Results for Travel

বাংলার ৭০ টি চেনা অচেনা পাখীর নাম ও ছবি - All birds of Bengal with name and images

April 13, 2023

 বাংলায় অনেক পাখি আছে যাদের আমরা মাঝে মাঝেই আমাদের আশেপাশে দেখতে পাই কিন্ত নাম জানি না । আসুন আজ সেই সমস্ত পাখিদের নাম জেনে নিই । বাংলার গ্রামে গঞ্জে বিভিন্ন নামে এই পাখিদের ডাকা হয় কিন্ত আমরা খুঁজে খুঁজে সবথেকে বেশি প্রচলিত নামটিকেই বেছে নিয়েছি । এই লেখাটি লিখতে আমরা সাহায্য নিয়েছি বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদের " আমাদের ছোট পাখি " বই ও গুগল সার্চ ইঞ্জিনের । আসুন বাংলার পাখিদের চিনে নিই - 

names of birds in bengal


বাংলার ৭০ টি চেনা অচেনা পাখীর নাম ও ছবি - All birds of Bengal with name and images বাংলার ৭০ টি চেনা অচেনা পাখীর নাম ও ছবি - All birds of Bengal with name and images Reviewed by Wisdom Apps on April 13, 2023 Rating: 5

বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুর ভ্রমনের সম্পূর্ণ গাইড । ২৯ টি স্পট ঘুরুন ১ দিনে । জেনে নিন বিস্তারিত

June 12, 2022

বিষ্ণুপুর ট্রাভেলের সম্পূর্ণ ভিডিও পেয়ে যাবেন আমাদের চ্যানেলে - এখানে ক্লিক করে দেখুন 

এই লেখা থেকে আপনি জানতে পারবেন বিষ্ণুপুর কিভাবে যাবেন , কি কি দেখবেন ,ঘুরতে খরচ কত হবে এবং বিষ্ণুপুরের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস । ভিডিওটি সম্পূর্ণ দেখে ভালো লাগলে একটি লাইক দিয়ে ও কমেন্টে আপনার মতামত লিখে আমাদের অনুপ্রানিত করবেন । আসুন শুরু করা যাক ।



বাঁকুড়া জেলা পশ্চিমবঙ্গের একটি অন্যতম ঐতিহাসিক , সাংস্কৃতিক ও ধার্মিক স্থান । এই জেলায় একদিকে আছে পাহাড় , একদিকে ঘন জঙ্গল আর জেলার প্রাণকেন্দ্র বিষ্ণুপুর এক সুপ্রাচীন ঐতিহ্যশালী শিল্পের জন্মস্থান । টেরাকোটা বা পোড়া মাটির কাজের জন্য পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে লোক বিষ্ণুপুর ঘুরতে আসেন। ভ্রমণের জন্য গ্রীষ্মকাল বাদে বছরের যে কোনো সময়ই সঠিক সময় ।

প্রথমে জেনে নিন কিভাবে বিষ্ণুপুর যাবেন - 
হাওড়া থেকে অনেক ট্রেন আছে । কয়েকটি প্রতিদিন চলে া কয়েকটি সপ্তাহে ১/২ দিন অন্তর চলে , সব ট্রেনের তালিকা এখানে দেওয়া হলো -


 । হাওড়া থেকে বিষ্ণুপুরের দুরত্ব ১৩৪ কিলোমিটার , ট্রেনে সময় লাগে ৩.৩০-৪ ঘন্টা । হাওড়া থেকে ভোরের দিকের ট্রেন ধরে সকাল সকাল বিষ্ণুপুর পৌঁছে গেলে হাতে অনেকটা সময় পাবেন । এছাড়াও ধর্মতলা থেকে বিষ্ণুপুরগামি অনেক বাস পেয়ে যাবেন । প্রাইভেট গাড়ি করে এলে এখানে গাড়ি পারকিং করার জায়গা আছে , নিশ্চিন্তে আসতে পারেন ।

বিষ্ণুপুরের ইতিহাস -
প্রাচীন মল্লভূমের রাজধানী বিষ্ণুপুর। সপ্তম শতাব্দীর শেষের দিকে অর্থাৎ ৬৯৫ খ্রীষ্টাব্দে আদিমল্ল রঘুনাথ মল্ল রাজবংশের প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর বংশধর জগৎমল্ল বিষুপুরে রাজধানী স্থানান্তরিত করেন। পরবর্তীকালে মল্লরাজ বীরহাম্বির বৈষ্ণব পণ্ডিত শ্রীনিবাস আচার্যের শিষ্যত্ব গ্রহণ করে একজন পরম বৈষুব ভক্তে পরিণত হন। তিনিই মল্ল রাজবংশের কুলদেবতা ‘মদনমোহন’কে বিষুপুরে নিয়ে আসেন এবং মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। কালে কালে কৃষ্ণমন্দিরে ভরে যায় আশপাশ।

মল্লরাজাদের উদ্দেশ্য ছিল বিষ্ণুপুরকে ভারতের দ্বিতীয় বৃন্দাবন বানানোর । তাই সারা বিষ্ণুপুরে জুড়ে ছড়িয়ে আছে শতাধিক ছোট বড় মন্দির । কিছু মন্দির সংরক্ষিত আর বাকিগুলো ভগ্নপ্রায় । বিষ্ণুপুরে অনেক মন্দির থাকলেও এই ২৯ টি স্থান দর্শন করলেই মোটামুটি দেখা সম্পূর্ণ হয় ।

সব মন্দির গুলো ঘুরে দেখার জন্য বিষ্ণুপুর স্টেশন থেকে বা বাসট্যান্ড থেকে টোটো বা অটো রিজার্ভ করে নিতে পারেন । ভাড়া পড়বে মোটামুটি ২৫০-৪০০ টাকার মধ্যে । আমরা প্রাইভেট গাড়ি নিয়ে গিয়ে বাজারের কাছে গ্যারেজে গাড়ি রেখে এই ভাইয়ের টোটো করে ঘুরেছিলাম । গাড়ি পারকিং খরচ ৫০ টাকা । আর টোটো ভাড়া নিয়েছিল ৩০০ টাকা ।

বিষ্ণুপুরের মন্দির গুলো কাছাকাছি হওয়ায় ঘুরতে খুব বেশি সময় লাগে না । এই হলো মন্দিরের একটি ম্যাপ ।



 নিচে একটি লিঙ্ক দেওয়া থাকলো সেখান থেকে এই ম্যাপটি আপনি ডাউনলোড করতে পারবেন । এই ম্যাপ অনুযায়ী ঘুরলে কম সময় আপনি অনেকটা জায়গা ঘুরতে পারবেন ।

টোটো প্রথমেই আপনাকে নিয়ে যাবে রাসমঞ্চে -
১৫৮৭ খ্রীষ্টাব্দে মল্লরাজ বীরহাম্বিরের প্রতিষ্ঠিত অনুপম স্থাপত্যের এই রাসমঞ। পিরামিডাকৃতি অভিনব গঠন শৈলীর এমন মঞ্চ ভারতবর্ষে বিশেষ চোখে পড়ে না। ইটের কার্ভিং-এর কাজ বিস্ময়কর। এটি কিন্তু কোনো মন্দির নয়, তাই এখানে কোনো বিগ্রহ নেই। অতীতে বার্ষিক রাসপর্বের সময়ে সমগ্র মল্লরাজ্যের যাবতীয় রাধাকৃষ্ণের বিগ্রহ এখানে একত্রিত করে মহাধুমধামে রাসোৎসব পালিত হতো। এই মন্দিরের সামনেই একটি টিকিট কাউন্টার পাবেন । মাথাপিছু ৩০ টাকার বিনিময়ে রাসমঞ্চ ঘুরে দেখে টিকিট জত্ন করে রেখে দেবেন , অন্য মন্দিরে প্রবেশ করার সময় এই একটি টিকিট দেখালেই হবে ।

রাসমঞ্চ দেখে টোটো আপনাদের নিয়ে যাবে পঞ্চ রত্ন শ্যামরায় মন্দির দেখাতে । পশ্চিমবঙ্গের যাবতীয় টেরাকোটা মন্দিরের মধ্যে এই পাঁচচূড়া বিশিষ্ট শ্যামরায় মন্দির শিল্প নৈপুণ্যে শ্রেষ্ঠত্বের দাবিদার। ১৬৪৩ খ্রিস্টাব্দে রঘুনাথ সিংহের তৈরি এই পঞ্চরত্ন মন্দিরটির সূক্ষ্ম কারুকাজ হতবাক করে দেয়। মন্দিরের দেওয়ালে পোড়ামাটিতে রচিত হয়েছে রামায়ণ, মহাভারতের মতো মহাকাব্য। বর্গাকার ক্ষেত্রের মধ্যে বৃত্তাকারে শ্রীকৃষ্ণের রাসচক্রের চিত্রে , আরো জানা অজানা অনেক ছবি দেখতে পাবেন মন্দিরের গায়ে । রাজাদের শিকার দৃশ্য ও চিত্রিত আছে মন্দিরের আনাচে কানাচে। এই মন্দিরের কাজ আপনাকে অভিভূত করবে । সময় নিয়ে মনোযোগ দিয়ে দেখবেন , প্রতিটি কারুকাজ আপনাকে আনন্দ দেবে । 
এই শ্যামরায় মন্দিরের সামনে দেখবেন দাদা দিদিরা কাঠের ও পোড়ামাটির জিনিসের পসরা সাজিয়ে বসেছেন । বিভিন্ন দামের হরেক রকম জিনিস , দেখলাম অনলাইন পেমেন্ট করারও সমস্ত ব্যাবস্থা আছে । আমরা এখান থেকে কয়েকটা মাটির কাপ ও মাটির ঘোড়া কিনেছিলাম , একটু দরদাম করতে হলেও জিনিস ভালো ।

শ্যামরায় মন্দির দেখার পর যাবেন জোড় বাংলা মন্দিরে - রাসমঞ্চে কাটা টিকিট দেখিয়েই এখানে প্রবেশ করতে পারবেন । ১৬৫৫ খ্রীষ্টাব্দে মল্লরাজ রঘুনাথ সিংহের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কীর্তি এই জোড় বাংলা মন্দির। অনেকে এটিকে কৃষ্ণরায় মন্দিরও বলেন। দুটি বাংলা চালের উপর একটি শিখর এই মন্দিরের প্রধান বৈশিষ্ট্য। এর দেওয়ালের সর্বত্র আয়তকার পোড়ামাটির ব্লকে রামায়ণ, মহাভারতের বিভিন্ন ঘটনা, শ্রীকৃষ্ণের লীলা, রাজাদের শিকার ও যুদ্ধ দৃশ্য দেখতে পাবেন । বাংলার টেরাকোটা মূর্তি শিল্পের সর্বশ্রেষ্ঠ নিদর্শন এখানে পরিলক্ষিত হয়।

এই মন্দিরের বাইরেও ছোট ছোট স্টল দেখতে পারবেন । আমরা ১ জোড়া কাঠের হরিন ও একটি মাটির জলের বোতল কিনেছিলাম। মাটির বোতলের ব্যাপারে একটু সতর্ক করে দিই । বোতলে জল রেখে খাওয়ার ইচ্ছা হলে যে বোতলের গায়ে রং দিয়ে ফুল ফলের ছবি আঁকা সেগুলো নেবেন না । রংএর তীব্র গন্ধের কারনে এতে জল রেখে আমরা একটুও খেতে পারিনি । এর থেকে সাদামাটা বোতল গুলো নেবেন , কাজে দেবে । এই মন্দিরের পাশে টিফিনের দোকান আছে , চা বিস্কুট ম, ডিমটস্ট খেয়ে নিতে পারেন ।

এরপর টোটো আপনাদের নিয়ে যাবে গড় দরজা দেখাতে
সপ্তদশ শতাব্দীর শেষের দিকে মল্লরাজ বীরসিংহ, মাকড়া পাথর দিয়ে এই গড় দরজাটি তৈরি করান , রাজার সৈন্যরা এই বিশালাকার দুর্গের ন্যায় দরজার ভিতরে লুকিয়ে থেকে শত্রু মোকাবিলা করতো । এতো বছর আগে তৈরি তবুও এখনও আশ্চর্য মজবুত এই দরজা । এখানে কোনো কারুকাজ নেই তবে দুর্গের গায়ে যুদ্ধের ইতিহাসের ছাপ দেখতে পাবেন।
এর একটু সামনেই ছোট আরেকটি পাথরের দরজা দেখতে পাবেন - এটি হল ছোট গড় দরজা । এটিও মাকড়া পাথরের তৈরি । ছোট দরজা থেকে একটু গেলেই দেখতে পাবেন এই পাথরের রথ । মল্লরাজ দ্বিতীয় রঘুনাথ সিংহ ১৩০০ শতাব্দীতে মাকড়া পাথর দিয়ে চাকাবিহীন এই রথটি তৈরি করান । সময়ের সাথে সাথে রথের কারুকাজ অনেকটা নস্ট হয়ে গেছে ।

পাথরের রথ দেখে উত্তরে ১ কিমি দূরে মদনমোহন মন্দির  দেখে আসতে পারেন । বিষুপুরের মল্লরাজ বংশের কয়েকশো বছরের উত্থানপতনের ইতিহাসে জড়িয়ে আছে জাগ্রত দেবতা মদনমোহনের নাম। বিষ্ণুপুর মদনমোহনের লীলাক্ষেত্র। লোকমুখে বহুবিচিত্র কাহিনী প্রচলিত আছে প্রাণের ঠাকুরকে ঘিরে। তখন ১৭৪৩ সাল, মারাঠা সর্দার ভাস্কর পণ্ডিত বিষ্ণুপুর আক্রমণ করেন। তৎকালীন রাজা গোপাল সিংহ মদনমোহন
ঠাকুরের ওপর বিশ্বাস রেখে প্রতিরোধের কোনো চেষ্টাই করলেন না। দুদিন বাদে ভীষণ তোপধ্বনির গর্জনে বর্গীরা বিষ্ণুপুর ছেড়ে ভয়ে পালিয়ে ছিল। ভক্তদের বিশ্বাস মদনমোহন ঠাকুরই নিজে দলমাদল কামান দেগে বর্গীদের বিতাড়িত করেছেন। একরত্ন বিশিষ্ট মদনমোহন মন্দিরটি বেশ সুন্দর। সামনের দিকটা খোপ খোপ নক্সা কাটা। এই মন্দিরের বিশেষত্ব থামের অপরূপ কারুশিল্প। গোলাকার থামে খাঁজ কাটা ত্রিমাত্রিক গঠন শৈলী অনবদ্য। পশুপাখি থেকে শুরু করে মানব-মানবী সবই মন্দির গাত্রে জীবন্ত। মদনমোহন মন্দিরের উত্তর-পূর্ব দিকে গোস্বামী পাড়ায় শ্রীনিবাস আচার্য্যের সমাধিস্থল ও নিকটেই তাঁর প্রতিষ্ঠিত রাধারমন মন্দিরও দেখে নিতে পারেন । 
এই দেখে ফেরার পথে গড় দরজার পাশেই পাবেন লালজী মন্দির ১৬৫৮ খিস্টাব্দে মল্লরাজ দ্বিতীয় বীর সিংহ এই মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন । ল্যাটেরাইটের তৈরি এই একরত্ন মন্দিরটি চারিপাশে সুউচ্চ পাঁচিল দিয়ে ঘেরা । পাঁচিলের বাইরের দিকের এই পার্কটি দেখছেন এটির নাম গড় দরজা পার্ক । এই পার্কে কিছুটা সময় কাটাতে পারেন ।

লালজী মন্দিরের উল্টোদিকে একটু এগুলে রাস্তার ধারেই দেখতে পাবেন জরাজীর্ণ রাজবাড়ী । সময় গ্রাস করেছে সমগ্র রাজবাড়িকে । ধ্বংসস্তূপ ছাড়া আর কিছুই দেখার নেই । একটু পিছনের দিকে গেলে দেখবেন হাওয়া মহল । রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বট অশ্বত্থ দখল করেছে এক কালের বিশালাকার এই মহলটিকে । সাপ খোপের উৎপাত আছে , বাচ্চা নিয়ে এদিকে না যাওয়াই ভালো ।

রাজবাড়ি ছাড়িয়ে দু'পা হাটলেই পৌঁছে যাবেন মৃন্ময়ী মাতার মন্দিরে , রাজা জগৎমল্ল স্বপ্নাদেশে মাটির তলা থেকে এই দেবীমূর্তি উদ্ধার করে ৯৯৭ খ্রীষ্টাব্দে মন্দিরে দেবী বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করেন । এই মন্দিরে এখনো নিয়মিত পূজা হয় । মন্দির প্রাঙ্গনে দুটি ডোকরা ও টেরাকোটার জিনিসের দোকান দেখতে পাবেন । কেনাকাটা করতে পারেন ।

মৃন্ময়ী মায়ের মন্দিরের উল্টদিকেই আছে রাধাশ্যাম মন্দির মল্লরাজ চৈতন্য সিংহ ১৭৫৮ খ্রীষ্টাব্দে বাংলা চালের ধাঁচে এক শিখর বিশিষ্ট ল্যাটেরাইট পাথরে এই একরত্ন মন্দিরটি রাধাশ্যামের চরণে অর্পণ করেন। প্রবল আর্থিক অনটনের মধ্যেও পূর্বপুরুষদের মন্দির নির্মাণের রীতি তিনি বজায় রেখেছিলেন। তারই ফলশ্রুতি রাধাশ্যাম মন্দির। এই মন্দিরে আপনি বিগ্রহ দর্শন করতে পারবেন ।

ফেরার পথে এই কৃষ্ণ বলরাম মন্দির দেখতে পাবেন যা সংরক্ষণের অভাবে জীর্ণদশা প্রাপ্ত হয়েছে । আর একটু এগিয়েই দেখতে পাবেন মহাপ্রভু মন্দির । এর অবস্থাও শোচনীয় ।


আরো কিছুটা এগিয়ে দেখতে পাবনে গুমগড়ঃ অনেকে ভুল করে এটাকে গুম ঘড় বলেন । এটি আসলে দরজা - জানালা বিহীন একটি চৌকো দালান বাড়ি । বলা হয় যুদ্ধ অপরাধী ও রাজ অপরাধীদের এই গুমগরে ফেলে হত্যার সাজা দেওয়া হতো । অবশ্য অনেকে মনে করেন এটা নিছক একটা বড় শস্য ভান্ডার ছিল । যাই হোক , গুমগরের সোজা রাস্তা ধরে কিছুটা এগুলেই পৌঁছে যাবেন আচার্য যোগেশ চন্দ্র পুরাকীর্ত্তি ভবন বা বিষ্ণুপুর মিউসিয়ামে । বিষ্ণুপুর সম্বন্ধে আরো ভালো করে জানতে চাইলে অবশ্যই এই মিউজিয়ামটি ঘুরে নেবেন । অনেক কিছু দেখতে ও জানতে পারবেন ।

মিউজিয়ামের ঢিল ছোড়া দুরত্বে আছে লালবাঁধ । চৌকাকৃতি সুপেয় জলের এই বিশাল সরোবরের নাম লালবাঁধ। এছাড়াও বিষ্ণুপুর জুড়ে যমুনাবাঁধ, পোকাবাঁধ, শ্যামবাঁধ, কালিন্দীবাঁধ নামের আরো কয়েকটি বাঁধ আছে । লালবাঁধের সাথে দ্বিতীয় রঘুনাথের প্রেয়সী লালবাঈয়ের নাম ওতোপ্রোত ভাবে জড়িত। অনেক রকম গল্প কথা এই বাধের সাথে প্রচলিত । অনেকে বলেন এই বাধের নিচে সুরঙ্গ আছে । অনেকে বলে রাজার সম্পত্তি পোঁতা আছে । তবে আর কিছু না হোক এখানে আপনি কিছুটা সময় বিশ্রাম নিয়ে নিতে আপ্রবেন । শীতের দিনে পিকনিকের জমজমাট আড্ডা বসে লালবাঁধের ধারে। 


বাধের উত্তর পাশের বিজয় যোগাশ্রম এবং পশ্চিম পাড়ের খানিকটা দূরে বকুলকুঞ্জের মধ্যে সর্বমঙ্গলা দেবীর মন্দিরও দেখে নিতে পারেন । শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের পদধূলিধন্য এই জাগ্রত স্থান ও সংলগ্ন ঘাট রামঠাকুরের ভাব সমাধির সাক্ষী।

লালবাঁধ থেকে টোটো আপনাদের নিয়ে যাবে রাধামাধব মন্দির ও কালাচাঁদ মন্দির । রাধামাধব মন্দির টি মহারাজ গোপাল সিংহ তাঁর জ্যেষ্ঠা পুত্রবধু ধর্মপরায়না চূড়ামণি দেবীকে দিয়ে ১৭৩৭ খ্রিস্টাব্দে  প্রতিষ্ঠা করান । একরত্ন মন্দিরটি রাধামাধবের শ্রী চরনে নিবেদিত । 

এর পাশেই দেখবেন কালাচাঁদ মন্দির - এটি ১৬৫৬ খ্রিস্টাব্দে মল্লরাজ রঘুনাথ সিংহ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত । মন্দিরের সামনের দিকে কৃষ্ণলীলা ও পুরানের দৃশ্যাবলী দেখতে পাবেন । কিছুটা সামনে এগিয়ে দেখতে পাবেন জোড় মন্দির । এই মন্দিরের পাশেই পোড়া মাটির হাট বসে । এখান থেকেও টেরাকোটার জিনিস কিনতে পারবেন ।  

এর উল্টোদিকে আছে নন্দলাল মন্দির । একচালার এই মন্দিরটিতে তেমন কোনো কারুকার্য নেই । সঠিক কোন সালে তৈরি সেটাও জানা যায়নি । তবে মন্দিরের গায়ে চুনের কাজ দেখে অনুমান করা হয় সপ্তদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি এটা তৈরি করা হয়েছে । 

এরপর টোটো আপনাদের নিয়ে যাবে দলমাদল কামান দেখতে । বিষ্ণুপুরের রাজাদের প্রতিরক্ষার জন্য কামান ব্যাবহারের প্রচলন ছিলো । বিষ্ণুপুরে আরো অনেক কামান ছিলো । বর্তমানে এই একটিই অবশিষ্ট আছে , বাকিগুলি ইংরেজ বাবুরা নিয়ে গেছেন বা নস্ট করে ফেলেছেন । এই দলমাদল কামানটি ৬৩ টি বিশালাকার লোহার আংটা ঢালাই করে তৈরি । এর ওজন প্রায় তিনশো মন । কামানের দৈর্ঘ্য ১২ ফুট আর মুখের ব্যাস ১ ফুট । এত বছর পুরানো লোহার জিনিস অথচ মরচে পড়েনি । দেখে ভালো লাগবে । আমি বাবা মামা আর মেশো এই কামানের সামনে একটা গ্রুপ ফটোও নিয়েছিলাম । 

দলমাদল কামানের পাশেই ছিন্নমস্তা মায়ের মন্দিরে । মেদিনীপুরের বিখ্যাত ব্যবসায়ী শ্রীযুক্ত কৃষ্ণচন্দ্র গুই ১৯৭৩ সালে এখানে মা ছিন্নমস্তার মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। মার্বেল ও টাইলস দ্বারা নির্মিত আধুনিক মন্দিরে মহামায়া মা ছিন্নমস্তারূপে পূজিতা। রাজস্থানের পাথরে তৈরী রক্তবর্ণ দেবীমূর্তিটি অপূর্ব। এইখানে আপনি ছিন্নমস্তা মায়ের পুজো দিতে পারেন , সমস্ত ব্যাবস্থা আছে । 

মন্দিরের উল্টোদিকে ভাত খাওয়ার হোটেল পাবেন । দুপুরের খাবার খেয়ে নিতে পারেন । 

মোটামুটি এইখানেই আপনার বিষ্ণুপুর দর্শন সম্পূর্ণ হবে । 

হাতে সময় থাকলে ছোট খাটো আরো কিছু মন্দির দর্শন করতে পারেন । তবে তেমন বিশেষ কিছু পাবেন না । পরের দিন মুকুট্মনিপুর , বা শুশুনিয়া পাহাড় বা গনগনি যাওয়ার প্ল্যান থাকলে রাত্রে থাকতে পারেন বিষ্ণুপুর সরকারী গেস্ট হাউসে  বা অন্যান্য যেকোনো হোটেলে । কিছু হোটেলের ফোন নাম্বার ডেসক্রিপশনে দেওয়া লিঙ্ক থেকে পেয়ে যাবেন । আর থাকতে না চাইলে সন্ধ্যের দিকে ট্রেন ধরে রাতের আগে হাওড়া ফেরত চলে আসতে পারবেন । বাসে করে আসতে চাইলে বিষ্ণুপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে নাইট সার্ভিস বাস পেয়ে যাবেন ।  


বিষ্ণুপুর ট্রাভেলের সম্পূর্ণ ভিডিও পেয়ে যাবেন আমাদের চ্যানেলে - এখানে ক্লিক করে দেখুন 

বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুর ভ্রমনের সম্পূর্ণ গাইড । ২৯ টি স্পট ঘুরুন ১ দিনে । জেনে নিন বিস্তারিত বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুর ভ্রমনের সম্পূর্ণ গাইড । ২৯ টি স্পট ঘুরুন ১ দিনে । জেনে নিন বিস্তারিত Reviewed by Wisdom Apps on June 12, 2022 Rating: 5

মায়াপুর ইসকন ও আশেপাশের সব মন্দির ট্রাভেল গাইড - Complete Mayapur ISKCON temple travel guide

March 26, 2021

এখানে আপনি বিস্তারিত ভাবে জানতে পারবেন কিভাবে মায়াপুর যাবেন । কি কি দেখবেন ? কোথায় থাকবেন এবং আরো অন্যান্য খুঁটিনাটি ব্যাপার ।

মায়াপুর ভ্রমণের উপর আমাদের বিস্তারিত ভিডিও দেখতে পারেন এখানে ক্লিক করে । 

এবার স্টেপ বাই স্টেপ জেনে নিন - 

মায়াপুর আসবেন কিভাবে ? 

ট্রেনে পথে এলে শিয়ালদহ থেকে কৃষ্ণনগর স্টেশন  , সেখান থেকে অটো বা ম্যাজিক গাড়ি ধরে স্বরুপগঞ্জের ঘাট । এই ঘাট থেকে নৌকায় নদী পার  করলে প্রবেশ করবেন মায়াপুরে । এটাই সবথেকে প্রচলিত পথ । অটোর ভাড়া পরবে  মাথাপিছু ২৫টাকা , নৌকা ভাড়া ২ টাকা ।  

হাওড়া থেকে ট্রেনে এলে বিষ্ণুপ্রিয়া বা নবদ্বীপ ধাম স্টেশনে নেমে নবদ্বীপ থেকে নৌকায় চড়ে মায়াপুরে আসা যায় । 

আর, বাসে বা প্রাইভেট গাড়িতে সহজেই মায়াপুর আসা যায় । কোলকাতার ধর্মতলা থেকে বাসে করে সরাসরি মায়াপুরে আসা যায় । নিজস্ব গাড়িতে এলে ৩৪ নং জাতীয় সড়ক ধরে বহরমপুর যাওয়ার রাস্তায় বাহাদুরপুর পার করার পর এই মোড়টি দেখতে পারবেন । এখান থেকে কয়েক কিমি জার্নি করলেই মায়াপুর ইস্কন মন্দিরের সামনে পৌঁছে যাবেন । যারা নদী পার করতে চান না তাদের জন্য এই পথটিই সঠিক । 


এবার জেনে নিন মায়াপুরে কি কি দেখবেন ? 

শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভুর পদধূলিতে ধন্য এই মায়াপুর ।  নদীয়া জেলার মায়াপুরের প্রাচীন নাম ছিল মিয়াপুর , এখানে এখনো হাজারো হিন্দু মুসলমান একই বৃন্তে দুটি কুসুমের মতো একসাথে বসবাস করেন ।  তাই পথ চলতে চলতে রাস্তার আসেপাশে  অজস্র মন্দির ও আশ্রমের সাথে বেশ কিছু মসজিদও দেখতে পাবেন ।  তবে মায়াপুরের প্রধান আকর্ষণ ইসকন মন্দির । বাসে বা নিজস্ব গাড়িতে এলে ইস্কনের সামনেই গাড়ি থেকে নামতে পারবেন । আমরা স্কুটারে গেছিলাম । ইস্কনের ভিতরেই দু'চাকা ও চার চাকা পার্ক করার জায়গা আছে । সামান্য ১০ টাকার বিনিময়ে এখানে বাইক রেখে প্রবেশ করলাম ইস্কন মন্দির প্রাঙ্গনে । ইস্কনের ৬ লক্ষ স্কয়ার ফুটের এই বিশাল এলাকার মধ্যে তৈরি হচ্ছে পৃথিবীর সবথেকে বড় বিষ্ণু মন্দির , আছে চন্দ্রোদয় মন্দির আর শ্রীল প্রভুপাদের সমাধি মন্দির । 


আপনি ইস্কনের মেইন গেট দিয়ে প্রবেশ করলে সবার আগে এই মন্দিরটি দেখতে পাবেন । এটি হল শ্রীল প্রভুপাদের সমাধী মন্দির । এখানে প্রবেশ করার জন্য উলটো দিকের জুতো রাখার কাউন্টারে আগে যেতে হবে । এই কাউন্টার থেকে বস্তা নিয়ে তার ভিতরে জুতো রেখে জমা দিলে আপনাকে একটি কুপন নাম্বার দেবে , সেই কুপনটিতে কত নাম্বার লেখা আছে ভালো করে দেখে নেবেন , তারপর সেটিকে জত্ন করে রেখে দেবেন । কুপন হারিয়ে ফেললে এবং কুপনের নাম্বার ভুলে গেলে জুতো নেওয়ার সময় অনেক ঝামেলা হয়ে যায় তাই অবশ্যই এখানে সাবধানতা অবলম্বন করবেন , মনে রাখবেন জুতো রাখার বা নেওয়ার জন্য কোনো টাকা লাগে না । জুতো রাখার কাউন্টারের পাশেই আছে মোবাইল রাখার কাউন্টার । এখানে মোবাইল , ক্যামেরা সব জমা রাখতে হবে । এখানে ১০টাকা লাগবে । এখানেও একটা কুপন দেবে , কুপন দেওয়ার সময় আপনার নাম লিখে নেবে । এই কুপোনটাকেও খুব সাবধানে রাখবেন । 

সব কিছু জমা দিয়ে রেলিং ধরে লাইন দিয়ে মন্দিরে প্রবেশ করতে হবে । মন্দিরে প্রবেশের আগে আপনার সিকিউরিটি চেকাপ হবে । 



 ভিতরে অনেক কিছু দেখার আছে । মন্দিরের গ্রাউন্ড ফ্লোরে প্রভুপাদের একটি পিতলের মুরতি আছে , আর সম্পূর্ণ ছাদে কাঁচের কারুকাজের মধ্যে দিয়ে মহাপ্রভুর জীবনের অনেক ঘটনা বর্ণনা করা আছে । এই সুত্রে জানিয়ে রাখি শ্রীল প্রভুপাদের প্রকৃত নাম শ্রী অভয়চরন দে , এবং ওনার জন্ম কোলকাতার এক কৃষ্ণ ভক্ত পরিবারে । ওনার ৬৯ বছর বয়সে প্রথম আমেরিকা গিয়ে কৃষ্ণ কনশাশ্নেশ প্রচার করা শুরু করেন এবং পরবর্তী মাত্র ১২ বছরের সময়কালে সারা পৃথিবীজুড়ে ভগবান কৃষ্ণের মাহাত্ম্য প্রচারে সমর্থ হন । তাঁর মৃত্যুর পর শিশ্যদের অপার পরিশ্রম এবং লক্ষ লক্ষ কৃষ্ণভক্তদের সাহায্যে আজ সারা বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশে  একাধিক কৃষ্ণ মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ।  এই মন্দিরটি বিশ্বজয়ী ভক্তিবেদান্ত স্বামী শ্রীল প্রভুপাদের সমাধি মন্দির । এর দ্বিতলে প্রভুপাদের জীবন ও কাজের উপর একটি গ্যালারী বানানো আছে , অবশ্যই সময় নিয়ে দেখবেন । সিড়ি বেয়ে মন্দিরের ছাদে চড়া যায় । সেখান থেকে দৃশ্য অসম্ভব সুন্দর । এর ভিতরে ফটো তোলা বা ভিডিও করা খুব কঠোর ভাবে নিশিদ্ধ ।

সমাধি মন্দির থেকে বেরিয়ে এসে পাশেই  ইসকনের অন্যান্য সাধু সন্তদের সমাধি ক্ষেত্র দেখতে পাবেন । দয়া করে চটি জুতো পড়ে এখানে প্রবেশ করবেন না । 

এটি দেখে নিয়ে তারপর আপনি জুতোর কাউন্টারে কুপন জমা দিয়ে জুতো এবং মোবাইল কাউন্টার থেকে মোবাইল সংগ্রহ করে মেইন মন্দির অর্থাৎ চন্দ্রোদয় মন্দিরের দিকে যেতে পারেন । 


এই হলো চন্দ্রোদয় মন্দির । এর পাশেই আরেকটি জুতো ও মোবাইল কাউন্টার দেখতে পাবেন , আগের মতোই জুতো ও মোবাইল জমা দিয়ে মেইন মন্দিরে প্রবেশ করুন । আগের মন্দিরের মতোই এখানেও সিকিউরিটি চেকাপ হবে । মন্দিরে প্রবেশ করে একপাশে অসাধারন রাধাকৃষ্ণ বিগ্রহ ও  অন্যপাশে গৌর নিতাই বিগ্রহ দেখতে পাবেন । এছাড়াও নৃসিংহ দেবের মূর্তি ও প্রভুপাদ শ্রীলের একটি ভব্য মূর্তি দেখতে পারবেন । মন্দিরের ভিতরের শীতলতা আপনার প্রান জুড়িয়ে দেবে নিশ্চিত । মন্দির সংলগ্ন কাউন্টার থেকে ভোগ নিবেদনের জাবতীয় সামগ্রী পেয়ে যাবেন । আমরা ইসকন গেলেই এখান থেকে তিন চার রকমের কেক কিনি , সম্পূর্ণ নিরামিশ এমন সুস্বাদু কেক আর কোথাও পাবেন না । অবশ্যই কিনবেন ।  

Timing of ISKCON Main mandir: 

এই মন্দির ভোর ৪-৩০ থেকে ৫টা৩০ পর্যন্ত খোলা হয়  । এই সময় মঙ্গল আরতি হয় , এরপর সকাল ৫-৩০ থেকে ৭ টা পর্যন্ত বন্ধ থাকে । সকাল ৭টায় আবার খোলা হয় , তখন দর্শন আরতী হয় , সকাল ৮টায় ভাগবত পাঠ হয় , ৮টা ৩০সে ধুপ আরতি হয় । এই সময় মন্দির খোলা থাকে । ঠিক ১১টা ৪৫সে ভোগ নিবেদন হয় আর ১২টায় ভোগ আরতি হয় ।  তারপর দুপুর ১ টার সময় মন্দির বন্ধ করে দেওয়া হয় ।   দুপুর ১টা থেকে বিকাল ৪ টে পর্যন্ত মন্দির বন্ধ থাকে । ৪টের সময় আবার মন্দির খোলা হয় , এই সময় প্রথমে ধুপ আরতি হয় , তারপর ৬টার সময় সন্ধ্যা আরতী ও ৭টা ৩০শে  ভাগবতগীতা পাঠ ও ৮টা ১৫ তে শয়ন আরতী হয় । সন্ধ্যে ৮ঃ৩০ শে মন্দির সেদিনের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয় । 

আপনি যদি সব আরতী দেখতে চান তাহলে আপনাকে অন্তত ১ দিন ইস্কন মন্দিরে ঘর ভাড়া করে থাকতে হবে । কোথায় কিভাবে থাকবেন তার বিস্তারিত ভিডিওর শেষে পাবেন । 



ইস্কনের সবথেকে বড় আকর্ষণ হতে চলেছে বৈদিক মন্দির ।এই মন্দিরের ভিতরে ১০ হাজার ভক্ত একসাথে দাঁড়িয়ে নাম সঙ্কীর্তন করতে পারবেন । ভিতরে হবে বিশালাকার গ্যালারী ।     মন্দিরটি ৬০ একর জায়গা নিয়ে তৈরি হচ্ছে , এর বিশালতা ভিডিওতে বোঝানো সম্ভব নয় । মন্দিরের চুড়ায় যে চক্র গুলি দেখতে পাচ্ছেন সেগুলো সম্পূর্ণ সোনার তৈরি । এটা পৃথিবীর সবথেকে বড় বিষ্ণু মন্দির হতে চলেছে ।  এর  বাইরের দিকে যে নীল রঙ দেখতে পারছেন সেটা আসলে  নিল মার্বেল । মন্দিরের ভিতরে ও বাইরে যে সব সাদা মার্বেলের কাজ হচ্ছে সেগুলোর অনেকটাই ভিয়েতনাম থেকে আনা । এই মন্দির তৈরির মোট খরচের অনেকটাই দিচ্ছেন ফোরড কোম্পানীর মালিক মিস্টার আলফ্রেড ফোরড ।এর কারণ জানেন ?


আসলে ফোরড কোম্পানীর মালিকের স্ত্রী একজন  হিন্দু বাঙালি মেয়ে । তাঁর নাম মিসেস শরমিলা ভট্টাচার্য । ইনি নৈহাটির মেয়ে । এবং স্বামী স্ত্রী দুজনেই ইস্কনে দিক্ষিত । মন্দিরটি  এখনও তৈরি হচ্ছে  , আশা করা যায় ২০২২ সালের মধ্যে কাজ সম্পূর্ণ হয়ে যাবে , তখন এর উপর আলাদা একটা লেখা দেওয়া হবে । এখন এর ভিতরে প্রবেশ করার বা ভিডিও করার কোনো অনুমতি নেই । 





যাইহোক , চন্দ্রোদয় মন্দির যে সময় বন্ধ থাকে সেই সময় আপনি অন্যান্য জায়গা ঘুরে দেখতে পারেন ।  ইস্কনের ভিতরে আছে গোসালা  । পায়ে হেটে , টোটোয় চড়ে  বা বলদে টানা গাড়িতে চেপে আপনি গোসালায় যেতে পারেন । আমরা এই গাড়িতে চড়ে হেলতে দুলতে গোসালায় গেছিলাম ,মাথাপিছু ভাড়া মাত্র ১০টাকা ।  চলে আসুন গোসালায় ।দেখতে পাবেন কয়েক শত গরু , কিছু ষাঁড় নিয়ে বিশালাকার এক গোয়ালঘর । এখানে আপনি ১০১ টাকার বিনিময়ে ১ টি গরুকে ১ দিনের জন্য খাওয়াতে পারেন । আর বিনেপয়সায় তাদের আদর করতে পারেন । 

তবে গোসালায় এলে অবশ্যই এখান থেকে ক্ষীর দই খাবেন । এক ভাড় ক্ষীর দইয়ের দাম মাত্র ৩০ টাকা , খেয়ে মনে হবে অমৃত খাচ্ছেন । বাড়ি নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থাও আছে । 

এছাড়াও , ঘী , মাখন , দুধ , মধু অনেক কিছু এখানে বিক্রি হয় । ভেজাল হীন হওয়া সত্বেও দাম কম । নিসচিন্তে কিনে নিয়ে যেতে পারেন । 

গোসালা ছাড়াও ইস্কনের ভিতরেই অনেক ছোট খাটো জিনিস দেখার আছে । চন্দ্রোদয় মন্দিরের পিছনের দিকে মনোরম ফুলের বাগান , সুন্দর জলের ফোয়ারা দেখতে পাবেন । একটু এগিয়ে গেলে  নামচক্র দেখতে পাবেন , এখানে ১০৮ টি পাদানি আছে , প্রত্যেকটির উপর দাঁড়িয়ে মনে মনে একবার করে মহামন্ত্র জপ করে পরের পাদানীতে যেতে হয় । এভাবে চক্রটি সম্পূর্ণ করলে আপনি ১০৮ বার জপ সম্পূর্ণ করবেন । সময় থাকলে এটা অবশ্যই ট্রাই করবেন । 


মন্দিরের কাছেই মায়াপুর ডিজিটাল তারামন্ডলে শো দেখে নিতে পারেন , সকাল ১০-১০ থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত শো চলে । ২০ মিনিটের শো । টিকিটের দাম মাথাপিছু ৫০ টাকা । 


এবার ঘুরতে হবে ইস্কনের বাইরের মন্দির গুলো । ইস্কনের বাইরে অনেক মন্দির আছে , রাস্তার ধারে ধারেই বেশি । অল্প সময়ে বেশীরভাগ মন্দির দেখার জন্য টোটো রিজার্ভ করে নেওয়াই ভালো । তবে জেনে নি কাকা কি কি ঘুরে দেখাবেন , কাকা বলুন - 

মন্দির থেকে বেড়িয়ে প্রথমে দেখতে পাবেন শ্রীকৃষ্ণ চৈতন্য মিশন , ভিতরে ঢুকে বিগ্রহ দর্শন করতে পারেন । 

এরপর দেখবেন সন্ত গোস্বামী গৌড়ীয় মঠ ও মন্দির । জগন্নাথ মন্দিরের অনুকরনে তৈরি মন্দিরটির কারুকার্য আপনাকে মুগ্ধ করবেই । 

এরপর যাবেন শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর জন্মস্থান দেখতে । সঠিক সময়ে গেলে এখানে  রাধাকৃষ্ণ  বিগ্রহ দর্শন করতে পারবেন , আর এই নিম বৃক্ষের নীচে মাতা সচির কোলে সদ্যজাত শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুকে দেখতে পাবেন । খোলা অবস্থায় এখানে ফটো তোলা নিষেধ । 

এরপর দেখবেন শ্রীবাস অঙ্গন , বাইরের ভগবান শ্রীবিষ্ণুর মূর্তি দুটি অসাধারন ,  ভিতরে প্রবেশ করে বিগ্রহ দর্শন করতে পারেন । 

এর পর পৌছাবেন শ্রীচৈতন্য মঠে , এখানে মন্দির , একটি সংগ্রহশালা ও সুন্দর রাধাকৃষ্ণ বিগ্রহ দেখতে পাবেন । এছাড়াও একটি নাট্যমন্দিরের দেওয়ালের গায়ে সুন্দর কারুকার্য করা মহাপ্রভুর জীবনী দেখতে পাবেন । এখানে একটি সুন্দর গোলাপ বাগানও দেখতে পাবেন । এখানে আপনি সাধুসঙ্গ করতে ও ভোগ নিবেদন করতে পারেন , উপযুক্ত ব্যবস্থা আছে । 

এই আশ্রমের পাশেই আছে সতসঙ্গ বিহার ,  ঠাকুর অনুকুল চন্দ্রের আশ্রম । ইচ্ছা হলে দেখতে পারেন । 

এরপর যাবেন চাঁদ কাজীর সমাধী । বলা হয় সমাধীর উপরের ঐ নিম গাছটি স্বয়ং চৈতন্যদেবের হাতে রোপন করা । 

চাঁদ কাজীর সমাধীর পাশ দিয়েই যাওয়া যায় বল্লাল সেনের ঢিপি দেখতে । এই ঢিপির ইতিহাস নিয়ে আমাদের একটি বিস্তারিত ভিডিও আছে এখানে ক্লিক করে দেখে নিতে পারেন । 

বল্লাল ঢিপি দেখার পর আবার উলটো পথে ফেরত গিয়ে ইস্কন ছাড়িয়ে স্বরুপগঞ্জের ঘাটের দিকে যাওয়ার পথে  আরো কিছু মন্দির দেখে আসতে পারেন । 

এর মধ্যে দেখবেন - পুলিন বিহারী তোরন অর্থাৎ আরেকটি শ্রী কৃষ্ণ চৈতন্য মঠ । ভিতরে সুন্দর বিগ্রহ দর্শন করতে পারেন । 

সুন্দর কারুকার্যে ভরা শ্রী চৈতন্য গৌড়ীয় মঠ ও বিগ্রহ দর্শন পারেন । 

এছাড়াও শ্রী গৌর নিত্যানন্দ মন্দির , শ্রী গোপিনাথ গৌড়ীয় মঠ  ও আরো কয়েকটি ছোট বড় মঠ ঘুরে দেখতে পারেন । 

মনে রাখবেন কোনোভাবেই একদিনে মায়াপুর ও নবদ্বিপ ঘোরা যায় না । তাড়াহুড়ো করে দুটো দেখতে গেলে কোনোটাই দেখা হবে । 

সব কিছু দেখে আবার ইসকন মন্দিরে ফেরত যেতে পারেন । সন্ধ্যেবেলা মন্দিরের পাশে মাহুত হাতি নিয়ে আসেন , হাতিকে কলা , আইস্ক্রিম খাইয়ে খুব মজা পাবেন । এছাড়াও এই সময় বিনেপয়সায় ভোগ বিতরন করা হয় । হাতে হাতে ধরে অনেকে মিলে কৃষ্ণ নামে নাচ করতেও পারবেন । আর  সন্ধ্যে ৬টায় অসাধারন সন্ধ্যে আরতী দেখতে পারেন। 


এবার খাওয়ার ব্যাপারটা জেনে নিন - 

ইস্কনে গিয়ে খাওয়া মানেই আমাদের কাছে প্রসাদ খাওয়া । ইস্কনে দুই রকমের খাওয়ার ব্যবস্থা আছে , একটা ৩০টাকার অন্যটা ৭০ টাকার । দুটই পেট ভরে খাওয়া হলেও ৩০টাকার খাবারে বেশী ভ্যারাইটি থাকে না , ভাত, ডাল, তরকারী , পটল ভাজা , খিচুরি । কিন্ত ৭০ টাকার খাওয়ারে অনেক কিছু থাকে - ভাত , ডাল , দু রকমের তরকারী , বিভিন্ন ভাজা , খিচুরী  সাথে রুটি , চাটনী , মিস্টি অনেকসময় পায়েস । এই ৭০ টাকার খাওয়ারের কুপন কিনতে হয় এই গদা ভবনের কাছ থেকে । আর ৩০ টাকার কুপোন পাওয়া যায় গেটের কাছে । আপনি জেখানেই খান , মেঝেয় বসে সবার সাথে আনন্দ করে খেতে পারবেন । 

তবে যারা ডিম মাছ মাংস না খেয়ে  একদিনও থাকতে পারেন না তাদের জন্য মন্দিরের বাইরে অনেক হোটেলের ব্যবস্থা আছে । এই হোটেল গুলোর বেশীরভাগেই থাকা ও খাওয়ার ভালো ব্যবস্থা আছে । 

ইস্কনের ভিতরে ভোগ বা প্রসাদ ছাড়া স্পেশাল কিছু ফুড পাবেন । গোবিন্দাম নামের এই রেস্টুরেন্টে বিভিন্ন ধরনের মিস্টি , স্ন্যক্স , ইডলি ধোসা ছাড়াও লাঞ্চ ও ডিনারের যাবতীয় ব্যবস্থা আছে , তবে দাম একটু বেশী । এই রেস্টুরেন্টের পাশেই পাবেন ঝালমুড়ি স্টল । একটু এগিয়ে গেলেই  ইডলি , ধোসা , ঘুগনি , ফুচকা , আখের রস ,ডাব এত  কিছুর দোকান পাবেন , তবে আমাদের ফেভারিট এই মোমোর দোকানটি , এখানকার চকোলেট মোমো খেলে মনে হবে আর কদিন ইস্কনেই থেকে যাই । রেট চার্টটা দেখে নিন । মন্দিরের বাইরে অনেক রকমের স্ট্রিট ফুড খুঁজে পাবেন , ফুচকা , ঘুগনি , রোল , চাউমিন - কোনো কিছুরই অভাব নেই  ।


এবার জেনে নিন থাকবেন কোথায় ? 

ইসকনের ভিতরে রাত কাটানোর অনেক সুন্দর ব্যবস্থা আছে । ঘর গুলো খুব পরিস্কার পরিচ্ছন্ন । ভিতরে থাকাই ভালো । যারা ইসকনের লাইফটাইম সদস্য হবেন তাদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা থাকে এবং অনেক ভবনে রাতে থাকতে কোনো টাকা লাগে না । 

ইসকনের বাইরে অনেক ছোট বড় হোটেল আছে । বিভিন্ন রকমের ভাড়া । বেশীরভাগ হোটেলেই থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা পাবেন । 


কি কি কিনবেন ? 

ইস্কনের ভিতরে অনেক রকমের দোকান পাবেন । জামাকাপড় , বিভিন্ন মূর্তি , ছবি , মালা , পেন , খেলনা এমন বহু রকমের জিনিস পাবেন । দেখবেন দেশী বিদেশী অনেক মানুষ এখানে দোকান দিয়েছেন । একটু দাম বেশী হলেও ভালো কোয়ালিটির জিনিস পাবেন । ইস্কনের বাইরে রাস্তার দু'ধার দিয়ে অনেক রকমের দোকান দেখতে পারবেন । এখানে দাম একটু কম পাবেন কিন্ত দর কশাকশি করে নিতে হবে । 


সাবধানতাঃ 

ইস্কনে গেলে কিছু জিনিস অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে নাহলে বিপদে পড়তে পারেন । প্রথমত , ভোটার কার্ড বা আধার কার্ড সাথে রাখবেন । ব্যাগে কোনোরকমের আমিষ খাবার আনবেন না । আমরা দেখেছিলাম এক ব্যাক্তি তাঁর পরিবারের সাথে ইস্কন ঘুরতে এসেছিলেন অনেকটা পিকনিক করার মানসিকতা নিয়ে , ব্যাগে রুটি আর মাংস নিয়ে এসছিলেন । তাঁকে গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় । সব খাওয়ার দূরে ফেলে আসার পরেই ঢোকার অনুমতি পান ।

আরেকটি ব্যাপার , ইসকনের ভিতরে চন্দ্রোদয় মন্দিরের পিছনে আর সমাধি মন্দিরের পাশে দুটি ফ্রী শৌচালয় আছে । এখানে স্নান, পায়খানা , বাথরুম করতে কোনো টাকা লাগে না । খুব পরিস্কার পরিচ্ছন্ন । প্রয়জনে ব্যবহার করবেন । ফাঁকা মাঠে দাড়িয়ে পরবেন না । 

আরেকটি ব্যাপার , একজন পুরুষ ও নারী একসাথে রিক্সা বা টোটোয় উঠলে তাদের সম্পর্ক কি সেটা না ভেবেই রিক্সাচালক বন্ধুরা আপনাকে বারংবার হোটেলে নিয়ে যাওয়ার চেস্টা করবে । দিদি , ভাই , বোনকে সাথে নিয়ে গেলে খুব লজ্জার সম্মুখীন হতে হয় । 


এবার জেনে নিন ফেরত আসবেন কিভাবে ? 

এক - স্বরুপগঞ্জের ঘাটে ফেরত গিয়ে ঘাট পার হয়ে অটোয় চেপে কৃষ্ণ নগর স্টেশনে চলে যেতে পারেন । 

দুই - ইস্কন মন্দিরের সামনে থেকে কৃষ্ণনগর যাওয়ার বাস পাবেন , ধুবুলিয়া ঘুরে এই বাস কৃষ্ণনগর স্টেশনে যাবে । 

তিন - মায়াপুর পেট্রোল পাম্পের পাশের রাস্তা ধরে তারিনিপুর ঘাটে চলে যান । এই হল তারিনিপুরের ঘাট । এই ঘাট পার হয়ে কৃষ্ণনগর যাওয়ার অটো পেয়ে যাবেন । 


মায়াপুর ভ্রমণের উপর আমাদের বিস্তারিত ভিডিও দেখতে পারেন এখানে ক্লিক করে । 



মায়াপুর ইসকন ও আশেপাশের সব মন্দির ট্রাভেল গাইড - Complete Mayapur ISKCON temple travel guide মায়াপুর ইসকন ও আশেপাশের সব মন্দির ট্রাভেল গাইড -  Complete Mayapur ISKCON temple travel guide Reviewed by Wisdom Apps on March 26, 2021 Rating: 5

কোলকাতার কাছকাছি ৯ টি অফবিট পিকনিক স্পট - অল্প খরচ , আরাম বেশী

February 12, 2021

 

1. বিশ্রাম বাগানবাড়ি

ইছামতী নদীর ধারে বাগানবাড়ি বিশ্রাম। নামেই আরাম! খুব বেশি দূর নয়৷ যেতে হবে টাকি। পিকনিকের জন্য আদর্শ। পিকনিকের মাঝে ঘুরে আসা যায় মাছরাঙা দ্বীপ। খুব রােমাঞ্চকর জানি! আগে বলা থাকলে খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা করে দেয়। নিজেরাও রান্নার লোক নিয়ে যেতে পাঁব্রেন। ভাড়া- রাত্রিবাস করলে ছাবল বে ৬৫০ টাকা। 

পিকনিকের জন্য ভাড়া ৭২৫০ টাকা। যােগাযােগ: 09007012271


2. নন্দী বাগানবাড়ি

ব্যারাকপুরের কাছেই দেবপুর। ছ'বিঘা জমির ওপর গড়ে উঠেছে চমৎকার এক পিকনিক স্পট-- নন্দী বাগানবাড়ি। আছে গাছগাছালি ঘেরা দোতলা বাংলাে। উঁচু পাঁচিলে ঘেরা। মরশুমি ফুলে ভরে ওঠে বাগান। ফুলের জলসায় বেশ লাগে নন্দী বাগানবাড়ি! আছে দিঘিও। তার পাড়ে বসে গল্পগুজবে কেটে যাবে পিকনিকের অলস দুপুর। কিংবা একাকী বসে থাকতেও বেশ লাগে। ছােটদের জন্য ব্যবস্থা ভিন্ন। পিকনিকের অবসরে একফাঁকে ঘুরেও আসতে পারেন গান্ধীঘাট, মঙ্গল পান্ডে উদ্যান। 

শনি, রবি এবং ছুটির দিন ভাড়া- ১২০০০, অন্যান্য দিন ১০০০০ টাকা। বারাসত-ব্যারাকপুর রােড ধরে দেবপুকুর ন'কিমি। যােগাযোগ: 09883394992.



3. পুস্পবন 

শীতকালে পিকনিকের অন্যতম সেরা এবং জনপ্রিয় জায়গা ডায়মন্ড হারবার। সেখানেই হয়েছে চমৎকার এই পিকনিক স্পট পুষ্পবন । অপূর্ব। গাছগাছালি আর মরশুমি ফুলের মেলা। পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে পঙ্গ। শীতের হিমেল হাওয়া গঙ্গার জলস্পর্শে আরও হিম হয়ে যখন শরীর ছুঁয়ে যায় তখন এক অদ্ভুত অনুভূতি হয়ে শিহরন জাগায়। গঙ্গার জলে বিলি কেটে দেয় উলুরে হিমেল বাতাস! পুষ্পবনের অদূরেই কেল্লার খগুহ। পগি আর হংলেঞ্জ আমলে তৈরি। পিকনিকের অবসরে ঘুরে এলে ভাল লাগবে। পুষ্পবনে পিকনিক স্পট দু'টি। ভাড়া'- ৪০০০ এবং ৫০০০  হাজার টাকা। ব্যাসাঞ্জ বাথ সহ দল।  যােগাযােগ: জয়ন্ত চৌধুরী, ফোন- 09831039032, যেতে হবে শিয়ালদা থেকে ডায়মন্ড হারবার লােকালে ডায়মন্ড হারবার নেমে টাটাতে ৭৬ নম্বর বাসস্ট্য। মনুয়া হােটেলের বিপরীতে পুষ্পবন। সড়কপথে ডায়মন্ড হারবার যাওয়ার রাস্তা।


4. বনকাটি

অজয় নদীর ধারে ছােট্ট মনােরম এক গ্রাম বনকাটি। পশ্চিম বর্ধমানের বাংলার এই গ্রামে টেরাকোটা মন্দির আর পিতলের রথ মুগ্ধ করবেই। যেমন মুগ্ধ করেছিল শিল্পাচার্য নন্দলাল বসুকে। গ্রাম বাংলার প্রায় সব গ্রামেই একটা চণ্ডীমণ্ডপ আর কালীতলা পাওয়া যায়। এই গ্রামেও তার অন্যথা নেই। এখানে রেখদেউল আর আটচালার মন্দির, পঞ্চরত্ন মন্দির দেখলে বিস্মিত হতে হয়! শুধু স্থাপত্য নয়, মন্দির-গায় টেরাকোটার কাজ দেখতে দেখতে বিস্ফারিত হবে চোখ! রামায়ণ, মহাভারত, রাধাকৃষ্ণর নৌকাবিলাস, ইংরেজ চরিত্রের সঙ্গে ওই আমলের টমটম গাড়ি-সহ আর কত কী রয়েছে পােড়ামাটির কাজে! এইসব চাক্ষুষ করার সময় ফিরিয়ে দেবে সেকালে। সেইসব শিল্পীদের কাছে যাঁরা পােড়ামাটিতে ফুটিয়ে তুলেছিলেন এইসব শিল্পকর্ম। অবাক করবে সুদৃশ্য পিতলের রথটি! গড় জঙ্গলের কাছেই বা এলাকার মধ্যেই বনকাটি। এই গড় জঙ্গলের গভীরে শ্যামারূপার মন্দির। দুর্গার এক রূপ। মন্দিরের আছে এক মস্ত সুড়ঙ্গ। এই সুড়ঙ্গটি ব্যবহার করতেন দেবী চৌধুরানি। জানা যায়, সুড়ঙ্গটি গড় জঙ্গলের গভীরে শুরু হয়ে শেষ হয়েছে দুর্গাপুর সিটি সেন্টারে। তবে এখন এই সুড়ঙ্গ-মুখ বন্ধ। গড় জঙ্গলে মুক্ত ময়ূর ঘুরে বেড়ায়। ঘেরাটোপে রয়েছ ৭০-৭৫টি হরিণের দল। অজয় নদী আর গড় জঙ্গলে মােড়া জায়গাটি বেশ লাগে ছুটি কাটানাের জন্য।

কীভাবে যাবেন: কলকাতা থেকে বনকাটির দূরত্ব প্রায় ১৭৬ কিমি। দুর্গাপুর এক্সপ্রেস ধরে বর্ধমান, পানাগড় হয়ে দার্জিলিং মােড়। এখান থেকে ১৮ কিমি এগারাে মাইল বাসস্ট্যান্ড। এখান থেকে বাঁদিকে ন'কিমি দেউল। দেউল থেকে বনকাটি পাঁচ কিমি। 

কোথায় থাকবেন: দেউল পার্ক রিসর্ট, কটেজের ভাড়া ১৬৮০ টাকা, এসি ডাবল বেড ১২৬০ টাকা, নন এসি ৮০০ টাকা, পাঁচ শয্যার ঘর ১৫০০ টাকা, ছ’শয্যার ঘর ২০০০ টাকা, ১৫ শয্যার এসি ঘর ৫০০০ টাকা, নন এসি ৪৫০০ টাকা। 


5. মন নিয়ে

ভাবছেন পরিচালক সলিল সেনের উত্তমকুমার-সুপ্রিয়া অভিনীত ছবির কথা বলছি। না, তা একেবারেই নয়। এটি হল পিকনিকের জায়গা-- মন নিয়ে। রােম্যান্টিক নাম। জায়গাটিও বেশ রােম্যান্টিক। পিকনিকে গিয়ে আরও রােম্যান্স জাগবে যখন দেখবেন আস্ত একটা সুইমিং পুল আছে আপনার অপেক্ষায়। এমনটাই আছে দত্তপুকুর শিবালয় কবরখােলায় 'মন নিয়ে গার্ডেনে। পাহাড়, ঝরনাও আছে। সবই কৃত্রিম। পুরাে বাগানটাই লন। অভ্যাগতদের জন্য ফুটে থাকে কতশত রং-বেরঙের ফুল! গাছগাছালির ছায়ায় রােদুরের আঁকিবুকি কাটা। মাঠে লুটোপুটি খায় রােদুর গা-ভিজিয়ে দিন লনের রোদুরে । দিঘির পাড়ে বসে গল্পগুজবও করতে পারেন। তবে সবকিছুই কোভিড নিয়ম মেনে। পিকনিক স্পটের সঙ্গে দোতলার একতলাটি দেওয়া হয়। ভাড়ার কোনও হেরফের নেই। প্রতিদিনই ভাড়া- ৩২৫০০ টাকা। বারাসত ডাকবাংলাের মােড় কৃষ্ণনগর রােড ধরে কমবেশি ১১ কিমি। 

যোগাযােগ: 09831789014.


6. নীলদীপ গার্ডেন

সবুজের সমারােহে নীলদীপ গার্ডেনের রূপ-সৌন্দর্য ফেটে পড়েছে। গাছগাছালির পাতার ফাঁকে রােদুরে আলােছায়ার আলপনা দেয়! মরশুমি ফুলের ওপর রােদ এসে খেলা করে। কতসব রঙিন ফুল ফুটে আনন্দ দান করে অতিথিদের। সবমিলিয়ে প্রকৃতির মাঝে। অপরূপা নীলদীপ গার্ডেন। চড়ুইভাতি এসে সময় কাটানাের আদর্শ জায়গা এই বাগিচা । ছােটদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা। তাদের বিনােদনের ব্যবস্থা অাছে। নীলদীপের আছে নিজস্ব রেস্তরাঁ। আগে বলে রাখলে ব্রেকফাস্ট টু লাঞ্চ সব মিলবে। ভাড়া- শনি, রবি এবং ছুটির দিন ১৪০০০ টাকা, অন্যান্য পি ১০০০০ টাকা। 

যোগাযােগ: শ্রদীপ ঘােষ, ফোন- 09890981827, 

শিয়ালদা থেকে বারুইপুর লােকালে বারুইপুর নেমে অটোতে স্লোগাইলপুকুর মােঞ্চ, কাছেই নীলগী গার্ডেন। সড়কপথে বাইপাস ধরে বারুইপুর শেষে জনদিকে আমতলার রাস্তা সেখান থেকে জোগাইলপুকুর মােড়। ল্যান্ডমার্ক হল আই হসপিটাল।


7. নহবত 

সোনারপুরে পিকনিকের ছোট্ট এক চমৎকার জায়গা। নহবতের সঙ্গে বাঙালির চিরন্তন সম্পর্ক। গাছে গাছে ঘেরা নহবত মরশুমি ফুলে হাওয়া। এই বাগানবাড়িতে রয়েছে বিশ্রামঘর, খাওয়ার ঘর ইত্যাদি। পিকনিকের ফাঁকে ঘুরে আসা যাবে বহুকালের পুরনাে। লৌকিক দেবতা পঞ্চানন্দের মন্দির। স্থানীয়দের বিশ্বাস ইনি খুব জাগ্রত দেবতা। আছে বিপত্তারিণী মায়ের মন্দির। ইনিও খুব জাগ্রত। শিয়ালদা সাউথ থেকে লােকালে সােনারপুর নেমে অটোতে বােসপুকুর মােড়। পাশেই নহবত। সড়কপথে রাষ্ট্রপুর হয়ে আসতে হবে। এখান থেকে মাত্র এক কিমি। ভাড়া ৩০০০ টাকা। কোভিভের জন্য চল্লিশজনের বেশি অনুমতি নেই। যােগাযোগ: 09830781988.



8. চাণক্যপুরী 

না, না, নাম শুনে ঘাবড়ে যাওয়ার কিছু নেই। কাছেই এই পিকনিক স্পট। সড়কপথে বাইপুর থেকে ক্যানিং ব্লোড় ধরে যেতে হবে। আর শিয়ালদা সাউথ থেকে বারুইপুর স্টেশন নেমে কানিং রোড় ধরে আট কিমি । চাণকপুরীতে আহে মুগ্ধ করা ফুলের বাগান। নৌবিহারের ব্যবস্থা আছে। ছোটদের জন্য রয়েছে বিনোদনের আলাদা ব্যবস্থা । 

ভাড়া- ১৫০০০ এবং ১৮০০০ হাজার টাকা। যােগাযােগ:

098311:38502.



9. ধুতুৱদহ

বিদ্যাধরী নদীর ধারে চমৎকার একটি রিসর্ট। গাছগাছালির সবুজ আর আকাশ নীলে মাখামাখি। চারিপাশে মনকাড়া প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। এখানে নিশিযাপন করা যায়। পিকনিকও করা যায় । দু' একটা দিন কাটাতে মন্দ লাগবে না। মনের আনন্দে পিকনিক করতে বেশ লাগে । 

এখানে পিকনিক করতে হলে ওদের কাছে খাবার খেতে হবে । রাত্রিযাপন করলে দিতে হবে ২৫০০ টাকা আর গাছবাড়িতে থাকলে দিতে হবে ৩৫০০ টাকা । পিকনিকের জন্য লাগবে মাথাপিছু ৯৯৯ টাকা আর রাত্রিযাপন করলে মাথাপিছু ১২০০ টাকা । পাওয়া যাবে ব্রেকফাস্ট , লাঞ্চ , সন্ধ্যের স্ন্যাক্স ও রাতে থাকলে ডিনার । লাঞ্চ বিভিন্ন রকম থাকে তবে গলদা চিংড়ী , কচি পাঠার ঝোল , ভেটকি - সহ আরো অনেক কিছু পাওয়া যায় । বাইরে থেকে খাবার নিয়ে প্রবেশ নিশেধ । নিজেদের রান্না করে খাওয়ার অনুমতি নেই ।সায়েন্স সিটি থেকে ৪১ কিমি দূরে এই ধুতুরদহ । ম্যাজিক গাড়ি পাওয়া যায় । 

যোগাযোগ করতে পারেন- ৯৮৩০৯৮৫৯৬৮ 
 




কোলকাতার কাছকাছি ৯ টি অফবিট পিকনিক স্পট - অল্প খরচ , আরাম বেশী কোলকাতার কাছকাছি ৯ টি অফবিট পিকনিক স্পট - অল্প খরচ , আরাম বেশী Reviewed by Wisdom Apps on February 12, 2021 Rating: 5

সুন্দরবনের ইতিহাস ও সম্পূর্ণ ট্রাভেল গাইড

August 23, 2020

 সুন্দরবন ঃ 

মাত্র ১ রাত ২ দিনে খুব ভালোভাবে সুন্দরবন ঘুরে আসার গাইডলাইন পেয়ে যাবেন এই ভিডিও থেকে - ইউটিউব থেকে ভিডিওটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন 

দক্ষিণ ২৪ পরগনার দক্ষিণ আর উত্তর ২৪ পরগনার দক্ষিণ-পূর্ব অংশ জুড়ে সমুদ্রগামী অসংখ্য নদনদীর মাঝে ছােটো ছােটো দ্বীপ জুড়ে গড়ে ওঠা গভীর অরণ্য সুন্দরবন বলে পরিচিত। সম্ভবত সুন্দরী গাছের প্রাচুর্যের জন্যই নাম হয়েছে সুন্দরবন। সমুদ্রের জোয়ারভাটায় এখানকার জল ও মাটি লবণাক্ত। মূল ভূখণ্ড আর দ্বীপের মধ্যে রয়েছে অসংখ্য খাল-খড়ি। চারদিকে গভীর জঙ্গল।

সুন্দরবন চিরদিন এইরকম জঙ্গল ছিল না। এখানে চাষবাস হতাে। জনপদের নানান নিদর্শন পাওয়া গিয়েছে। তখন এখানে ছিল মিষ্টি জলের পুকুর । কিন্তু কালক্ৰমে মিষ্টি জলের প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। সমুদ্রের নােনা জলে মাটি লবনাক্ত হয়ে ওঠে। এই মাটিতে জন্ম হয় গরান, গেওয়া, ধুন্দল, সঁদুরী, ক্যাওড়া, গর্জন, গােলপাতা গাছ। একে বলা হয় বাদাবন বা ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট। এই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে জনশূন্য হয়ে যায় সুন্দরবন অঞ্চল। কিন্তু ইংরেজ রাজত্বে জঙ্গল কেটে ধীরে ধীরে জনবসতি গড়ে ওঠে। তাছাড়া ইংরেজদের অত্যাচারেও মেদিনীপুরের নানা প্রান্ত থেকে এখানকার নিরাপদ আশ্রয়ে চলে আসেন বহু মানুষ। ধীরে ধীরে শুরু হয় কৃষিকাজ, মৎস চাষ। প্রকৃতি আর মানুষের পারস্পরিক সম্পর্কের উপর ভিত্তি করে জন্ম নেয় নানান দেবদেবী—বনবিবি, দক্ষিণরায়, কালুরায়, পীরগাজি। 

সুন্দরবনের বিপদসঙ্কুল অরণ্যের মধ্যে রয়েছে নানান প্রজাতির বন্যপ্রাণী। সৌন্দর্যে আর হিংস্রতায় সকলকে ছাপিয়ে গিয়েছে রয়েল বেঙ্গল টাইগার। বিশ্বে এর কোনও তুলনা নেই। ২০০১ খ্রিঃ ব্যাঘ্ৰসুমারিতে এখানে বাঘের সংখ্যা ছিল ২৬৩। দেশের আর কোনও অরণ্যে এত বাঘ নেই, এছাড়া এখানে রয়েছে বনবিড়াল, শুয়াের, বাঁদর আর অসংখ্য হরিণ। নদীতে রয়েছে বিশাল আয়তনের সব কুমির। আর গােটা সুন্দরবন জুড়ে পাখির মেলা।  লঞ্চে বিভিন্ন ওয়াচ টাওয়ার যাতায়াতের পথে জলে বা জঙ্গলে বাঘের দর্শন পাওয়া নিতান্তই ভাগ্যের ব্যাপার । বাঘ ঘুরে বেড়ায় জলে জঙ্গলে।

তবে বাধ দেখা না গেলেও দেখা যায় হাজার পানকৌড়ি, মাছরাঙ্গা, বক, কোর্টেবক, শামুকখােল, মাছধরা ঈগল, সাধক, উক। সুন্দরবনের গহন অরণ্যে বাইরের মানুষ প্রবেশ করতে পারে না। সামান্য অসর্তকতা মানে নিশ্চিত মৃত্যু। স্থানীয় মানুষ যারা জঙ্গলে যায় মধু ভাঙতে, কাঠ আনতে, মাছ ধরতে, তাদের বৈচিত্র্যে ভরা জীবন এই সুন্দরবনের আকর্ষণ পর্কযটকদের কাছে কিছু কম নয়। তবে অন্য সব অরণ্য থেকে সুন্দরবন ভ্রমণ একেবারেই স্বতন্ত্র। এখানে জঙ্গলে ঘােরার কোনও সুযোগ নেই। নদীপথে লঞ্চ বা স্টীমারে বসে দর্শন করতে হয় দ্বীপময় সুন্দরবন। ২৫৮৫ বর্গ কিমি অঞ্চল জুড়ে গড়ে ওঠা অরণার মধ্যে রয়েছে ছােটো-বড়ো প্রায় ১০০টি ধাপ। এর মধ্যে প্রায় ৩০টিতে রয়েছে জনবসতি। ১৯৮৪ সালে ঘােষিত জাতীয় উদ্যান সুন্দরবন। 

বিভিন্ন ওয়াচ টাওয়ারের পাশেই রয়েছে বনবিবি, বনের অধিষ্ঠাত্রী দেবী। তিনি বাঘের আক্ৰমণ থেকে মানুষকে রক্ষা করেন। যারা আসলে কাঠ কাটতে, মধু আনতে বা মাছ ধরতে যান সকলেই যাত্রার প্রাক্কালে বনবিবির পূজা করেন। জঙ্গলের মধ্যেও রয়েছে বনবিবির থান। 

সুন্দরবন ভ্রমণ বলতে ক্যানিং সােনাখালি/গদখালি বা গােসাবা থেকে সজনেখালি , নদীর তীরবর্তী অঞ্চল। জায়গার নামের সাথেই জড়িয়ে রয়েছে বেহুলা-লখিন্দরের কাহিনি। রয়েছে ৪০০ বছরের প্রাচীন মন্দিরের ধ্বংসপ। ওয়াচ টাওয়ারের কাছেই রয়েছে । 

মধ্যে প্রতি বছরই কিছু কিছু মানুষ বাঘের হাতে মারা পড়ে। বর্তমানে ওয়ার্ল্ড ন্যাচারাল হেরিটেজ সাইটের অন্তর্ভুক্ত। সুন্দরবনের গড় তাপমাত্রা ৩৩-২০° সে। বার্ষিক বৃষ্টিপাতের গড় ১৯২১ মিমি। সুন্দরবন মাঝে মাঝেই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কবলে পড়ে। এর ফলে কখনাে-সখনাে বেশ কিছু দ্বীপ জলের তলায় হারিয়ে যায় ফলে সমগ্র দ্বীপের মানচিত্রের পরিবর্তন ঘটে। গােমতী আর পিচখালি নদীর সঙ্গমে সুন্দরবনেরই এক অংশ সজনেখালি দ্বীপ। এখানে মানুষজনের বসতি নেই। লজের কাছেই রয়েছে কচ্ছপ পুকুর, কুমির পুকুর, কামট পুকুর। বিকালে খাবার-দেওয়ার সময় সৃষ্টি হয় আকর্ষণীয় দৃশ্য। খাবারের লােভে কুমির পুকুরের পাড়ে মাঝে মাঝেই ভিড় করে হরিণের দল। এছাড়াও সজনেখালি থেকে দেখে নেওয়া যায় প্রকৃতি বীক্ষণ কেন্দ্র, বনবিবির মন্দির আর মিউজিয়াম। 

এখান থেকে ভটভটিতে যাওয়া যায় পাখিরালয়। জুন থেকে অক্টোবর দ্বীপ জুড়ে পাখির জলসা বসে যায়। রং বেরঙের হাজার হাজার পাখি থাকে জলে, ডাঙায়, গাছে। আর আছে অসংখ্য প্রজাপতি, তারা যেন হাজার রঙের রামধনু। তবে সব কিছুই প্রত্যক্ষ করতে হয় জলযান থেকে।

সজনেখালি থেকে ৪৫ মিনিটের লঞ্চযাত্রায় পৌঁছানাে যায় সুধন্যখালি ওয়াচ টাওয়ার। এখান থেকে দেখা যায় অরণ্যের দৃশ্য। সংলগ্ন মিষ্টি জলে পুকুরে মাঝে মাঝেই দেখা যায় জন্তু জানােয়ারদের। তবে হরিণ, কুমির, বাঁদরের দেখা মিললেও সুন্দরবনে বাঘ দেখতে পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার।

সুন্দরবনে অরণ্য ছাড়াও রয়েছে লৌকিক দেবতার আকর্ষণ। সজনেখালি ট্যুরিস্ট লজের নানান অঞ্চলে রয়েছে বাঘের দেবতা দক্ষিণ রায়ের মন্দির, পীরের দরগা।  মিষ্টি জলের পুকুর। বনকর্মীদের বক্তব্য দুপুর বা বিকালের দিকে বাঘ জল খেতে আসে এখানে। এখানে কোর এরিয়া বা বাঘের আবাস। নদীর দু'পাশে মাইলের পর মাইল হেতালের ঝোপ। জোয়ারের সময় জলে ঢাকা পড়ে যায় দ্বীপ। গাছপালা সব অর্ধেক জলের তলায়। সুন্দরবনের এই সব গহন অরণ্যের আলাদা একটা সৌন্দর্য আছে। বাঘের দেখা না মিললেও এই অরণ্যের গা ছমছমে পরিবেশ, প্রকৃতির ব্যাপ্ত নিস্তব্ধতা, বিচিত্র দর্শন গাছপালা, পাখির ডাক, এক অন্য মায়াময় জগৎ সৃষ্টি করে, যা এক পরম পাওয়া, অনন্য অভিজ্ঞতা।

বুড়িরডাবরি ওয়াচ টাওয়ারটি সজনেখালি থেকে বেশ কিছুটা দূরে বলেই পর্যটকের আনাগােনা বেশ কম। তবে রায়মঙ্গল ভিউ পয়েন্টটি বেশ জনপ্রিয়। রায়মঙ্গল নদীর ওপারে বাংলাদেশের সুন্দরবন এলাকাও দৃশ্যমান এখানে থেকে। 

দোবাকি ওয়াচ টাওয়ারের প্রধান আকর্ষণ ক্যানােপি ওয়াক। মাটি থেকে প্রায় ২০ ফুট উপরে আধ কিমির বেশি হাঁটা পথে উপর থেকেই দেখা যায় হরিণের দলের ছােটাছুটি, রয়েছে মিষ্টি জলের পুকুরও। বসিরহাট রেঞ্জের ঝঙ্গাখালি ওয়াচটাওয়ার-এ পর্যটক সমাগম বেশ কম। তবে বনকর্মীদের মতে বাঘ দেখতে পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এখানে রয়েছে বনবিবির মন্দির ও মিষ্টি জলের পুকুর। ৫০মিটার উঁচু বনিক্যাম্প ওয়াচটাওয়ারটি সুন্দরবনের উচ্চতম, সম্ভবত সুন্দরতমও। সজনেখালি থেকে প্রায় ৬ ঘন্টার লঞ্চযাত্রায় পৌঁছানাে যায় বনিক্যাম্প। বিদ্যুৎ না থাকলেও রয়েছে থাকার ব্যবস্থা।

সুন্দরবন ভ্রমণের অন্যতম আকর্ষণ ভগবতপুর কুমির প্রকল্প। নােনা জলের কুমির প্রজননের উদ্দেশ্যে ১৯৭০ সালে চালু হয় এই প্রকল্প। নামখানা থেকে জলপথে প্রায় আড়াই ঘন্টার দূরত্বে লােথিয়ান দ্বীপের কাছে সপ্তমুখী নদীর মােহনায় এই কুমির প্রকল্প। 

নামখানা থেকে ফেরি লঞ্চে ২০ কিমি দূরে ললাথিয়ান দ্বীপের ভাগবতপুরে গড়ে উঠেছে কুমির প্রকল্প। এখানে কুমিরের ডিম ফুটে বাচ্চা হচ্ছে। ৩ বছর পর্যন্ত কুমিরদের এখানে রাখা হয়। এখানে দেখা যায় কোমর জলে নেমে চিংড়ির পােনা ধরছে ছেলে-মেয়েরা। বিশাল বাদাবন, বৈচিত্র্যময় খাড়ি, নদী, তার জোয়ার-ভাটা, হিংস্র শ্বাপদ প্রতিকূল প্রকৃতির মাঝে মানুষের নিরন্তন জীবন সংগ্রাম ও গ্রাম্য লােকসংস্কৃতি সুন্দরবনকে যথার্থ অর্থেই সুন্দর করেছে।

সুন্দরবন ভ্রমণের সবচেয়ে ভাল সময় অক্টোবর থেকে মার্চ। এই সময় নদী অপেক্ষাকৃত শান্ত থাকে । 


বিঃ দ্রঃ মাত্র ২ দিন ১ রাতে খুব মজা করে সুন্দরবন ঘুরে আসতে পারবেন । সুন্দরবন ভ্রমনের এই ভিডিওটি থেকে আরো বিস্তারিত তথ্য পেয়ে যাবেন ভিডিওটি দেখতে - এখানে ক্লিক করুন 








সুন্দরবনের ইতিহাস ও সম্পূর্ণ ট্রাভেল গাইড সুন্দরবনের ইতিহাস ও সম্পূর্ণ ট্রাভেল গাইড Reviewed by Wisdom Apps on August 23, 2020 Rating: 5

অমৃতসর - সংক্ষিপ্ত ইতিহাস ও ভ্রমন গাইড

August 23, 2020

 অমৃতসরের ইতিহাস 


পর্যটকদের কাছে পাঞ্জাবের প্রধান আকর্ষণ অমৃতসর। পাকিস্তান সীমান্ত (ওয়াঘা) থেকে মাত্র ১৬ মাইল (২৯ কিমি) দূরে এই শহর। পাঞ্জাব সংস্কৃতি ধর্মের প্রাণকেন্দ্র। রাজধানী চন্ডিগড় হলেও স্বাধীনােত্তর কাল থেকেই পাঞ্জাবের প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ শহর এই অমৃতসর। একসময় কাবুল, কাশ্মীর ও তিব্বত থেকে ভারতে বাণিজ্যের প্রবেশপথ ছিল এই শহর। চন্ডিগড়ের পরেই পাঞ্জাবের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই শহরের জনসংখ্যা প্রায় চার লক্ষ। বিশ্বের সমস্ত শিখ সম্প্রদায়ের কাছে পবিত্রতম শহর। এর উৎপত্তি নিয়ে রয়েছে জনশ্রুতি। গুরু নানক শিষ্যদের নিয়ে চলেছেন দেশভ্রমণে। চলতে চলতে এক নির্জন প্রান্তরে এসে পড়লেন। দীর্ঘ পথশ্রমে তৃষ্ণার্ত সকলে। নানক এক শিষ্যকে বললেন জলের সন্ধান করতে। শিষ্য কিছু দূরে গিয়ে দেখলেন কাছেই পুকুর কিন্তু এক ফোঁটা জল নেই তাতে। শিষ্য ফিরে এসে নানককে বলতেই তিনি বললেন এবার যাও জল পাবে। পুকুরে গিয়ে শিষ্য অবাক। জলে ভরে গিয়েছে পুকুর। কি অপূর্ব স্বাদ তার জলের, ঠিক যেন অমৃত। সকলে নাম দিলাে অমৃত সায়র (সায়র অর্থ পুকুর)। ৪র্থ শিখ গুরু রামদাস এখানে মন্দির গড়ে তােলেন। পরবর্তীকালে সম্রাট আকবর (১৫৭৭) দিঘি আর জমির অধিকার দান করেন রামদাসকে। রামদাসের শিষ্য, ৫ম গুরু অর্জুন সিং এই সরােবর সংস্কার করে তার মাঝে গড়ে তােলেন হর মন্দির। অমৃত সায়রের নামে অঞ্চলের নাম হয় অমৃতসর। সেসময় গুরু অজুন সিংহ রচনা করেন গুরু গ্রন্থ সাহিব। এই অমৃতসরকে কেন্দ্র করেই শুরু হয় শিখ ধর্মের নবজাগরণ। মােগল শক্তি বারংবার আঘাত হেনেছে। অমৃতসর দখল করে ধ্বংস করেছে মন্দির। আবার নতুন করে গড়ে উঠেছে মন্দির। আজকের সুবিশাল হর মন্দির গড়ে তােলেন পাঞ্জাব কেশরী রণজিৎ সিং (১৮৩০)। সােনার পাতে মুড়ে দেন মন্দিরের গম্বুজ। সেই থেকে এর নাম হয় স্বর্ণ মন্দির, অনেকে বলেন দরবারা সাহিব। অমৃতসরের প্রধান আকর্ষণ স্বর্ণমন্দির। বিশাল প্রাঙ্গণ জুড়ে মন্দির, এর বিশালত্ব বৈভব দেখে বিস্ময়ে অভিভূত হতে হয়। মন্দিরের দেওয়ালে নানান কারুকার্য। সরােবরের চারদিকে মার্বেল পাথরের প্রদক্ষিণ পথ, প্রবেশ পথ চারটি। অলঙ্কৃত রুপাের দরজা। মন্দিরের অভ্যন্তরে রয়েছে সােনা-রুপাে, হাতির দাঁতের কাজ। মন্দিরের প্রবেশদ্বারে আকাল তখত-এ রয়েছে। শিখ গুরুদের ব্যবহৃত অস্ত্রশস্ত্র, মণিমুক্তা। মণিমাণিক্যখচিত চন্দ্ৰতপ বিস্ময়ের সৃষ্টি করে। সরােবরের পশ্চিম তীর থেকে সরু পথ জলের উপর দিয়ে গিয়েছে মূল মন্দিরে। তিনতলা মন্দিরের দরবারা সাহেবে রয়েছে শিখ ধর্মের পবিত্র গ্রন্থ শ্রীগুরু গ্রন্থসাহিব। এখানে কোনও দেবতা নেই, নেই কোনও পূজা পাঠের অনুষ্ঠান। গুরু গােবিন্দর সংকলিত হাতে লেখা গ্রন্থসাহিবকে এখানে পবিত্র জ্ঞানে শ্রদ্ধা জানানাে হচ্ছে। দিবারাত্র চলেছে পাঠ। দিনের বেলায় সর্বসাধারণের প্রদর্শনের জন্য স্বর্ণমন্দিরে রাখা হয় গ্রন্থসাহিব, রাতের স্বর্ণখচিত রুপাের পালকিতে শােভাযাত্রা করে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় আকাল তখতে। পরদিন আবার একইভাবে নিয়ে আসা হয় স্বর্ণমন্দিরে। স্বর্ণমন্দিরের অদূরে সরােবরের ধারে পাঁচতলা আকাল তখত। যার অর্থ দেবতার সিংহাসন ভবন। এখান থেকেই শিখ ধর্মের যাবতীয় নিয়ম নীতি নির্ধারণ হয়। শিরােমণি গুরুদ্বার প্রবন্ধক কমিটির যাবতীয় কার্য পরিচালনা হয় আকাল তখত থেকে। ১৯৮৪-এ এই আকাল তখতেই গড়ে উঠেছিল সন্ত জারনেল সিং ভিনদ্রানওয়ালার নেতৃত্বে উগ্রপন্থীদের ঘাঁটি। ভারতীয় ফৌজ এক রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্যে মুক্ত করে আকাল তখত। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সংস্কার করে আবার নতুন করে গড়ে উঠেছে তখত। তখতের বিপরীতে রয়েছে লঙ্গরখানা। জাতিধর্ম নির্বিশেষে বিশাল হলঘরে হাজারের বেশি মানুষ একসাথে বসে খান। সারাদিন ধরে চলে এই খাবার। বিশাল আয়ােজন। দর্শনার্থীরাই যে যেমন পারছে 'আটা মাখছে, বাসন পরিষ্কার করছে, ঝাট দিচ্ছে। মন্দিরের এক প্রান্তে বাগিচার মধ্যে ৯ তলা বাবা অটলের স্মৃতিসৌধ। গুরু হরগােবিন্দের পুত্র অটল ছিলেন অলৌলিক শক্তির অধিকারী। একবার তিনি এক মৃত ব্যক্তির জীবন দান করেন। লৌকিক জীবনে অলৌকিক ক্ষমতার প্রকাশে ক্ষুব্ধ হন হরগােবিন্দ। অনুতাপে আত্মহত্যা করেন বাবা অটল। তারই স্মৃতিতে গড়ে উঠে এই সৌধ। এখান থেকে দেখা যায় অমৃতসর শহর।

অমৃতসর - সংক্ষিপ্ত ইতিহাস ও ভ্রমন গাইড অমৃতসর - সংক্ষিপ্ত ইতিহাস ও ভ্রমন গাইড Reviewed by Wisdom Apps on August 23, 2020 Rating: 5

লাহুল স্পিতি ভ্রমণ গাইড - হোটেলের ফোন নাম্বার সহ

August 07, 2020



লাহুল আর স্পিতি, এই দুটি উপত্যকা নিয়ে গড়ে উঠেছে নতুন জেলা, জেলা সদর কেলং (৪৫৯০ মি)। ভারত-তিব্বত সীমান্ত জুড়ে লাহুল-স্পিতি। এই জেলাকে ঘিরে রয়েছে উত্তরে লাদাখ, দক্ষিণে কিন্নর আর কুলু, পশ্চিমে চাম্বা। গ্রেট হিমালয়ান জাসকার আর পীরপাঞ্জাল পর্বতশ্রেণী ঘিরে রেখেছে লাহুল আর স্পিতি। রুক্ষ মরুভূমির মত এখানকার প্রকৃতি। বছরের ৭ মাস বরফে মােড়া, গাছপালা নেই। কনকনে ঠান্ডা, তবুও এর নিসর্গ প্রকৃতি, বৌদ্ধ মনাষ্ট্রি, লেক, পর্যটকদের মন কেড়ে নেয়। আগে এখানে যেতে অনুমতির প্রয়ােজন হতাে। এখন আর কোনও বাধানিষেধ নেই। লাহুল-স্পিতি ভ্রমণের কিছুটা বাঁধা পথের দূরত্ব। তবে যদি সেই দূরত্বকে অতিক্রম করা যায় তবে এক অজানা জগৎ তার সবটুকু সৌন্দর্য নিয়ে উদ্ভাসিত হয়ে উঠবে চোখের সামনে।

একই জেলার এই দুই উপত্যকার ঐতিহাসিক পটভূমিও দুরকমের। অতীতে লাহুল কখনও ছিল লাদাখ রাজাদের দখলে, কখনওবা ছিল কুলুর রাজাদের শাসনে। লাদাখ রাজাদের নিজেদের মধ্যে ঝগড়ার সুযােগ নিয়ে ১৮৪০-এ কুলুর মহারাজা রণজিৎ সিংহ দখল করে লাহুল। ১৮৪৬-এ ব্রিটিশ রাজত্বের অংশ হয়। সেসময় কাংড়া জেলার কুলু সাব-ডিভিসনের একটি অংশ ছিল লাহুল। অপরদিকে স্পিতিও ১৮৪৬-এ ব্রিটিশ রাজত্বের অংশ হয়, যা তখন ছিল লাদাখের অংশ। এক্ষেত্রে উল্লেখ্য, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কিন্তু সরাসরি নিজেদের আইন মেনে শাসন করেনি এই অঞ্চল। স্থানীয় রাজাদের মাধ্যমে শাসন করত এই অঞ্চল।

১৯৪১-এ লাহুল ও স্পিতি নিয়ে তৈরি হয় নতুন সাব-ডিভিসন। ১৯৬২-তে জন্ম নেয় নতুন জেলা লাহুল-ম্পিতি। প্রায় চোদ্দ হাজার বর্গ কিমি আয়তনের এই জেলার জনসংখ্যা মাত্র ৩৫ হাজার। ৫০০-র বেশি গ্রাম থাকলেও বসবাস আছে ২৬৫টি গ্রামে। এই জেলাতেই রয়েছে পৃথিবীর সর্বোচ্চ গ্রাম কিবের। ইন্দো-তিব্বতি সীমান্তের লাহুল ও স্পিতি উপত্যকার প্রবেশপথ হলাে রােটাং পাস। তিব্বতি ভাষায় রােটাং অর্থ মৃত্যু। এক সময় এখানে কত মানুষের মৃত্যু হয়েছিল তার হিসেব নেই। এই পথে অতীতে বাণিজ্য হতাে স্পিতি, দ্রাস, কারগিল, লাদাখ হয়ে মধ্য এশিয়ায়। দুর্গম পথ, প্রতিকূল আবহাওয়া, তবুও পথের আকর্ষণে মানুষ ছুটে চলেছেন পথ কোথাও সংকীর্ণ, বন্ধুর, চড়াই, রয়েছে ভয়ঙ্কর হিমবাহ, চন্দ্র আর ভাগা এই দুই নদী। 

চোখে পড়ে বৌদ্ধ মনাষ্ট্রি, তার চিত্রসম্ভার , শিল্পকর্ম। স্থানীয় মানুষেরা সহজ, সরল, অতিথিপরায়ণ। 

এই জেলা ভ্রমণ করা যায় দু’দিক থেকে। সিমলা থেকে শুরু করে রামপুর-সারাহানসাংলা-কল্পানাকো ঘুরে নিয়ে এই জেলার কাজা-কুনজুম-কেলং দেখে শেষ করা যায়

মানালিতে অথবা মানালি থেকে শুরু করে কেলং-কাজা-কল্লা-সাংলা-সারাহান-রামপুর হয়ে শেষ করা যায় সিমলায়। 

লাহুল-স্পিতির বিভিন্ন থানা; কেলং, Ph; (01900) 222223;

কাজা, Ph: (01906) 222253; উদয়পুর, Ph: (01909) 222210..

স্পিতি নদীর তীরে ৩০০০ মিটার উঁচুতে পাহাড়ি শহর টাবাে। চারদিকে ঘিরে আছে গগনস্পর্শী পাহাড়ের সারি। প্রায় হাজার বছরের প্রাচীন এই গ্রাম। এক সময় বৌদ্ধ ধর্ম প্রচারে এখানে এসেছিলেন গুরু পদ্মসম্ভবনা। ৯৯৬ খ্রিস্টাব্দে এখানে তৈরি হয় তাকে গুম্ফা।

বৌদ্ধদের কাছে এই গুহার মাহাত্ম্য অপরিসীম। কাশ্মীর থেকে শিল্পীরা এখানে এসে ফুটিয়ে তােলেন নানান চিত্রকলা। অসাধারণ তার শিল্পশৈলী। সেই কারণেই তাবােকে বলা হয় হিমালয়ের অজন্তা। ৩০০০ বর্গ মিটার অঞ্চল জুড়ে এই গুম্ফা। রয়েছে গুম্ফা স্তুপ থঙ্কাস, নানান ভঙ্গিতে বুদ্ধের মূর্তি, প্রাচীন পুঁথি, বাদ্যযন্ত্র। দেওয়ালে জাতক অবলম্বনে বুদ্ধের জীবন কথা। গর্ভগৃহে ধ্যানমগ্ন বুদ্ধের বিশাল মূর্তি। বর্তমানে UNESco একে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ হিসেবে ঘােষিত করেছে। এছাড়া তাবাের কিছু গুহাতে রয়েছে প্রাচীন চিত্রকলা। স্থানীয় ভাষায় তাদের বলা হয় দুওয়াং।

নাকো থেকে কাজার পথে ৬৪ কিমি দূরত্বে টাবাে। থাকার জন্যে রয়েছে 

(STD Code 01906) Dewachen Retraet, Ph: 223301, 9459883443, MAP: 6100/- ;

Hotel Tow Dhey, Ph: 9418271129, 9418537574, 1500/-;Maitrey H/

Stay, Near Monastery, Ph: 223329, 9418981317; Millenium (Monestry)

G/House, Ph: 223315/33; Tashi Khangsar, Ph: 223346/77, 1200/

টাবাে থেকে স্পিতি নদীর পাশ দিয়ে কাজার পথে ২৫ কিমি এগিয়ে ডানদিকে আলাদা পথে আরও ৭ কিমি গেলে ধাংকার গুম্ফা। ৩৮৭০ মিটার উচ্চতায় এই জায়গায় এক সময় ছিল স্থানীয় রাজাদের দুর্গ। স্থান মাহাত্ম্যে বহিরাগতদের আক্রমণ থেকে বাঁচতে এই দুর্গের গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। আজ পড়ে আছে শুধুই, ধ্বংসাবশেষ। সপ্তম থেকে নবম শতাব্দীতে তৈরি গুম্ফাটিও ঐতিহাসিক গুরুত্ব বহন করে। লা-ও সম্প্রদায়ের বৌদ্ধদের এই গুম্ফাটিকে বলা হয় লা-ও-পা গুম্ফা। বহুতল এই গুম্ফায় রয়েছে পাঁচটি হলঘর। জুখাং হলঘরটিতে রয়েছে বজ্ৰধারার বিশাল রৌপ্য মূর্তি। গুম্ফা থেকে আড়াই কিমি দূরে ৩৫০০ফুট উচ্চতায় রয়েছে ছােট্ট একটি লেক। পীনপার্বতী নদীর তীরে কুংবি গুম্ফাটিও দেখার মতাে। ধাংকারে থাকার কোনও ব্যবস্থা নেই। তবে উৎসাহীরা লেকের ধারে তাবু খাটিয়ে থাকতে পারে।

কাজা থেকে ঘুরে আসা যায় ২৯ কিমি দূরে পীন নদীর দুধারে পর্বতমালার ঢালে পীন উপত্যকা। রুক্ষ, সবুজহীন স্পিতি জেলায় পীন ভ্যালি জুড়ে সবুজের চোখ জুড়ানাে রূপ দেখে মুগ্ধ হতে হয়। বিদেশী পর্যটকদের কাছে যথেষ্ট জনপ্রিয় এই পীন ভ্যালি। বলা হয় "Land of ॥bex and Snow Leopards". পাহাড় থেকে নেমেছে কুংরি গ্লেসিয়ার। কাজা থেকে পীন ভ্যালির পথে আত্তারগু-তে পীন নদী মিশেছে স্পিতির সাথে।

লাহুল স্পিতি ভ্রমণ গাইড - হোটেলের ফোন নাম্বার সহ লাহুল স্পিতি ভ্রমণ গাইড - হোটেলের ফোন নাম্বার সহ Reviewed by Wisdom Apps on August 07, 2020 Rating: 5
Powered by Blogger.