দেশমত ইতিহাস প্রসিদ্ধ স্থান ও দর্শনীয় জিনিষগুলি দেখলে সবগুলি সুষ্ঠুভাবে দেখা জাবে।এর জন্য স্টেশন হতে অথবা টাউনে(কেল্লার মধ্যে)টাঙ্গা,রিক্সা,অটোরিক্সা,জীপ,ট্রেকারসুবিধামত ভারা করে ঘুরে ঘুরে দেখলে ভাল হয়।দর্শনীয় প্রাসাদ,অট্টালিকা,মন্দির,মসজিদ ইত্যাদির বিষয় নিচে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হ’ল।


হাজারদুয়ারী প্যালেস ও মিউজিয়াম

হাজারদুয়ারী প্যালেস বর্তমান নাম “হাজারদুয়ারী প্যালেস মিউজিয়াম”।কিসুন্দর,মনোরম, মনোমুগ্ধকর এই বিখ্যাত হাজারদুয়ারী প্রাসাদ!এই রমনীয় প্রাসাদ ও অন্যান্য ইতিহাস প্রসিদ্ধ স্থানগুলি দেখবার জন্য প্রতি বৎসর বহু দর্শক ও টুরিষ্টকে আকৃষ্ট করে।
এই প্রাসাদ ইতালীর স্থাপত্যকলার এক জীবন্ত নিদর্শন।এই প্রাসাদের নামকরণ সম্পর্কে কেহই সঠিকভাবে বলতে পারেন না।সাধারনভাবেএরূপ নামকরণের অর্থ অনেক দরজাবিশিষ্ট এই প্রাসাদ।এই প্রাসাদের অসংখ্য দরজা আছে যার অনেক গুলি সঠিক দরজা না হয়ে নকল দরজারুপে পরিগণিত হয়।যাহোক, ১৮২৯ খ্রিস্টাব্দের ২৯শে আগস্ট তদানিন্তন গভর্নর জেনারেল লর্ড উইলিয়াম ক্যাভেন্ডিস ও বহু স্বনামধন্য ব্যক্তিগনের উপস্থিতিতে নবাব নাজিম হুমায়ুনজা এই প্রাসাদের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন।এই প্রাসাদের নির্মানকার্য সম্পুর্ন হয় ১৮৩৭ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে এবং খরচ পরে মোট ১৮ লক্ষ টাকা।গাঁথুনীর কাজে বোহু পরিমাণে ডিমের কুসুম ব্যবহার হয়েছে শোনা যায়।
এই প্রাসাদটি তিন তলা-প্রতি কক্ষের কারুকার্য অত্যন্ত মনোরম।এক তলায় অস্ত্রাগার, অফিস-কাছারী, রেকর্ডরুম ইত্যাদি আছে।অস্ত্রাগারে মোট ২৬০০টি অস্ত্র সজ্জিত আছে-পলাশীযুদ্ধে এই সকল অস্ত্রসস্ত্র ব্যবহৃত হয়েছিল বলে মনে হয়।এই সকল অস্ত্রসস্ত্রের মধ্যে কতগুলি বিখ্যাত-যেমন আলীবর্দ্দির ব্যবহৃত তলোয়ার ও বহুনল বিশিষ্ট বন্দুক, নাদিরশাহের শিরস্ত্রান, মীরকাশিমের ছোরা, বিভিন্ন ধরনের ও আকারের কামান, ছোরা ইত্যাদি।যে ছোরার সাহায্যে মহম্মদী বেগ সিরাজ-উ-দ্দৌলাকে হত্যা করেছিল সেটিও সযত্নে এই অস্ত্রাগারে রক্ষিত আছে।
দ্বিতল ও ত্রিতলে “আর্ট গ্যালারী”ও লাইব্রেরী অবস্থিত।আর্ট গ্যালারীতে বহু বিখ্যাত চিত্রশিল্পীর চিত্রকলা স্থানলাভ করেছে এদের মধ্যে “The burial of Sir John More, Adom& Eve, Black Bent” বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
লাইব্রেরী ঘরে ছোট বড় আকারের বহু ধর্মপুস্তক, কয়েক সহস্র চুক্তিপত্র, নাটক, নভেল, তাম্রলিপি, ইতিহাস, প্রয়োজনীয় দলিল দস্তাবেজ, বিদেশী ভাষায় লিখিত নানা গ্রন্থ সংগৃহীত আছে।আবুল ফজল রচিত আইন-ই-আকবরীর পান্দুলিপিও এখানে দৃষ্ট হয়।এখানে বিরাট আকৃতিবিশিষ্ট একটি সুবিশাল আয়াল্বাম আছে যা দৈর্ঘে ৩ হাত, প্রস্থে ২ হাত, ওজন প্রায় ২০ কে.জি.।তাছাড়া বাগদাদের বিখ্যাত লেখক হারুন-অল্‌-রশিদের হস্তলিখিত কোরান সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
সমগ্র কেল্লা কম্পাউন্ডের আয়তন ৪১ একর।এই হাজারদুয়ারী প্যালেসের সম্মুখভাগে দু’পাশে মনোরম বাগান শোভা পায়।একতলা প্যালেসের সম্মুখভাগে বিশাল সিঁড়ি “দরবার কক্ষ” পর্যন্ত উঠেছে, সম্মুখে লম্বা গোলাকার স্তম্ভরাজি যাতে সুন্দর নক্সার কাজ রয়েছে ও সিঁড়ির দু’পাশে সম্মুখভাগে অবস্থিত দু’টি সিংহমূর্তি এর সৌন্দর্যকে আরও অপরুপ করেছে।
বর্তমানে এই হাজারদুয়ারী প্যালেস ও ইমামবাড়া ভারত সরকারের আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে মন্ত্রকের তত্বাবধানে রয়েছে এবং বর্তমান নামকরন নামকরন হয়েছে “হাজারদুয়ারী প্যালেস মিউজিয়াম”।ভারত সরকারের অধিগ্রহনের পর সম্পূর্ণরুপে মেরামত ও রং করে ঝাড় বাতিগুলিকে বৈদুতিক আলো সংযোজিত করা হয়েছে।পুরাতন ছবিগুলিকে কেমিক্যাল ওয়াস্‌ করে সেগুলি পরিষ্কার করা হয়েছে।এরুপ শোনা যায় যে হাজারদুয়ারী প্যালেসে নবাব হুমায়ুন জার আমলে বহু মুল্যবান জিনিষপত্র ধূলায় আচ্ছাদিত অবস্থায় পড়ে আছে।এগুলি বিভিন্ন কক্ষে সযত্নে রক্ষিত হলে এই হাজারদুয়ারী প্যালেসে একটি বৃহৎ সংগ্রহশালায় পরিনত হবে আশা করা যায়।হাজারদুয়ারী প্যালেসমিউজিয়াম, প্রতিদিন খোলা থাকে।


