নিকোলাস কোপারনিকাস (জন্ম - ১৪৭৩ খ্রি., মৃত্যু - ১৫৪৩ খ্রি.)
বাবা শোনাতেন দেশ-বিদেশের সাগর আর বন্দরের কথা। স্তব্ধ বিস্ময়ে অবাক হয়ে শুনত ছেলেটি। চোখ বন্ধ করত, ভেসে যেত কল্পরাজ্যে। এভাবেই তার মনের মধ্যে এক অদ্ভুত আবেগসম্পৃক্ত জগতের জন্ম হয়েছিল।
অন্য কেউ হলে হয়তো হতেন একজন কবি। ছোট্টবেলার এইসব স্মৃতিতে আচ্ছন্ন থাকতেন, যারা জীবন ভরে লিখতেন না-দেখা ভুমিখণ্ডের কল্পিত কবিতা।
কিংবা হতেই পারতেন সৃজনশীল গল্পলেখক। কেন না তার বাবার গল্প বলার ভঙ্গিটি ছিল ভারী চমৎকার। দূর প্রাচ্যের কোথায়, কোন জননীর বুকফাটা আর্তনাদ তিনি শুনেছেন, নিখুঁতভাবে তা উপস্থিত করতেন ছেলের কাছে।
হলেও হতে পারতেন একজন উপন্যাসিক। মানুষের জীবনের ওঠাপরা, আশা আর নিরাশা কে পাথেয় করে লিখতেন মহান উপন্যাস। পৃথিবীর মানুষ যা পরে আনন্দ পেত।
উনি কিন্তু তা হননি। উনি হয়েছিলেন বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানী। শুধু বিজ্ঞানী বললে ভুল হবে। ওনার প্রতিবাদী কন্ঠস্বর উনি পৌঁছে দিয়েছিলেন, পৃথিবীর সর্বত্র। তখনকার সমাজে যা করা হত, উনি তার বিরুদ্ধে অক্লেশে ঘোষণা করেছিলেন সীমাহীন জেহাদ। আর এভাবেই প্রগতিবাদী মানুষের ইতিহাসের সঙ্গে ওনার নাম জড়িয়ে ব্যক্তিত্ব রূপে।
বন্ধুরা, তোমাদের নিশ্চয়ই জানতে ইচ্ছে করছে, কোন মহাবিজ্ঞানীর ছোটবেলার গল্পকথা শোনাব বলে তৎপর হয়েছি। নামটা বললে তোমরা সবাই তাকে চিনতে পারবে। শুধু চিনতে পারলে বললে ভুল হবে, তোমরা সবাই তার জীবনকথাও হয়তো বলে দেবে - এতই জনপ্রিয় তিনি আমাদের মধ্যে।
হ্যাঁ, তোমরা হয়তো অনুমান করতে পারছ, তিনি হলেন নিকোলাস কোপারনিকাস।
জন্মেছিলেন তিনি পোল্যান্ডের ভিস্টলা নদীর তীরবর্তী টরুন নামক বন্দর-শহরে, আজ থেকে অনেক বছর আগে - ১৪৭৩ খ্রিস্টাব্দে।
যে পরিবারের হয়ে নিকোলাস পৃথিবীর আলো দেখেন, সেটি ছিল এক বণিক পরিবার। বণিক পরিবারের পুরুষেরা বছরের বেশিরভাগ সময় বাইরে বাইরে কাটান। মাথার ওপর কঠিন কঠোর কর্তব্যের বোঝা চাপানো থাকে তাদের। সেই সঙ্গে থাকে দেশজয়ের নেশা এবং থাকে অর্থ উপার্জনের তাগিদ। সব মিলিয়ে সে এক দারুন ব্যস্ততার জীবন। বাবার সাথে তাই খুব একটা দেখা হত না শিশু নিকোলাসের। বাবা বাণিজ্যে চলে যেতেন। যাবার আগে দুহাত ভরিয়ে দিতেন লজেন্স আর টফিতে। বলতেন, 'নিকোলাস, মন খারাপ করিস না। ফিরে এসে অনেক নতুন নতুন গল্প শোনাব।' ধীরে ধীরে বাবার শরীরটা দূর থেকে আরও দূরে চলে যেত। টমটম গাড়ি চলে যাচ্ছে। ছোট্ট নিকোলাস চোখ বন্ধ করছেন। গল্প শোনার লোভনীয় দিবাস্বপ্নে টফি খেতে ভুলে যাচ্ছেন। ভাবছেন, কখন বাবা ফিরে আসবেন, শোনাবেন সেই সাত মাথাওয়ালা দৈত্যটার কথা - যে আস্ত মানুষ গিলে ফেলতে পারে। কিংবা উড়তে উড়তে যে হাঁস বদলে যায় সুন্দরী রাজকন্যাতে - তার গল্প।
দিন কেটে যেত - বর্ষা, শীত, বসন্ত। বাবা আসছেন না কেন? অভিমানী মন ছটফট করত। মায়ের সান্নিধ্যে আসার চেষ্টা করতেন। বেচারি মা, সংসারের কত কাজ তার। কিকরে সময় দেবেন এই ছোট্ট শিশুকে?
তারপর একদিন ফুরিয়ে যেত প্রতীক্ষার এই দীর্ঘ প্রহর। বাবা আসতেন। কত কি যে জিনিসপত্র এনেছেন তিনি নিকোলাসের জন্য। ছেলেটাকে সত্যিই খুব ভালোবাসতেন বাবা। ভালোবাসতেন তার সরল দুটি চোখের স্বপ্নমাখা চাউনি, ভালোবাসতেন তার অবুঝপনা।
কিন্তু, সুখস্বপ্নের এই ছবিটাও হঠাৎ একদিন আবছা হয়ে গেল। তখন নিকোলাসের বয়স মাত্র দশ বছর, দূর বিদেশেই বাবা শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন। অনেকদিন বাদে বাবার মৃত্যুসংবাদ পৌঁছেছিল হতভাগ্য ওই পরিবারের কাছে। বাবা নেই, দশ বছরের বালক নিকোলাস ব্যাপারটি ঠিক বুঝতে পারেনি। ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়েছিলেন ক্রন্দনশীল মায়ের দিকে। তারপর, একটু একটু করে তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, আজ থেকে তার জগৎটা অনেক পাল্টে গেছে। এখন তার কল্পনার সুদুরতম শরনিতে ব্যঙ্গমা-ব্যাঙ্গমি বসে থাকবে না বিশাল পাকুর গাছের ডালে। রাতের আধার ঘনিয়ে এলে ব্রহ্মদৈত্য এসে ভয় দেখাবে না। এখন থেকে তিনি সত্যি সত্যি নিঃসঙ্গ হলেন।
অনেকে বলেন, সেই বয়সেই নিকোলাস হয়ে উঠেছিলেন প্রতিবাদি। সামাজিক বিশৃঙ্খলার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে, দীর্ঘদিন ধরে সমাজপতিরা নানাভাবে মানুষকে শোষণ করে এসেছেন, এবার তাদের শোষনের দিনের অবসান ঘটাতে হবে- এমনই একটা দৃঢ় প্রত্যয়ের জন্ম হয়েছিল বালক নিকোলাসের মনের মধ্যে।
বাড়ি ছেড়ে নিকোলাসরা চলে এলেন মামাবাড়িতে। মামা ছিলেন বাস্তববাদী। যে-কোনো বিশ্বাসের গভীরে প্রোথিত প্রকৃত সত্যের সন্ধান করা ছিল তার স্বভাব। তিনি ছিলেন পোল্যান্ডের একজন বিশিষ্ট বিশপ। ধর্মের সঙ্গে মানুষের সাধারণ জীবনবোধকে মিশিয়ে দেওয়ার একটা অদ্ভুত প্রবণতা ছিল তার। সে যুগের নিরিখে এটা কিন্তু একটি ব্যতিক্রমী ঘটনা, বিশেষ করে ধর্মযাজকদের ক্ষেত্রে। ধর্মপ্রচারের স্বভাবতই প্রাচীনপন্থী হয়ে থাকেন। সমাজের বুকে ঘটে যাওয়া যে কোনো বিপলবাত্মক ঘটনাকে তারা নিন্দা করতেন। তারা নিজেদের ঈশ্বরের প্রতিভূ হিসেবে ভাবতে ভালোবাসেন। বোকাসোকা জনসাধারণের ওপর প্রভুত্ব বিস্তার করেন। রাজার আশ্রয়ে পায়ের ওপর পা দিয়ে জীবনের দিনগুলো অনায়াস আরামে কাটিয়ে দেন।
মামার সান্নিধ্যে এই জীবনবোধ সেদিনের কিশোর নিকোলাসের মনের মধ্যেও সঞ্চারিত হয়েছিল। বাবার অভাব অনেকটাই পূরণ করেছিলেন ওই প্রগতিপন্থী মামা।
১৪৯২ খ্রিস্টাব্দে উনিশ বছর বয়সে কোপার্নিকাস ভর্তি হয়েছিলেন পোল্যান্ডের বিখ্যাত ক্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ে। তখন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের খ্যাতি নানাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। শুধু পোল্যান্ড থেকেই নয়, বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকে দলে দলে কৃতি ছাত্ররা আসতেন এখানে ভর্তি হবার জন্য। ভর্তি হওয়ার ছাড়পত্রটাও পাওয়া যেত না সহজে। অনেকগুলো কঠিন পরীক্ষার বেড়া টপকে তবেই এই বিশ্বখ্যাত অঙ্গনের প্রবেশের অনুমতি মিলত। ভর্তির প্রতিটি পরীক্ষায় নিকোলাস অসাধারন কৃতিত্ব দেখিয়েছিলেন। অধ্যাপকেরা তার এই গুনপনায় হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন। এখানে পড়তে পড়তে নিকোলাসের সঙ্গে পরিচয় হল বিশিষ্ট অধ্যাপক ব্রুদেসকির। উনি ছিলেন অংক এবং জ্যোতির্বিজ্ঞানের অধ্যাপক, আধুনিক মনোভাবাপন্ন বিজ্ঞানী। ওনার সংস্পর্শে এসে নিকোলাসের জীবনাদর্শের রুদ্ধ দুয়ার খুলে গিয়েছিল। এতদিন পর্যন্ত সব বিষয়ে কেমন একটা ভাসা ভাসা অভিমত ছিল নিকোলাসের। ব্রুদেসকিই তাকে প্রথম বললেন, বিজ্ঞান কখনো 'যদি', 'কিন্তু' ইত্যাদি শব্দকে প্রাধান্য দেয়না। যা সুনিশ্চিত, তাকে প্ৰতিষ্ঠা করাই বিজ্ঞানের একমাত্র লক্ষ্য। তার জন্য যদি জীবনাপাত করতে হয়, তাহলে তাও করতে হবে। তবুও কোনো অনুমানের পিছনে বিজ্ঞান ছুটবেনা।
সংক্ষেপে বলা যেতে পারে, পরবর্তীকালে কোপার্নিকাস যে কারণে জগৎবিখ্যাত হন, সেই বিষয়ে কৌতূহলের প্রথম বীজটি অঙ্কুরিত করেছিলেন ওই ব্রুদেসকি।
১৪৯২- নিকোলাস এলেন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে। আমাদের ইতিহাসে সেই বছরটি কিন্তু আরও একটি কারণে বিখ্যাত হয়ে আছে। তোমরা হয়তো ভুলে গেছো, সেই বছরই ইতালিয় নাবিক কলম্বাস অতলান্তিকের ওপারে নতুন ভুমিখন্ড আবিষ্কার করেছিলেন। নাম দিয়েছিলেন - নতুন মহাদেশ। পরবর্তীকালে যা 'আমেরিকা' নামে আত্মপ্রকাশ করে।
সেদিনের এই আবিষ্কারের গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। আমেরিকা আবিষ্কৃত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের জ্ঞানভান্ডারের সীমানা একলাফে অনেকটা বৃদ্ধি পেয়েছিল। দলে দলে মানুষ তখন চলেছেন আমেরিকার উদ্দেশ্যে। সেখানকার বাতাসে নাকি টাকা উড়ছে, মাটির নিচে তাল তাল সোনা পোঁতা আছে - এমনই একটা গুজব রটে গিয়েছিল সর্বত্র। আর নতুন এই দেশে যাবার যে হিড়িক উঠল, তাতেই পাল্টে গেল মানুষের মন। নতুন সব কিছুকে আঁকড়ে ধরতে হবে, বস্তাপচা পুরানো ভাবধারাকে বিদায় দিতে হবে - এমনই একটা ধারণা জন্মেছিল তরুণতর প্রজন্মের মধ্যে।
বিশ্ববিদ্যালযের ছাত্র থাকাকালীন জ্যোতির্বিজ্ঞানকে আঁকড়ে ধরেছিলেন নিকোলাস কোপার্নিকাস। কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস। মামার ইচ্ছে ছিল, ভাগ্নেটি হবে চিকিৎসাবিজ্ঞানী। আর্ত-আতুরদের সেবা করবে। তাই মনের ইচ্ছে চেপে কোপার্নিকাস ভর্তি হতে হল চিকিৎসাবিনজ্ঞানের বিভাগে। মান দিয়ে পড়াশোনা করলেন তিনি। শেষ অব্দি উর্ত্তীণ হলেন ওই পরীক্ষাতে। মামার ইচ্ছে তিনজ অপূর্ন রাখেননি। ডাক্তারি পাশ করার পর আর্ত মানবাত্মার সেবাতে নিজেকে নিয়োজিত করেছিলেন তিনি।
এবার বিদেশে যেতে হবে। তখন উচ্চ শিক্ষার জগতে ইতালির খুবই নামডাক। মামার অনুমতি নিয়ে কোপার্নিকাস এলেন ইতালিতে। ভর্তি হলেন বোলগানা বিশ্ববিদ্যালয়ে। অনেক হয়েছে, এবার আর চিকিৎসাশাস্ত্র নয়। এবার আমি আমার মনের মতো বিষয় গণিত এবং জ্যোতির্বিজ্ঞান নিয়ে পড়ব - এমনই একটা ইচ্ছে জাগল সেদিনের তরুণ নিকোলাস কোপারনিকাসের মনে।
তখনকার দিনে জ্যোতির্বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে গ্রিক মনীষীদের অবিসংবাদিত প্রাধান্য ছিল। আবার অংক এর ক্ষেত্রে প্রাচীন ধারাটি সযত্নে বহন করতেন আরব পন্ডিতরা। দুটি বিষয়ের মূল ধারার সঙ্গে পরিচিত হবে জন্য নিকোলাস সযত্নে গ্রিক এবং আরবি ভাষা অধ্যয়ন করলেন। এই জাতীয় আত্মনিবেদন এখন ভাবতেই পারা যায় না। এখনকার দিনে আমরা অবুবাদের মাধ্যমে চটজলদি সবকিছু শেখার চেষ্টা করি। কিন্তু নিকোলাস ছিলেন অন্য চরিত্রের মানুষ। যা শিখবেন একেবারে একটা মনোবৃত্তি ছিল তার।
সে এক দারুন কর্মমুখর দিন। সারা রাত বসে বসে পড়া মুখস্থ করছেন। বাইরের প্রকৃতি নিঝুম নিথর হয়ে গেছে। ঘুমন্ত মানুষের বিলম্বিত শ্বাসের শব্দ শোনা যাচ্ছে। রুমমেট কখন ঘুমিয়ে পড়েছে সেদিকে নজর দেবার মতো সামান্য অবসরটুকুও নেই নিকোলাসের, তিনি যা জানেন, জীবনের দিনগুলি হঠাৎ হঠাৎ ফুরিয়ে যায়। বার্ধক্য এসে সময়ের দরজাতে করা নাড়ে। তাকে যে অনেক কাজ করতে হবে। পৃথিবীতে মানুষ এসেছে সুনির্দিষ্ট কিছু কাজ করার জন্য। সেগুলো অসম্পূর্ন রেখে আগে আগে চলে গেলে চলবে কেন?
এভাবেই ফুরিয়ে গেল নিকোলাস কোপারনিকাসের ছোটবেলা আর ছাত্রজীবন। বোলগানা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণার কাজ চলাকালীনই রোম বিশ্ববিদ্যালয়ের আহ্বান পেলেন তিনি। এরপর তিনি পরিচিত হয়েছিলেন এক বিশিষ্ট বিতর্কিত বিজ্ঞানী হিসেবে। সে বিষয়ে দু চার কথা না বললে নিকোলাস সম্পর্কে আমরা সবটুকু জানতে পারব না।
তখনকার দিনে জ্যোতির্বিজ্ঞানের মূল ভিত্তি ছিল গ্রিসের দার্শনিক বিজ্ঞানী টলেমির একটি ধারণা। মানবসভ্যতার ঊষালগ্নে তিনি ঘোষণা করেছিলেন যে, পৃথিবী হল এই সৌরজগতের কেন্দ্রভূমি। তার চারপাশে সূর্য আছে। আছে চন্দ্র, গ্রহ এবং অসংখ্য নক্ষত্রের পরিমন্ডল। তারা নিজ নিজ কক্ষপথে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করছে।
এই মতবাদকে সকলে অভ্রান্ত হিসেবে মেনে নিয়েছিলেন। অর্থাৎ তখনকার সব চিন্তাই হত এই মতবাদকে আশ্রয় করে। তার মানে জ্যোতির্বিজ্ঞানের প্রাথমিক পর্বেই আমরা একটা ভুল ধারণার বশবর্তী হয়েছিলাম। কেউ কিন্তু এগিয়ে এসে টলেমির এই ত্রুটি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেবার সাহস কেউ করেননি। টলেমি তখন প্রায় ভগবানের পর্যায়ে পৌঁছে গেছেন।
নিকোলাসই প্রথম এই মতবাদের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করলেন। তিনি সূর্যকেন্দ্রিক তত্ত্বের আবিষ্কার করলেন। এই তত্ত্বের সারকথা হল - সৌরমন্ডলের সকলেই, এমনকি পৃথিবীও স্থির নয়। তারা সবাই নিজস্ব কক্ষপথে চলমান। সূর্যকে ঘিরেই চলে তাদের পরিক্রমণ।
আজ আমরা এই তত্ত্বটিকে নির্ভুল সত্য বলে মনে নিয়েছি। কিন্তু যখন নিকোলাস এটি প্রথম প্রচার করেন, তখনকার অবস্থা ছিল একেবারে আলাদা। অচিরেই নিকোলাস চিহ্নিত হলেন দেশদ্রোহী হিসেবে। তাঁকে নানাভাবে ভৎর্সনা করা হল। শুধু তাই নয়, শারীরিকভাবেও তাঁকে নিগৃহীত হতে হয়েছিল। শেষ অব্দি অবশ্য নিকোলাসের এই তত্ত্ব পন্ডিতসমাজ মেনে নিয়েছিলেন। কিন্তু জীবদ্দশাতে তিনি এই মতবাদের স্বীকৃতি দেখে যেতে পারেননি। দেখেননি ১৫৮২ খ্রিস্টাব্দে কিভাবে পোপ গ্রেগরি ক্যালেন্ডার সংশোধন করেছেন সূর্যকেন্দ্রিক তত্ত্বের ভিত্তিতেই।
বিতর্কিত বিজ্ঞানী ছাড়াও তিনি ছিলেন এক বিশিষ্ট সহযোগীরূপে চার্চের কাজে যোগ দেওয়ার পর সপ্তম শতাব্দীর বিখ্যাত বাইজেনটাইন কবি থিয়োফিলাকটাস সীমাকোট্টা-র ৮৫ টি কবিতা গ্রিক থেকে লাতিনে অনুবাদ করেছিলেন তিনি।
১৫৪৩ খ্রিস্টাব্দে এই প্রাণবন্ত জ্ঞানপিপাসু বিজ্ঞানী শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন। তাঁকে শুধুমাত্র আমরা একজন জ্যোতির্বিজ্ঞানী বলব না। একাধারে তিনি ছিলেন ভাষাবিদ, চিকিৎসক, গণিতজ্ঞ, পুরোহিত, অর্থনীতিবিদ এবং রাজনীতজ্ঞ। এক মানুষের মধ্যে এতগুলি গুণের সমাহার সত্যি সত্যি আমাদের অবাক করে দেয়।
নিকোলাস কোপারনিকাসের জীবনী
Reviewed by Wisdom Apps
on
November 27, 2018
Rating:
Reviewed by Wisdom Apps
on
November 27, 2018
Rating:

No comments: