কবি বিজয়লাল চট্টোপাধ্যায় ছিলেন একজন স্বাধীনতা সংগ্রামী , একজন কবি ও একজন সাংবাদিক । কৃষ্ণনগরের এই মহান ব্যাক্তি ইতিহাসের অতলে কোথাও হারিয়ে গেছেন । Wikipedia তেও এনার কোনো তথ্য নেই । কবি বিজয়লাল চট্টোপাধ্যায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উপর বেশ কিছু লেখা লিখেছিলেন , স্বয়ং বিশ্বকবি তাঁর এই লেখাকে স্বাগত জানিয়েছিলেন । স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় বেশ কয়েকবার জেলবন্দী হয়েছিলেন বিজয়লাল চট্টোপাধ্যায় । ওনার কিছু বানী এখানে দেওয়া হল -
* নিজেকে আমরা বড়াে বেশি ভালােবাসি কিনা তাই দর্পণ আমাদের জীবনে এতখানি স্থান অধিকার করে আছে।
* যাহা সহজ তাহা ফাকি, যাহা কঠিন তাহাই সত্য, মানুষ দুর্বল, সত্যপথে চলিবার বেদনাকে এড়াইবার জন্য সে সহজেই লােভ দেখাইয়া আপনাকে ফাকি দিবার চেষ্টা করে।
* প্রাপ্তির মধ্যে আনন্দ নেই, আছে কেবল ক্লান্তি।
* পুরুষের মাঝে যাহা রমণীয় সব রমণীর দান।
* মানুষের মধ্যে প্রাণের উৎস যেখানে শুকাইয়া আসে পুঁথির পরিমাণ সেখানে বাড়িয়াই চলে।
* এই যে আপনাকে দিকে দিকে দেশে দেশে ব্যাপ্ত করিয়া দেওয়া, সমস্ত বিশ্বের নাড়ীর স্পন্দনকে নিজের মধ্যে অনুভব করা, ইহাই তাে ধর্মের প্রাণ—ইহাই নাম বাঁচা। আর যা কিছু তাহাকে বাঁচা বলে না, তাহাকে বলে ‘টিকিয়া থাকা।
* শিশু যেমন করে হাঁটতে শেখে মানুষকে তেমনি করে মরতে শিখতে হবে—অত্যন্ত সহজে এবং অত্যন্ত স্বাভাবিকভাবে।
* ইন্দ্রিয়ের এবং কামনার, জ্ঞানের এবং অনুভূতির সমস্ত দরজা জানালাকে যেখানে আমরা খােলা রাখি সেখানেই শুধু জীবনের প্রতিদিনের সহস্র আনন্দকে আমরা আস্বাদন করতে পারি।
* পুরুষ যখন ভােগের নেশায় পাগল হয়ে নারীকে চায়—সে চাওয়ার প্রকৃতি একরকম। নারী যখন সৃষ্টির বেদনায় অধীর হয়ে পুরুষকে চায়—সে চাওয়ার প্রকৃতি আর একরকম, পুরুষের চাওয়া নারীর চাওয়াকে বিচলিত নাও করতে পারে—কিন্তু নারীর চাওয়া মহাদেবের মনকে টলিয়ে দেয়।
* ভালােবাসার ঔচিত্য-অনৌচিত্য বিচার করবার জন্য সাধারণ কোনাে মাপকাঠি থাকতে পারে না। যা একের পক্ষে উচিত তা অন্যের পক্ষে অনুচিত। এ হচ্ছে মানুষের একান্ত ব্যক্তিগত সমস্যা।
* পুরুষের আত্মপ্রকাশ কোনাে ব্যক্তির অপেক্ষা করে না। গান্ধি অথবা বুদ্ধ যখন ত্যাগ করেন তখন কোনও ব্যক্তির প্রেরণা থাকে না সেই ত্যাগের পিছনে। একটা নৈর্ব্যক্তিক আদর্শ তাদের পাগল করে নিয়ে যায় সত্যের পথে। মেয়েরা কিন্তু যখন কোনাে আদর্শের পিছনে চলে তখন সেই চলার সঙ্গে জড়িয়ে থাকে ব্যক্তিবিশেষের প্রতি অনুরাগ। কোনাে ব্যক্তি নেই, শুধু আদর্শ আছে—এমন অবস্থায় মেয়েদের প্রাণ আদর্শের আহ্বানে কদাচিৎ দেয় সাড়া।
* মনের যত রকম ব্যাধি আছে তাহাদের সকলেরই মূলে রয়েছে এমন কোনাে গােপন কথা যাকে মরে গেলেও আমরা প্রকাশ করতে পারিনে।
* বাঘিনী ত্যাগ করতে পারে তার শিকারকে—কিন্তু মেয়েদের পক্ষে ভালােবাসার মানুষকে ত্যাগ করা অসম্ভব। আর নারী যখন কোমল দুটি বাহু দিয়ে জড়িয়ে ধরে পুরুষের কণ্ঠ, সে বাহুর বাঁধনকে এড়িয়ে যেতে পারে এমন পুরুষ সত্যিই দুর্লভ।...মেয়েদের কাছ থেকে মুক্তি পাবার জন্য পুরুষ নিজের সঙ্গে নিজের যে সংগ্রাম—এই সংগ্রামের মতাে করুণ নাট্য বিরল।
* পুরুষ যখন নারীকে কামনা করে—সে কামনা হল তার ব্যক্তিগত সাময়িক খেয়াল। নারী যখন পুরুষকে কামনা করে—সে কামনার পিছনে থাকে সমস্ত প্রকৃতির দুর্জয় সংকল্প। পুরুষের ব্যক্তিগত খেয়াল বিশ্বপ্রকৃতির সংকল্পের তুলনায় অনেক দুর্বল। নারীর তুলনায় পুরুষ এইজন্যই শক্তিহীন—দেহের দিক থেকে নয়, হৃদয়ের দিক দিয়ে। দুজনের মধ্যে লড়াইয়ে পুরুষের পরাজয় প্রায় সর্বত্র।
* নারী হচ্ছে প্রকৃতির হাতের কলকাঠি আর পুরুষ হচ্ছে নারীর হাতের কলকাঠি । প্রকৃতি নারীকে দিয়ে সৃষ্টির ধারা অক্ষুন্ন রাখতে চায় , আর প্রকৃতির সেই আদেশকে শিরোধার্য করে নারী খুঁজছে পুরুষের সহচর্য ।
Reviewed by Wisdom Apps
on
August 29, 2021
Rating:

No comments: