"রূপ ও রস একান্ত পৃথক জিনিস নয়"- নলিনীকান্ত গুপ্তের কিছু বানী - Nalinikanth Gupta quotes in Bengali
নলিনীকান্ত গুপ্তের কিছু বানী
➤ রূপ ও রস একান্ত পৃথক জিনিস নয়। একই সৌন্দূর্যের তাহারা এপিঠ আর ওপিঠ। রূপ দিতেছে দেহ, রস দিতেছে প্রাণ। রূপ আকৃতি, আর রস প্রকৃতি। রস হইতেছে বস্তুর সত্তাগত অন্তর্নিহিত আনন্দ, কিভাবে আছি, কিজন্য আছি, তাহার ওপর যে আনন্দ নির্ভর করিতেছে না__যেভাবেই থাকি, যে জন্যই থাকি, তাহাতেই যে তৃপ্তি, শুধু, “আছি” বলিয়াই হদ্পুরুষের যে অহেতুক সুখ, ইহারই নাম রস। আর রূপ হইতেছে এই আনন্দকে ধরিয়া রাখিবার, বাহিরে ফুটাইয়া গোচর করিয়া ধরিবার জন্য সুগঠিত পাত্র, সুঠাম কাঠামো। রসের নৈসর্গিক ধর্ম আপনাকে যথেষ্ট উৎসারিত প্লাবিত করিয়া দেওয়া-কোথা হইতে আসিতেছে কিভাবে, কোন্ দিকে চলিয়াছে, সে দিকে নজর দিবার প্রয়োজন তাহার নাই। রসের উল্লাসে কোনো বাধা কোনো নিয়ম নাই--তাহা নিরন্কুশ। " রস সর্বত্র, সর্বগামী। তাই মাধুর্যেও রস।
➤ আমরা বলিব মনকেও মার্জিত শিক্ষিত করিতে হইলে, গোড়ায় মনেরও চাই সেই রকম একটা প্রসাদ গুণ, একার উদার স্বচ্ছন্দ গতি, ধনুকের ছিলা, বা বীণার তারের মতো একটা সংহত শক্তি। এই উদ্দেশ্যে শরীরের জন্য কার্পান্তিয়ে নির্দেশ করিতেছেন হাঁটিতে শেখা। শরীরের পক্ষে হাঁটা ' যাহা, মনের পক্ষে ভাবাও তাই। আমাদের দেশের লোক যে ভালো করিয়া হাঁটিতে জানে না, তাহার দৃ্াস্ত পথেঘাটে চোখে পড়ে, সুতরাং তাহারা ভাবিতে চিন্তা করিতে__গতীরভাবে ভাবনাচিস্তা নয়, সাধারণ ভাবেই ঠিক ঠিক ভাবিতে চিন্তা করিতে অর্থাৎ মনের হাঁটাহাটিতে যে জানে না, তাহা কিছু আশ্চর্যের নয়। মানসিক ক্ষেত্রেও, আমরা চলি, কখনও বাকিয়া চুরিয়া, কখনও খোঁড়াইয়া খোঁড়াইয়া, কখনও বা লম্বঝম্প দিয়া , কখনো বা ঝিমাইয়া হাঁপাইয়া ।
➤ প্রত্যেক মানুষই বিভিন্ন কয়েকটি মানুষের সমষ্টি। বিশেষত যারা লোকোত্তর পুরুষ তাদের চেতনা বহুত্তর মানুষের চেতনার সমষ্টি ।
➤ মানুষ সম্বন্ধে আমরা আগে মনে করিতাম যে এক একজন হইতেছে একটা গোটা সত্যের প্রকাশ-_একটা বিশেষ ধর্ম, বিশেষ নীতি, বিশেষ রীতি, একটা সংহত শৃঙ্খলা ব্যক্তি-জীবনকে গ্নঠিত নিয়ন্ত্রিত করিতেছে আবর্তন পরিবর্তনের ভিতর দিয়া তবুও সে একটা সত্যকেই রূপ দিয়া চলিয়াছে, ব্যক্তি বিশেষের যে বিভিন্ন মতিগতি, তাহাদের সঙ্গতি সামঞ্জস্য সৌসাদৃশ্য ধরিয়া দেখানই ছিল চরিত্র রচয়িতার প্রধান লক্ষ্য । কিন্তু ব্যক্তির এই ধরনের ন্যুনাধিক কঠিন কাঠামো আমরা আজ ভাঙিয়া দিয়াছি।
➤ শিশুর বা শিক্ষার্থীর মনের প্রসার ও গভীরতা কম, তাই শিক্ষককে নতুন নতুন যোগাইতে হইবে-কিস্ত কোনোরকম জোর না দিয়া, খেলার সাথে গল্লচ্ছলে, অবাস্তরভাবে, টোপ ফেলিয়া, চার ছড়াইয়া, বসিয়া দেখিতে হইবে মাছ ধরে কিনা-ধরিলে আয়ত্তে তাহাকে জানিতে হইবে, না ধরিলেও কোনোরকম তাড়াহুড়া করা বা অসহিঞু হওয়া উচিত নয়। হইবে, দেখিতে হইবে কোনোরূপ রস সে উহাতে পায় কিনা।
 
        Reviewed by Wisdom Apps
        on 
        
January 15, 2021
 
        Rating: 

No comments: