মাত্র ১৮ বাক্যে গীতার সারাংশ - সহজে সম্পূর্ণ গীতার জ্ঞান

 


আমরা যদি সমগ্র শ্রীমদ্ভগবদ্গীতাকে মন্থন করে একটা শব্দে প্রকাশ করতে চাই, সেই শব্দটি হবে, "শ্রীকৃষ্ণ”। আমরা যদি সমগ্র শ্রীমদ্ভগবদ্গীতাকে দোহন করে ১৮টি বাক্যে (প্রতি অধ্যায়ের জন্য ১টি বাক্য) প্রকাশ করতে চাই, তবে তা হবে নিম্নরূপঃ


বাক্য-০১ প্রথম অধ্যায় বিষাদ-যোগ 

কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের প্রাক্কালে, বিপরীত পক্ষে নিজের প্রিয় আত্মীয়-স্বজন ও গুরুজনদের দেখে, মহাবীর অর্জুন তাঁর সখা শ্রীকৃষ্ণকে বললেন যে তিনি যুদ্ধ করবেন না।


বাক্য-০২ দ্বিতীয় অধ্যায় সাংখ্য যোগ

ভগবান শ্রীকৃষ্ণ নির্দেশ করলেন যে যুদ্ধ পরিত্যাগ করার দ্বারা অর্জুন অন্যদেরকে আত্মারূপে দেখতে অক্ষম হচ্ছেন, তাঁর ক্ষত্রিয়োচিত কর্তব্য সম্পাদনে ব্যর্থ হচ্ছেন এবং তিনি একজন স্থিতপ্রজ্ঞ যোগী হতে পারবেন না।


বাক্য-০৩ তৃতীয় অধ্যায় কর্ম যোগ

শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে বললেন, প্রত্যেক ব্যক্তিকেই অনাসক্ত হয়ে, উচ্চতর উদ্দেশ্যগুলো মনে রেখে কর্ম করতেই হবে; অন্যথায় সে সর্বগ্রাসী কাম নামক দুর্জয় শত্রুর শিকার হবে"।


বাক্য-০৪ চতুর্থ অধ্যায় জ্ঞান যোগ

ভগবান বললেন, "মানুষকে এই কাম জয় করার উপায় শিক্ষা দেওয়ার জন্য আমি অনন্তকাল ধরে যুগে যুগে নানা দিব্য রূপে এই জড় জগতে অবতীর্ণ হই, যে জ্ঞান এখন আমি তোমাকে ব্যাখ্যা করব এবং তা গুরু-শিষ্য পরম্পরাক্রমে চলতে থাকবে"।


বাক্য-০৬ ষষ্ঠ অধ্যায় ধ্যান যোগ

যদিও অষ্টাঙ্গ যোগ ও ধ্যানের কঠিন পথ ক্রমান্বয়ে অবশেষে আমাতেই এসে উপনীত হয়, কিন্তু আমার প্রতি অর্পিত ভক্তিমূলক কর্ম যোগীকে তৎক্ষণাৎ আমার সাথে সংযুক্ত করে এবং সেই কারণে ভক্তই হচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ যোগী"।


বাক্য-০৭ সপ্তম অধ্যায় বিজ্ঞান যোগ

ভগবান বললেন, "আমাতে শ্রদ্ধাযুক্ত হয়ে কর্ম করলে সেই যোগী সর্বত্র, এমনকি আমার নিকৃষ্টা জড়া শক্তিতেও আমাকে দেখতে পান, যার ফলে তিনি আর মনোধর্মী জল্পনা-কল্পনা বা নানাবিধ দর্শনের দ্বারা বিচলিত হন না"।


বাক্য-০৮ অষ্টম অধ্যায় অক্ষরব্রহ্ম যোগ

"যে ব্যক্তি আজীবন আমার জন্য কর্ম করেন তিনি মৃত্যুকালে আমাকে স্মরণ করতে পারেন, যার ফলে তাকে আর জন্ম-মৃত্যুর চক্রে ঘুরতে হয় না এবং এটা এমন একটা মহত্তর ফল যা তপস্যা, দান, যজ্ঞ বা দেবদেবীর উপাসনা থেকে অনেক শ্রেষ্ঠ"।


বাক্য-০৯ নবম অধ্যায় রাজগুহ্য যোগ

"আমিই সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা ও সর্বব্যাপ্ত হলেও স্বতন্ত্র ব্যক্তিরূপে বিদ্যমান থাকি, সবকিছুতে থেকেও কোনখানেই নেই এবং আমার ভক্তের অর্পিত প্রীতিপূর্ণ সরল আহার্য ও সেবার দ্বারা তাঁদের প্রেমে বাঁধা পড়ে যাই"।


বাক্য-০৫ পঞ্চম অধ্যায় কর্মসন্ন্যাস যোগ

ভগবান আরো বললেন, "আমার জন্য কর্ম করলে কর্তার বৈরাগ্য পূর্ণতা লাভ করে, কারণ ভগবান হিসেবে আমিই সমস্ত কর্মের প্রকৃত ভোক্তা, সকলের মালিক, এবং সকলের সর্বোত্তম সুহৃদ"।


বাক্য-১০ দশম অধ্যায় বিভূতি যোগ

"হে অর্জুন, এই জগতে যা কিছু সর্বোত্তম বস্তু রয়েছে তার মধ্যে তুমি আমাকে দেখতে পার, যদিও সেগুলো আমার বিভূতির অতি ক্ষুদ্র অংশ মাত্র"।


বাক্য-১১ একাদশ অধ্যায় বিশ্বরূপ দর্শন যোগ

"হে পার্থ, তোমার প্রার্থনা অনুসারে তুমি দিব্য চক্ষুর দ্বারা আমার অতি অদ্ভুত, অত্যাশ্চর্য ও সর্বগ্রাসী মহাকালসহ বিশ্বরূপ দর্শন করো, যদিও সেই রূপ আমার দ্বিভুজ শ্যামসুন্দর রূপ হতে অনেক নিকৃষ্ট"।


বাক্য-১২ দ্বাদশ অধ্যায় ভক্তিযোগ

"ভক্তি ও প্রীতি সহকারে আমাকে স্মরণ করাই হচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ পন্থা যা মৎপরায়ণ হয়ে কর্ম করার দ্বারা বা অন্ততঃ অনাসক্ত হয়ে কর্ম করার দ্বারা ক্রমান্বয়ে লাভহয় এবং এটি নিরাকার ব্রহ্ম উপাসনা থেকে উৎকৃষ্ট"।


বাক্য-১৩ ত্রয়োদশ অধ্যায় প্রকৃতি-পুরুষ-বিবেক যোগ

"পরমাত্মা হিসেবে আমি সকল জীবাত্মার মধ্যে অবস্থান করছি, এমনকি যারা আমাকে অবজ্ঞা করে এবং বিভিন্ন প্রজাতিতে নানা দেহে জড় ইন্দ্রিয়সুখের পশ্চাতে ধাবিত হয়, তাঁদের মধ্যেও আমি রয়েছি"।


বাক্য-১৪ চতুর্দশ অধ্যায় গুণত্রয় বিভাগ যোগ

"একজন অজ্ঞ জীব যতক্ষণ পর্যন্ত আমার জন্য কর্ম করে প্রকৃতির তিন গুণকে অতিক্রম না করছে, ততক্ষণ সে জড়া প্রকৃতির ত্রিগুণের দ্বারা মোহিত হয়ে থাকে"।


বাক্য-১৫ পঞ্চদশ অধ্যায় পুরুষোত্তম যোগ

"যদিও জীবেরা এই জড় জগতের বটবৃক্ষ-সদৃশ গোলক ধাঁধায় হারিয়ে গিয়েছে, তবুও আমি তাঁদের হৃদয়ে অবস্থান করে তাদেরকে আমার দিকে এবং আমার চিন্ময় ধামের দিকে পরিচালিত করি"।


বাক্য-১৬ ঘোড়শ অধ্যায় দৈবাসুর-সম্পদ-বিভাগযোগ

"দৈবী ভাবাপন্ন লোকেরা আমার নির্দেশনা মেনে চলে কিন্তু আসুরিক লোকেরা লোভ, ক্রুরতা ও দম্ভের কারণে শাস্ত্রবিধি মানে না এবং ইন্দ্রিয় উপভোগের জন্য তাঁদের অদম্য বাসনার ফলে তারা ঘোর নরকে অধঃপতিত হয়"।


বাক্য-১৭ সপ্তদশ অধ্যায় শ্রদ্ধাত্রয় বিভাগ যোগ

"প্রকৃত আধ্যাত্ম-মার্গ জল্পনা-কল্পনা করে নির্ণয় করা যায় না, কারণ এমনকি শ্রদ্ধা এবং যজ্ঞও প্রকৃতির তিন গুণের নির্দেশনায় হয়ে থাকে"।


বাক্য-১৮ অষ্টাদশ অধ্যায় মোক্ষযোগ

হে অর্জুন! যুদ্ধ করার দ্বারা তুমি আমার জন্য কর্ম করবে, তোমার স্বাভাবিক কর্তব্যকর্ম সম্পাদন করবে এবং একই সাথে একজন পরিশুদ্ধ যোগী হবে, কেননা তোমার প্রেমময়ী সেবার ফলে আমি তোমাকে সমস্ত জড় কলুষতা থেকে পরিত্রাণ করব; প্রিয় সখা! এখন তোমার যা মনোপূত হয় তা করো"।



(Source: Iskcondesiretree website)


মাত্র ১৮ বাক্যে গীতার সারাংশ - সহজে সম্পূর্ণ গীতার জ্ঞান মাত্র ১৮ বাক্যে গীতার সারাংশ - সহজে সম্পূর্ণ গীতার জ্ঞান Reviewed by Wisdom Apps on October 16, 2025 Rating: 5

No comments:

Powered by Blogger.