ইমামবাড়া

হাজারদুয়ারী প্যালেসের ঠিক বিপরীত দিকে ইমামবাড়া অবস্থিত।১৮৪৬ খ্রীস্টাব্দে সিরাজউদ্দৌল্লা নির্মিত কাঠের ইমামবাড়াটি ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়ে গেলে নবাব হুমায়ুন জার পুত্র বাংলা, বিহার, উড়িষ্যার শেষ নবাব নাজিম মন্‌সুর আলী খাঁ ফেরাদুন জা ১৮৪৭ খ্রীস্টাব্দের প্রায় ৭ লক্ষ টাকা ব্যয় করে বর্তমান ইমামবাড়া নির্মান করেন।এখনও প্রতি বৎসর মহরম উপলক্ষে মহরম মাসের প্রথম দশদিন ইমামবাড়ার সম্মুখে জাঁকজমক সহকারে একটি মেলা বসে।বহু দূর দুরান্ত হতে ধর্মপ্রান মুসলমান গন মহরম পর্বে যোগদান করেন এবং হাসান হসেনের জন্য শোকাতুর হয়ে মাতন করে থাকেন।মহরমের শেষ দিন সকালবেলায় ইমামবাড়া হতে একটি শোভাযাত্রা বের হয় এবং হাসান হসেনের নকল মৃতদেহ শবাধারে বহন করে নগ্নপদে বুক চাপড়ে হায় হাসান, হায় হসেন বলে শোকার্ত হৃদয়ে কারবালা প্রান্তর পর্যন্ত ৩কিমি রাস্তা ৬/৭ ঘণ্টায় অতিক্রম করেন। এই দৃশ্য অতীব মর্মান্তিক ও হৃদয়বিদারক।যদিও মহরম প্রতি বৎসর এখনও উদযাপিত হয়, তবুও অর্থাভাবের জন্য জৌলুসের জাঁকজমক বহুলাংশে কমে গেছে।

নবাব বাহাদুর হাইস্কুল

ইমামবাড়া হতে সামান্য উত্তরদিকে নবাব বাহাদুর হাইস্কুল অবস্থিত।১৮২৫ খ্রীস্টাব্দে নবাব পরিবারের ছাত্রদিগের লেখাপড়ার সুবিধার জন্য একটি মাদ্রাসা গড়ে ওঠে এবং প্রায় একই সময় নিজামত কলেজও প্রতিষ্ঠিত হয় নবাব হুমায়ুন জার আমলে।মীরজাফরের পত্নী মনি বেগম তদানিন্তন ব্রিটিশ সরকারের হাতে কয়েক লক্ষ টাকা গচ্ছিত রাখেন এবং সেই টাকার সুদ হতে স্কুলের সর্বপ্রকার ব্যয় নির্বাহ হয়ে আসছে।১৯০৫ খ্রীস্টাব্দে ঐ মাদ্রাসা ও কলেজ এক হয়ে গেলে এর নতুন নামকরন হয় নবাব বাহাদুর ইন্সটিটিউশন্‌ মুর্শিদাবাদ।মুর্শিদাবাদের প্রথম নবাব হাসান আলীর সময় হতেই স্থানীয় সাধারন ছাত্রেরা বিনা বেতনে শিক্ষা লাভ করে আসছে। এই স্কুলের বিশেষ বৈশিষ্ট্য আছে, যা অন্য কোথাও দৃষ্ট হয় না।যেমন নিজামত ছাত্রেরা বিনা অর্থাব্যয়ে খাওয়া-দাওয়া, থাকা ও শিক্ষালাভ করে থাকে;বাংলা ও উর্দু – দু প্রকার মিডিয়ামে ছাত্রদিগকে শিক্ষা দেওয়া হয়।বিজ্ঞান ও কলাবিভাগ প্রচলিত আছে।স্কুলের নিজস্ব ডিসপেন্সরী থাকায় ছাত্ররা বিনা অর্থাব্যয়ে ঔষধপত্র পেয়ে থাকে।স্কুল এলাকার মধ্যেই প্রধান শিক্ষক মহাশয় বিশেষ আবাসনের সুযোগলাভ করে থাকেন।ইহা ব্যতীত স্কুল এলাকার সুন্দর ফুল ও ফলের বাগান, তিনটি ছাত্রাবাস ও স্কুল সংলগ্ন ফুটবল খেলার মাঠ বর্তমান আছে।


ত্রিপোলিয়া গেট

চক্‌ বাজার থেকে উত্তরে নবাব বাহাদুর স্কুল যাওয়ার পথে সদর রাস্তার উপর ত্রিপোলিয়া তোরণ বা গেট্‌ দেখা যায়।এই গেট বর্তমানে ভগ্নদশা প্রাপ্ত হয়েছে।পূর্বে নবাবী আমলে এখানে নহবৎ বসত এবং দূর থেকে শোনা যেত।নবাব সুজাউদ্দিনের আমলে এই গেট তৈরী হয়েছিল।

চক্‌ মসজিদ

চক্‌ বাজারের পশ্চিমদিকে এই মসজিদটি অবস্থিত।মীরজাফরের স্ত্রী মণি বেগম বীণাকার ওয়াজেদ আলীর নামে এই মসজিদটি করেছিলেন।এখানে ওয়াজেদ আলীর সমাধি আছে।পূর্বে এখানে মুর্শিদকুলী খাঁর দরবার গৃহ ‘চেহেল সেতুন প্রাসাদ’ অবস্থিত ছিল। ১৭৬৭ খ্রীস্টাব্দে মীরজাফর এই মসজিদটি নির্মান করেন।এখানে প্রতিদিন নিয়মিত নমাজ ও কোরাণ পাঠ হত।এই মসজিদটি দৈঘ্যে ১২৫ ফুট।এর ৭টি গম্বুজ আছে।ঈদ ও বক্‌রিদের সময় এখানে অনেক ধার্মিক ভক্তের সমাবেশ হত ও মেলা বসত।


সিরাজদ্দৌলার “মদিনা”

এইটিই সিরাজের সময়ের স্থাপত্যশিল্পের একমাত্র নিদর্শন।সিরাজ নিজে এই মদিনার জন্য কারবালা থেকে পবিত্র মাটি মাথায় করে বয়ে এনেছিলেন।সিরাজের মাতা আমিনা বেগম প্রতিঞ্জা করেছিলেন যে তাঁর পুত্র নবাব হ’লে মদিনার পবিত্র মাটি এনে বহু মূল্যবান রত্ন সামগ্রী দ্বারা দরজা প্রস্তুত করবেন।দরজার বেদীটি উত্তর হতে দক্ষিণে ৪ হাত, প্রস্থে ১ হাত ও গভীরতায় ১.৫ হাত।শোনা যায় মীরকাশিম যখন পরে নবাব হন, তিনি মুঙ্গেরে রাজধানী স্থানান্তরিত করবার সময় এই মদিনার সমুদয় ধনরত্ন মুঙ্গেরে নিয়ে যান।এই মদিনার দরজাটি কেবল মহরমের সময় খুলে দেওয়া হয়-আর বাকী সময় বন্ধ থাকে।

ওয়াসেফ্‌ মঞ্জিল বা “নিউ প্যালেস”

মুর্শিদাবাদের নবাব স্যার ওয়াসেফ আলী মির্জ্জা নিজ বসবাসের জন্য এই প্রাসাদটি প্রস্তুত করেছিলেন।ইহা দক্ষিণ দরওয়াজা হতে হাজারদুয়ারী প্যালেস যাওয়ার পথে অবস্থিত।সুরেন্দ্র বরাট নামে এক বাঙ্গালী ইঞ্জিনিয়ারের পরিচালনা ও তত্ত্বাবধানে এই প্রাসাদ টি তৈরী হয়।এই প্রাসাদের উত্তর দিকে কৃত্রিম পাহাড় ও তৎ সংলগ্ন বাগান (ল্যান্ডস্কেপগার্ডেন) বিনষ্ট হয়ে গেছে।এখন ঐ প্রাসাদ টির নীচে মুর্শিদাবাদ এষ্টেট ম্যানেজারের কাছারী ও দ্বিতলে ম্যানেজারের বাসস্থান।এই প্রাসাদের অভ্যন্তরে শ্বেত পাথরের সিঁড়িও সুদৃশ্য মর্ম্মর মূর্তিগুলি বিরাজ মান। সামান্য প্রবেশ মূল্যে দেখান হয়।


বাচ্চাওয়ালী তোপ

হাজারদুয়ারীর উত্তরে মদিনার সন্নিকটে বাঁধানো বেদীর উপর একটি বৃহদকার কামান দৃষ্ট হয়। ইহাকে “বাচ্চাওয়ালী” তোপ বলা হয়।নবাব হুমায়ুনজার সময় এটি নদীগর্ভ থেকে উদ্ধার করা হয়। ১৬৪৭ খ্রীষ্টাব্দে জনার্দন কর্মকার এইটি তৈরী করেন বলে শোনা যায়।এই কামানটিতে তিনটি চেম্বার আছে এবং দাগিবার সময় ১৮ (আঠার) সের বারুদের  প্রয়োজন হত।শোনা যায় এটি একবার মাত্র দাগা হয়েছিল এবং ইহার প্রচন্ড আওয়াজ ১০ (দশ) মাইল পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে এবং বহু গর্ভবতী মহিলার গর্ভপাত ঘটে; সে কারণে ইহার নাম “বাচ্চাওয়ালী তোপ”।ইহা দৈর্ঘ্যে ১৮ ফুট, এবং ওজন ১৬,৮৮০ পাউন্ড।এই ঘটনার পর হতে ঐ তোপ দাগা বন্ধ হয়ে গেছে।


আজিমুন্নেশার সমাধি

নশীপুর যাওয়ার পথে মহিমাপুর ফাঁড়ির বিপরীত দিকে মুর্শিদকুলী খাঁর কন্যা ও সুজা খাঁর স্ত্রী – আজিমুন্নেসার সমাধি অবস্থিত।শোনা যায় একবার তিনি ভয়ানক অসুস্থ হয়ে পড়ায় হেকিম সাহেবের নির্দেশে প্রতিদিন একটি মানব শিশুর লিভার দিয়ে ঔষধ তৈরী করে দেওয়া হত অত্যন্ত গোপনীয়ভাবে।এবং পরে বেগমসাহেবা সুস্থ হওয়ার পর মানবদেহের কলিজায় আসক্ত হয়ে পড়েন।ইহাতে নবাব মুর্শিদকুলী খাঁর নির্দেশে বেগমকে জীবন্ত অবস্থায় কবর দেওয়া হয়।
কিন্তু ঐতিহাসিক তথ্য হতে জানা যায় যে আজিমুন্নেসা বেগম ১৭৩০ খ্রীষ্টাব্দে মারা যান।–তাঁর পিতার মৃত্যুর ৫ (পাঁচ) বৎসর পর।মুর্শিদকুলী খাঁ কন্যার চিকিৎসার স্বার্থে শিশুহত্যার বিষয় জানতে পারেন এবং স্বীয় কন্যাকে পতিগৃহে উড়িষ্যায় পাঠাবার নির্দেশ দেন।পরে সুজা খাঁ নবাবীপদে অভিষিক্ত হলে আজিমুন্নেসা বেগম মুর্শিদাবাদে ফিরিয়া আসেন এবং তিনি এই মসজিদটি নির্মান কোরান।


জাফরাগঞ্জ মোক্‌বারা

জাফরাগঞ্জ প্রাসাদের কিছু পূর্বে রাস্তার পাশে এই সমাধি ক্ষেত্রটি বিরজমান।এই স্থানটিতে প্রথমে VKitehen Garden ছিল ও বেগম শাহখানম্‌ ইহা খুব পছন্দ করতেন।পরে এইটি কবরস্থানরূপে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।এখানে সমস্ত নবাব নাজিম ও তাঁহাদিগের বংশধরগণ(মীরণ, ফেরাদুন জা ব্যতিত) এখানেই সমাহিত আছেন।বেগম শাহখানমকে ১৭৬৬ খ্রীষ্টাব্দে সমাহিত করা হয়।


জাফরাগঞ্জ প্রাসাদ

নশীপুর রাজবাড়ী যাওয়ার পথে ভাগীরথীর পূর্বদিকে এবং রাস্তার পাশে মীরজাফরের প্রাসাদ অবস্থিত – ইহা বর্তমানে জীর্ণদশায় উপনীত।আলীবর্দ্দী খাঁ তাঁর নবাবী আমলে ভগ্নী শাহখানমের জন্য প্রাসাদটি তৈরী করেছিলেন।পরবর্তীকালে তিনি হীরাঝিল প্রাসাদে চলে যান।আজও এই প্রাসাদকে নিমকহারাম দেউড়ী বলা হয়।শোনা যায়, ১৮৯৭ খ্রীস্টাব্দে ভূমিকম্পে এই প্রাসাদ ভেঙ্গে পড়ে।এই প্রাসাদে মীরণের নির্দেশে মোহম্মদী বেগের হস্তে সিরাজ-উ-দ্দৌলা নিহত হন।এ সম্পর্কে দ্বিমত প্রচলিত আছে – অনেকে মনে করেনেই হত্যাকান্ড মনসুরগঞ্জ প্রাসাদে (হীরাঝিলে) অনুষ্ঠিত হয়েছিল।


নশীপুর-রাজবাটী

ইতিহাস প্রসিদ্ধ কুখ্যাত দেবী সিংহ এই রাজবাড়ী তৈরী করেন।দেবী সিংহের আদিবাড়ী ছিল পাণিপথে।মুর্শিদাবাদ যখন চরম উন্নতির শিখরে দেবী সিংহ তখন সুদূর পাণিপথ হতে ব্যবসা করবার উদ্দেশ্যে মুর্শিদাবাদে আগমন করেন।পরে তিনি দেওয়ান রেজা খাঁর অধীনে চাকরী গ্রহণ করেন এবং পড়ে ইংরেজ কোম্পানীর অধীনে রেভিনিউ কালেক্টর পদে ভূষিত হন। ৭৬-এর মন্বন্তরের পরে রাজস্ব আদায়ের জন্য তিনি প্রজাদের উপর যেরূপ অত্যাচার উৎপীড়ন করেন তাঁর তুলনা হয়না।কৃতকর্মের ফলস্বরূপ তাঁর দুইপত্নী থাকা সত্ত্বেও তাঁরবংশ রক্ষা হয়নি।বাধ্য হয়ে তিনি তাঁর ভ্রাতুষ্পুত্র বলবন্ত সিংহকে “দত্তক” গ্রহণ করেন।তিনি বিভিন্ন উপায়ে প্রচুর ধনসম্পত্তির অধিকারী হন এবং বসতবাড়ীর জন্য “হাজারদুয়ারীর” অনূরূপ প্রাসাদ তৈরী করেন।এই প্রাসাদ বর্তমানে ভগ্নদশা প্রাপ্ত হয়েছে।দেবী সিংহ ১৮০৫ খ্রীস্টাব্দে পরলোক গমন করেন।
নশীপুর “ঝুলনযাত্রার” জন্য বিখ্যাত।ঐ উপলক্ষে এখানে জাঁকজমকপূর্ণ মেলা বসত – তখন পূরাণ অবলম্বনে ‘পুতুলনাচ’ দেখানো হত।দশাবতার ও মহাবীরের মূর্তি এখনও বিদ্যমান।

নশীপুর আখড়া

নশীপুর রাজবাড়ীর দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে ৪০/৫০ মিটার গেলে নশীপুর বড় আখড়া পাওয়া যাবে। এখানে রামানুজ সম্প্রদায়ভুক্ত সাধুসন্তগন অবস্থান করেন।
মুর্শিদাবাদ শহর নবাবী আমলে যখন চরম উৎকর্ষলাভ করে তখন ঐ সম্প্রদায়ের সাধুগণ বসবাসের জন্য তাদের আহার ও পূজাপাঠ সুচারুরূপে সম্পাদিত হওয়ার জন্য বহু ধনসম্পত্তি দান করেন।ঐ সম্পত্তি জমি জায়গার খাজনা ও উৎপাদিত ফসল হতে সাধুসন্তদের সেবাপূজা, আহার ও দানধ্যান নির্বাহ হয়।এই আখড়ার নিয়মাবলী যিনি চিরকুমার থেকে উক্ত আখড়ার সেবাপূজা সুষ্টভাবে পরিচালনা করবেন তাকেই সেবাইত বা “মহান্তরূপে” নির্বাচিত করা হবে।এখানে দেববিগ্রহণের নিত্য সেবাপূজা ও শ্রীকৃষ্ণের ঝুলনযাত্রা উপলক্ষে বিরাট মেলা হয় ও উহা পাঁচ দিন ধরে চলে।বহু দুরদূরান্ত হতে আসা প্রচুর যাত্রী সমাবেশ হয়।তীর্থকালে অনেক সাধুসন্ত এখানে আশ্রয়লাভ করেন ও ভোজন,দান পেয়ে থাকেন।

কাঠগোলা বাগান

নশীপুর রাজবাড়ী হতে উত্তর-পূর্বদিকে ১ কিমি পথ গেলে একটি সুন্দর প্যালেস, বাগান ও পরেশনাথের মন্দির দৃষ্ট হয় – এটাই কাঠগোলা বাগান নামে খ্যাত।বৃহদাকার এই বাগানটি মূল্যবান বৃক্ষ ও পুষ্পে সুশোভিত থাকত।জিয়াগঞ্জ কলেজের প্রতিষ্ঠাতা শ্রীপৎ সিং-এর পূর্বপুরুষ লছমীপৎ সিং উহা তৈরী করেন।এই বাগানের মধ্যস্থিত প্রাসাদের বহু মূল্যবান আসবাবপত্র ও মর্মরমূর্তি বিরাজমান।বর্তমানে কাঠগোলা বাগান পূর্বগৌরব হারিয়েছে।
ঐতিহাসিক মুর্শিদাবাদের প্রধান প্রধান দর্শনীয় স্থান ঐতিহাসিক মুর্শিদাবাদের প্রধান প্রধান দর্শনীয় স্থান Reviewed by Wisdom Apps on আগস্ট ৩১, ২০১৮ Rating: 5

কোন মন্তব্য নেই:

Blogger দ্বারা পরিচালিত.