মায়াপুর
অতীতের মিয়াপুর আজকের পরিচিত ধর্মস্থান মায়াপুর। শ্রীচৈতন্যদেবের জন্মস্থান মায়াপুরে, এখানকার বশ্বাস। প্রচলিত কথা, নিম গাছের নীচে জন্মানোর জন্য নাম হয় নিমাই। স্থানীয় একটা মঠ থেকে সেই জন্মস্থানটি লিখিতভাবে প্রচারে দাবী করা হয়েছে মায়াপুরে।
এই মুহূর্তে পর্যটকদের কাছে মায়াপুর ও ইসকন মন্দির প্রায় সমার্থক শব্দ যেন। বহু যাত্রীর কাছে মায়াপুরের কথায় চন্দ্রোদয় মন্দিরের ছবি ভেসে ওঠে। বিশাল চত্বর জুরে তাদের মন্দিরটি শৈলীর। প্রবেশ পথের ডান পাশে ১৪ বছর ব্যাপী নির্মিত বিশাল সমাধি ১০ কোটির বেশি টাকা ব্যয়ে শ্রীশ্রী শ্রীল ভক্তিবেদান্ত প্রভুপাদর। তিনি ইস্কনের প্রতিষ্ঠাতা। পুরো কথাঃ International Society for Krishna Consciousness, এটা জলঙ্গীর তীরে হুলোর ঘাট থেকে ২ কিমি. দূরে। এই পথের আগে পরে বহু মন্দির মঠ রয়েছে। হোটেল লজ ধর্মশালা অতিথিনিবাস এখন এপথ জুড়ে বিরাজ করছে। রিকশ-অটো চুক্তি করে সব দেখা যায়। ইসকনের মন্দির দেখতে সময় বেশি লাগে। তাই একেবারে শুরুতে দেখে রিকশ নেওয়া। নয়তো সব শেষে এখানে আসা উচিৎ হবে। অত্যুৎসাহীরা বল্লাল ঢিবি ও আরো কিছু দ্রষ্টব্য পাবেন। অটো নিলে ভাল হয়। মায়াপুরে মূল রাস্তা একটিই। তার পাশেই যত সব মঠ-মন্দিররাজি। প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী অদ্বৈত্য আচার্য্যের কঠোর সাধনায় মর্ত্যে আবির্ভাব মহাপ্রভুর। এ রাজ্যের পর্যটন মানচিত্রে মায়াপুর নিজস্ব একটা জায়গা করে নিয়েছে। মায়াপুরের সঙ্গে নবদ্বীপ, কৃষ্ণনগর ঘুরে নেওয়াটা সুবিধা।
যাওয়াঃ- কৃষ্ণনগর থেকে সরাসরি বাস আসছে হুলোর ঘাট। ভায়া ধুবুলিয়া। ইসকনের চন্দ্রোদয় মন্দিরের সামনে দিয়েই পথ। কৃষ্ণনগরের অন্য রুটের বাস ও অটো আসছে নবদ্বীপ ঘাট অর্থ্যাৎ স্বরুপগঞ্জে। রেল স্টেশন থেকে ও বাসস্ট্যান্ড থেকে মেলে বাস। ঘাটে এসে নৌকা / খেয়া পেরিয়ে মায়াপুরের হুলোর ঘাটে নামা। ট্রেনপথ কৃষ্ণনগর থেকে। ছোট ট্রেন বড় রেলের পথ-পরিবর্তন হচ্ছে। ওপারের নবদ্বীপধাম স্টেশনে নেমে মায়াপুর আসা যায় রিকশ ও ফেরির যুগ্ম সাহায্যে।
মায়াপুর ভ্রমণের উপর আমাদের বিস্তারিত ভিডিও দেখতে পারেন এখানে ক্লিক করে ।
নবদ্বীপ
বৌদ্ধ-বৈষ্ণব-শাক্ত-শৈব তীর্থের সমন্বয় হলো নবদ্বীপ। গঙ্গায় যেখানে মিলেছে জলঞগী নদী তার বিপরীতে নবদ্বীপ ধাম। জলঙ্গীতে চড়া পড়ে নতুন দ্বীপ সৃষ্টি, তাই নবদ্বীপ। আবার দ্বিমতে পূর্বপাড়ের চার ও পশ্চিমপাড়ের পাঁচটি দ্বীপ মোট নয় দ্বীপের সমন্বয় বলে নবদ্বীপ নাম।
নানা মন্দিররাজি নবদ্বীপ জুড়ে। এখানকার পুরসভার তালিকা ধরলে এর সংখ্যা দাঁড়িয়ে যায় ১৮৬ টি। ছোট-বড়, খ্যাত-অখ্যাত কতো যে মন্দির অলি-গলি পথে তার ইয়ত্তা নেই। একসময়ে বাংলার রাজধানীও ছিল। রাজা লক্ষন সেন তুলে এনেছিলেন রাজধানী গৌড় থেকে। সেসব ১১-১২ শতকের ইতিহাস। খুব প্রাচীন শহর হবার জন্যেও পরিকল্পিত পথঘাট নেই। শহর তাই বেশ ঘিঞ্জি। পুরোনো ও জরাজীর্ণ বাড়িতে, প্রাচীন মন্দিরে পরিপূর্ণ।
শ্রীশ্রীচৈতন্যের জন্মস্থান নবদ্বীপ না মায়াপুর এ নিয়ে টানা-পোড়েন দু-পক্ষে। তবে গৌরাঙ্গদেবের দ্বিতীয় পত্নী বিষ্ণুপ্রিয়া নবদ্বীপে জন্মেছেন। মহাপ্রভুর জন্য নবদ্বীপ আজ বিশ্বে বিখ্যাত।
শহরের অন্যতম আকর্ষন অবধারিত ভাবেই গঙ্গা। খেয়াতে পারাপার চলে ওপারের স্বরুপগঞ্জ ও মায়াপুরের। সঙ্গমে জলঙ্গীর দুই পারে ওই দুই স্থান এবং দুটোই গঙ্গার পাড়ে। সঙ্গমে এক সময়ে প্রচুর পরিমানে শুশুক দেখা যেত। জলঙ্গীর সবুজ স্বচ্ছ জলের সঙ্গে গঙ্গার ঘোলা জলের পার্থক্য নতুন যাত্রীদের বিস্মিত করে। মায়াপুর গেলেই পেরোতে হয় এ সঙ্গম।
রাসযাত্রার প্রচুর জাঁকজমক হয়। তেমনি ভীড়। জায়গা মেলা ভার। দোলযাত্রায় চৈতন্যদেবের জন্ম তাই এটাও উৎসবের সময়। রাসযাত্রার শান্তিপুরের বিখ্যাত।
নানা ভাবে নবদ্বীপ ঘোরা যায়। হেঁটে হেঁটে বা রিকশয়। মন্দিররাজি দর্শনে রিকশ চুক্তিই শ্রেয়। সব মন্দির দেখা সম্ভবও নয়। মহাপ্রভুর বিগ্রহ মন্দির, বুড়ো শিব, হরিসভা ইত্যাদি। তারপরে পোড়ামাতলাতে লোকায়ত দেবী। অদ্বৈত প্রভু, মহাপ্রভু, জগাইমাধাই, শচীমাতা-বিষ্ণুপ্রিয়া জন্মভিটাতে নিত্যানন্দ মহাপ্রভুর মন্দির ইত্যাদি। এছাড়া বড় আখড়া, শ্রীশ্রী গোবিন্দ নিউ, সোনার গৌরাঙ্গ হরেক মন্দির। ২৪ ঘন্টাই নবদ্বীপে নাম-ভজন চলে মন্দিরগুলিতে।
যাওয়াঃ- ব্যান্ডেল থেকে লোকাল ট্রেনে ২ ঘন্টায় নবদ্বীপ ধাম স্টেশন। কৃষ্ণনগর থেকে নবদ্বীপঘাট রেল বন্ধ এখন। তাই বাসে এসে খেয়া পার। গৌরাঙ্গ সেতু হয়েও বাস আসছে নবদ্বীপে। হাওড়া/শিয়ালদহ থেকে এক্সপ্রেস ট্রেনে নবদ্বীপ ধামে আসা সুবিধা।
নদীয়ার দর্শনীয় স্থান - মায়াপুর ও নবদ্বীপ
Reviewed by Wisdom Apps
on
August 28, 2018
Rating:
No comments: