কয়েকটি ঘরােয়া পরিচর্যার মাধ্যমে চুল ভালো রাখুন
খাঁটি নারকেল তেল স্নানের আধ ঘন্টা পূর্বে মাখুন। ভালােভাবে ম্যাসাজ করুন। রোদ্দুর থাকলে দু' পাঁচ মিনিট মাথায় লাগিয়ে নিন, তবে চড়া রােদে নয়। তারপর হালকা গরম জলে স্নান করুন, পারলে সারা বছর। তেল মাখার আধ ঘণ্টা পরেই স্নান করুন। সপ্তাহে ২ দিন শ্যাম্পু ব্যবহার করবেন, অবশ্যই তেল মাখার পর। নারকেল তেল চুলের বৃদ্ধি ঘটায়, চুল সুন্দর ও ঘন হয় , সহজে খুশকি আসে না। এছাড়া মাথা ঠান্ডা রাখে, মাথার চামড়া ভালাে থাকে। তবে প্রয়ােজন হলে ঘরোয়া শ্যাম্পু ও খুশকি নাশক বিধান মেনে চলতে পারেন। তেল, সাবান ও শ্যাম্পু ঘনঘন বদলাবেন না। নারকেল তেল যেমন চুলের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে, তেমনি চুলকে দূষণ থেকে রক্ষা করতে পারে।
• যাঁদের নারকেল তেল সহ্য হয় না, তারা খর্টি সরষের তেল ব্যবহার করুন। খাঁটি কথাটা সরষের তেলের ক্ষেত্রে বলাটা খুবই মুশকিল। যে কোনও পরিচিত একটা ব্রান্ডের তেল ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়া ১০ গ্রাম সরষের তেলের সঙ্গে ১০ গ্রাম নিম তেল ভালােভাবে মিশিয়ে সেটিও ব্যবহার করা যায়। ব্যবহারিক নিয়ম পূর্বের মতে। এর দ্বারা চুলের গোড়া শক্ত হয়, সহজে খুশকি আসে না ও চুল পাকে না, খুশকি থেকে উৎপন্ন কোনও চুলকানি বা অ্যালার্জি হয় না। শীতে চুলপড়া ও খুশকি হাত ধরাধরি করে আসে। প্রত্যহ স্নানের পূর্বে পূর্বোক্ত নিয়মে তেল দিয়ে ম্যাসাজ করুন। নারকেল তেল বা সরষের তেল সর্বাঙ্গে মাখতে পারলে ত্বক ভালাে থাকবে।
• গ্রামের ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের জন্য একটা বহুপরীক্ষিত মুষ্টিযোগের উল্লেখ করা যাক । ১০-১২ বছর বয়স পর্যন্ত সপ্তাহে ২ দিন শ্যাম্পু হিসাবে এটি ব্যবহার করতে পারেন । ৪-৫ টি ঢ্যড়শ পাতা ও ৮-১০টি লাল জবা ফুলের পাতা ভালোকরে ধুয়ে নিয়ে , কুচি কুচি করে কেটে জলের মধ্যে চটকাবেন । এরপর পাতাগুলো তুলে ভালো করে নিংড়ে নিয়ে ফেলে দেবেন । এই লালার মত মিশ্রিত ফ্যানা দিয়ে মাথা ঘষতে হবে শ্যাম্পুর মতো করে । কিছুক্ষন রাখার পর মাথা ধুয়ে ফেলবেন । ইচ্ছা হলে বড়রাও এটা ব্যবহার করতে পারেন । এতে চুলের গোড়া শক্ত হয় , চুল ঘন হয় , খুশকি হবে না, সহজে চুল পাকবে না, আর চুল খুব ফুরফুরে থাকবে । এটা ব্যবহার করার আগে নারকেল তেল বা নিমতেল মিশ্রিত সরষের তেল ব্যবহারতে পারেন। ব্যবহার করলে উপকার বেশি। আবার যে দু'দিন শ্যাম্পু করবেন, সে দুদিন পূর্বে তেল না মাখলে বিকেলের দিকে শুকনাে চুলে অল্প তেল ম্যাসাজ করে ভালােভাবে চিরুনি দেবেন। তাহলে পরদিন গানের পুর্বে তেল মাখার প্রয়ােজন হবে না। ভালো চিরুনি দিয়ে মাঝে মাঝে এবং তেল ব্যবহার করার পর চুল আঁচড়ানােটা চুলের পরিচর্যার প্রাথমিক ধাপ।
খুশকি তাড়াতে হলে কি করবেন ?
এক কাপ জলে একটা পাতিলেবু নিংড়ে সেই জলটি দিয়ে স্নানের পূর্বে মাথায় ঘষে ঘষে লাগান। পাৱলে মাথায় মেখে ১০-১৫ মিনিট হালকা রােদ লাগান। লেবুর সাইট্রিক অ্যাসিড খুশকিকে প্রতিহত করে। ১০-১৫ মিনিট পরে মাথাটি ধুয়ে ফেলুন বা স্নান করুন। হাল রোদ লাগালে চুলের ঔজ্জ্বল্য বাড়বে এবং চুলে একটা আলাদা রঙের সৃষ্টি হবে। ওই দিন বিকেলের দিকে কোন তেল মাথায় দিতে পারেন অথবা নাও দিতে পারেন। সপ্তাহে একদিন অথবা খুব প্রয়োজন হলে ব্যবহার করবেন। তবে লেবুর বসে অ্যালার্জি থাকলে এটি আর ব্যবহার করবেন না।
• আর একটি খুশকি নিবারক একক দ্রব্যের কথা বলি। সেটি হল কচি ডাবের নরম মালা বেটে রস বের করতে হবে। শিকাকাই ও আমলকী (সমান পরিমাণে প্রয়ােজনমতো ওজন করে নিতে হবে) রাতে ভিজিয়ে সকালে চটকে সেই জল দিয়ে মাথা ধোওয়ার পর চুল ভালাে করে শুকিয়ে গেলে বিকেলের দিকে চুল চিরে চিরে নারকেল মালার রসটি লাগান। হঠাৎ ধােওয়ার কোনও দরকার নেই। পরদিন তেল না মেখে স্নান করুন। এরপর যেভাবে শ্যাম্পু ও তেল ব্যবহার করেন তাই করবেন ।
বাড়িতে এই তেল তৈরি করে চুলে লাগানঃ
- শশা, পুদিনা পাতা ও গাজর সম পরিমাণে (আন্দাজমতো) নিয়ে থেতো করে রস বের করতে হবে। এটি স্নানের পর মাথায় হালকা মাসাজ করে লাগিয়ে ১০-১৫মিনিট পর ধুয়ে ফেলবেন ।
- যারা নারকেল তেল বা সরষের তেল ব্যবহার কখতে চান না , তারা একটা তেল বাড়িতে তৈরি করে সপ্তাহে ৬ দিন ব্যবহার কত পারেন। সপ্তাহের বাকি একটা দিন স্নানের ঘন্টাখানেক পূর্বে রসুনের রস লাগিয়ে স্নান করে নিন। তেল তৈরির নিয়ম- তিল তেল ১২৫ গ্রাম, ভৃঙ্গরাজ পাতা ও ডাঁটার রস ২০০ গ্রাম ও কুঁচ ফল (সাদা হলে ভালো, না পেলে লাল ) ১৫ গ্রাম বাটা একসঙ্গে মিশিয়ে হায়কা আঁচে ফোটাতে হবে। ফুটতে ফুটতে যখন রস মরে যাবে, শুধু তেলটি থাকবে, তখন নামিয়ে ঠান্ডা হলে ছেঁকে শিশিতে রাখুন। এটি ব্যবহারে চুল বাড়বে, হঠাৎ পাকবে না। যাদের চুল পাকতে শুরু করেছে, সেটা ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যাবে। নিজে না পারলে কোনও আয়ুর্বেদ চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে বানিয়ে নিতে পারেন।
- এছাড়া আরও একটা তেল তৈরি করে মাখতে পারেন। সেটি এভাবে তৈরি করবেন- ২৫০ গ্রাম অমলকী ২ লিটার জলে সিদ্ধ করে , আধ লিটার থাকতে নামিয়ে ছেঁকে সেই জলটি ১৫০ গ্রাম নারকেল তেল মিশিকে হালক আঁচে ফুটিয়ে জলটি শুকিয়ে গেলে যখন কেবল তেলটি অবশিষ্ট থাকবে, তখন নামিয়ে ঠান্ডা হলে ছেলে একটি শিশিতে রাখুন। এটি প্রত্যহ স্নানের আধ ঘন্টা পূর্বে মাথায় মাখবেনা । যেদিন সাবান বা শ্যাম্পু মাথায় নেবেন, সেদিন তেলটি মাখবেন। সুবিধেমতে তেল দুটির যে কোনও একটি তৈরি করে ব্যবহার করতে পারেন । মনে রাখবেন পাকা চুলকে সমস্যা বলে নিজে থেকে না বলে কোনও সমস্যা নেই।
Reviewed by Wisdom Apps
on
February 27, 2021
Rating:

No comments: