বাচ্চাদের ন্যাপী পড়ানো উচিৎ কি উচিৎ নয় ? কি বলছেন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারেরা ?




কাঁথা কাপড় না ন্যাপী ? বাচ্চা জন্মানোর সাথে সাথেই মা , ঠাকুমার মনে এই প্রশ্ন ভিড় করে । আগেকার দিএর মানুষের মধ্যে সুতির কাঁথায় বাচ্চাকে শুয়িয়ে রাখার চল ছিল বেশি , প্রস্রাব করলে বারংবার কাঁথা বদল করে বাচ্চা পালন করার কষ্টের জন্য একটা আলাদাই গর্ব অনুভব করতেন মায়েরা । কিন্ত  এখন ছােটদের ন্যাপি পরানাের চল বহুগুণ বেড়েছে। তার কারণও খুব সময়োচিত ।  আসলে ন্যাপির মধ্যে অ্যাবসর্পটেন্স স্তর রয়েছে। এই স্তর তরল শোষণ করার ক্ষমতা রাখে। ফলে বাচ্চা প্রস্রাব করলে এই স্তরটি তা শোষণ করে নেয়। এর লাভ রয়েছে অনেকগুলি। 
প্রথমত, এর শুষে নেওয়ায় ফলে বারংবার বাচ্চার বিছানা বদলাতে হয় না। দ্বিতীয়ত, বাচ্চা প্রস্রাব করার পরও অনায়াসে ঘুমােতে বা খেলতে পারে। ইউরিন হয়েছে বলে বুঝতে পারে না। তৃতীয়ত, সাধারণ অবস্থায় বাচ্চা ইউরিন করলে বিছানা ও তার জামাকাপড় ভিজে যায়। এই ভিজে বিছানা এবং জামাকাপড় দ্রুত না বদলালে ছােট্ট সদস্যের ঠান্ডা লাগার আশঙ্কা দেখা দেয়। ন্যাপি পরা থাকলে ইউরিন শুষে যায়। ফলে ঠান্ডা লাগার আশঙ্কা কমে। চতুর্থত, ন্যাপি পরানাের সামাজিক দিকটি ভুললে চলবে না। রাস্তাঘাটে বেরিয়ে, কোনও সামাজিক অনুষ্ঠানে পৌঁছে বাচ্চা প্রস্রাব বা মলত্যাগ করে ফেলতেই পারে। এটা খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। এই পরিস্থিতিতে ন্যাপি পরানাে থাকলে দুই-চার ঘণ্টার জন্য অন্তত নিশ্চিন্তে থাকা যায়। আর বাচ্চা মলত্যাগ করলেও কিছুটা সময় হাতে পাওয়াই যায় ন্যাপি বদলে ফেলার 

তবে এহেন এক কাজের সামগ্রী নিয়েও অভিভাবক থেকে সাধারণ মানুষের মনে অনেক প্রশ্ন। এবার সেই সকল প্রশ্নেরই উত্তর খুজে নেওয়া যাক- 

কতক্ষণ অন্তর ন্যাপী বদল করতে হবে?

বিভিন্ন ন্যাপি প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলি বলে একবার ইউরিন হওয়ার পরই ন্যাপি চেঞ্জ করতে। তবে এই নিয়ম মানতে গেলে বহু পরিবারের অর্থনীতি একেবার খাদের কিনারে এসে ঠেকবে। তাই একটু নমনীয় হতেই হবে। এক্ষেত্রে একবার ইউরিনের বদলে দুইবার ইউরিন করলে ন্যাপি বদলাতে হবে। ঘণ্টার হিসেবে মােটামুটি চার থেকে পাঁচ ঘণ্টায় বদলাতে হবে। আর হ্যাঁ, মল কিন্তু ন্যাপি শুষতে পারে না। ফলে একবার মলত্যাগ করলেই বদলাতে হবে ন্যাপি।

ন্যাপী কি সারাক্ষণ পরানাে উচিত?

একেবারেই না। রাতের বেলা, বাইরে কোথাও বেরলে ন্যাপি পরানাে যায়। কিন্তু দিনের বেলায় যতটা সম্ভব বাচ্চাকে স্বাভাবিক অবস্থায় রাখুন । 

কোন বয়স থেকে ন্যাপী পড়ানো উচিৎ ?

র‍্যাশ না বেরলে ১০ থেকে ১৫ দিনের বাচ্চাকেও অনায়াসে এক থেকে দুই ঘণ্টার জন্য ন্যাপি পরানাে যায়। 

কোন বয়স পর্যন্ত ন্যাপী পড়ানো উচিৎ ?

মােটামুটি বাচ্চার বয়স দুই বছর পেরনাের পরই ন্যাপি পরানাের অভ্যেস কমাতে হবে। 

ন্যাপি থেকে অ্যালার্জি হতে পারে কি ? 

সাধারণত ন্যাপি র‍্যাশ বলা হয়। তবে এই সমস্যাকে ঠিক র‍্যাশ বলা চলবে না। এটা ক্যানডিডা নামক ফাঙ্গাসের ইনফেকশন। ন্যাপি পরার সঙ্গে এই সমস্যার সরাসরি কোনও যােগ নেই। তবে এই সমস্যা হওয়ার সময় ন্যাপি পরলে অসুখ বাড়ে। এক্ষেত্রে কুঁচকি, কোমর, নিতম্বের মতাে জায়গা লাল হয়ে যায়। এই জায়গাটিতে ইউরিন। লাগলে ভীষণই জ্বালা অনুভূত হয়। বাচ্চা সর্বক্ষণই অস্বস্তি বােধ করে। এমন সমস্যা দেখা দিলে। চিকিৎসকের কাছে বাচ্চাকে আনতেই হবে। সাধারণত এসব ক্ষেত্রে অ্যান্টিফাঙ্গাল মলম লাগানাের পরামর্শ দেওয়া হয়। কয়েকদিনের মধ্যেই সমস্যা কমে যায়। 

মনে রাখবেন, ইনফেকশনের সময় বাচ্চাকে কোনওভাবেই ন্যাপি পরানাে যাবে না। সংক্রমণ কমলে ফের পরানাে যায়।

ন্যাপি পরলে ঠান্ডা লাগতে পারে কি  ? 

এমনটা হওয়ার আশঙ্কা কম। কারণ ন্যাপি ইউরিন শুষে নেয়। কিন্তু চার-পাঁচ ঘণ্টা হয়ে যাওয়ার পর বা বাচ্চা দুই-তিনবার ইউরিন করে ফেলার পরও ন্যাপি না বদলালে ন্যাপি লিক করে। তখন বাচ্চার ঠান্ডা লাগার আশঙ্কা তৈরি হয়।

ন্যাপী পরলে কি টয়লেট ট্রেনিং হয় না ?

ন্যাপি পরালে নাকি বাচ্চা ঠিক জায়গায়, ঠিক সময়ে মলত্যাগ করতে শেখে না, এই অভিযােগ রয়েছে।  আসলে সত্যিটা হল, দুই বছর বয়সের আগে কোনও বাচ্চাকে টুল ট্রেনিং করানাে উচিত নয়। এমনটা করলে তার কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। দুই বছরের পরই হবে স্টুল ট্রেনিং। সেক্ষেত্রে দুই বছরের পর ন্যাপি ব্যবহারও কমিয়ে দেওয়ার কথা বলা হয়। ফলে ন্যাপির সঙ্গে টয়লেট ট্রেনিংকে জুড়ে দিলে চলবে না। তাই কোনও সমস্যা না থাকলে দুই বছর বয়স পর্যন্ত বাচ্চাকে ন্যাপি পরাতেই পারেন। চিন্তার কিছুই নেই। 


বাচ্চাদের ন্যাপী পড়ানো উচিৎ কি উচিৎ নয় ? কি বলছেন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারেরা ? বাচ্চাদের ন্যাপী পড়ানো উচিৎ কি উচিৎ নয় ? কি বলছেন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারেরা ? Reviewed by Wisdom Apps on মে ০৭, ২০২১ Rating: 5

কোন মন্তব্য নেই:

Blogger দ্বারা পরিচালিত.