সরস্বতী দেবী আদৌ ব্রহ্মার মেয়ে ছিলেন না আর তাঁদের নিয়ে যে মিথ্যা প্রচার চালানো হয় তার প্রকৃত সত্যটা জানুন

সরস্বতী দেবী কি ব্রহ্মার মেয়ে ছিলেন ? আর ব্রহ্মা কি সরস্বতী দেবীকে কুনজরে দেখে ছিলেন ? এবং বিয়ে করেছিলেন ? 






না , ব্রহ্মা কোনদিনও নিজ মেয়েকে বিয়ে করেননি । যারা জানেন না তারা হিন্দু ধর্মের অপপ্রচার করার জন্য বিভিন্ন ভিডিও বানিয়ে ইউটিউবে ছেড়েছে । আমাদের এই লেখাটি পড়ার পর  নিজ বুদ্ধি দিয়ে বিচার করে বুঝে নিন কোনটা সত্যি আর কোনটা মিথ্যা !! 

হিন্দু ধর্মের এই মিথ্যা কালিমা মোছার জন্য এই লেখাটি আপনাকে শেয়ার আপনাকে করতেই হবে । লেখার একেবারে শেষে শেয়ার বটন পেয়ে যাবেন । 

হিন্দু ধর্মের গভিরতা নিয়ে রিসার্চ করছেন এমন দেশি ও বিদেশী গবেষকদের বই পড়েই কনফার্ম হয়ে এই লেখা । যে যে বই পড়ে এই ভিডিও বানানো হয়েছে তার মধ্যে থেকে কিছু বইয়ের লিঙ্ক আমরা নীচে দিয়ে দিয়েছি ,সন্দেহ থাকলে পড়ে নিতে পারেন ।  আপাতত লেখাটি  শেষ পর্যন্ত মন দিয়ে পড়ুন । 

অনেক ইউটিউব ভিডিওতে  দেখা যায় দেবী সরস্বতীকে ব্রহ্মার মেয়ে বলে প্রমান করার চেষ্টা করা হয়েছে এবং ভগবান ব্রহ্মা দেবী সরস্বতিকে বিয়ে করেছেন এমনটা দেখানো হয়েছে ।  এই কথাটি প্রমান করার জন্য তারা সরস্বতী পুরাণ নামের এক হিন্দু পুরানের উল্লেখ করেছে । এরা হিন্দু পুরাণ সম্বন্ধে খুব কম জানে । আমার কথা বাদ দিন , এই দেখুন উইকিপিডিয়ার হিন্দু পুরাণ পেজ ,  এখানে পরিস্কার ভাবে হিন্দু ধর্মের প্রকৃত পুরাণ গুলির কথা উল্লেখ করা আছে । সরস্বতী পুরানের উল্লেখ উইকিপিডিয়ার কোথাও নেই । বোঝা যাচ্ছে এই ভিডিওগুলি হিন্দু ধর্মকে কালিমালিপ্ত করার এক বিপুল ষড়যন্ত্র শুরু করেছে । 
এই ষড়যন্ত্রের শিকড় খুঁজতে আমরা বিভিন্ন বই পড়া শুরু করি । আমরা যা যা জেনেছি তা থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলি আপনাদের সাথে শেয়ার করছি - 

বিভিন্ন গল্প কথায় ব্রহ্মা বিষ্ণু , শিবের গল্প পড়তে পড়তে আমরা এনাদেরকে সাধারন মানুষ মনে করা শুরু করে দিয়েছি , তাই বাংলা সিরিয়ালের মত আমরা তিন ভগবানের বিয়ে , বাচ্চা এবস নিয়ে এত চিন্তিত হয়ে পড়েছি । মাথা থেকে এই বাংলা সিরিয়াল মার্কা কনসেপ্ট ঝেড়ে ফেলতে হবে । এনারা হলেন ট্রিনিটি - ব্রহ্মা , বিষ্ণু শিব । এনারা হলেন ভগবান । 
প্রথমে ট্রিনিটি র একজন ভগবান ব্রহ্মার সম্বন্ধে কিছু কথা শুনে নিন  । ভগবান বিষ্ণুর নাভী থেকে একটি পদ্মফুল বেরিয়ে আসে আর সেই পদ্মের ভিতরেই ছিলেন ভগবান ব্রহ্মা । ভগবান বিষ্ণু তাকে দায়িত্ব দেন সমস্ত ব্রহ্মান্ড রচনা করার । সেই হিসাবে ভগবান ব্রহ্মাকে সৃষ্টিকর্তা বলা হলেও যেহেতু ভগবান বিষ্ণুর শরীর থেকেই ব্রহ্মার সৃষ্টি তাই ব্রহ্মাদেবের গুরুত্ব বিষ্ণুদেবের থেকে বেশ কিছুটা কম । 

হিন্দু মাইথোলজি অনুযায়ী ভগবান ব্রহ্মা সারাদিন ধরে ব্রহ্মান্ড ও পৃথিবীর সৃষ্টির কাজে ব্যস্ত থাকেন । সুন্দর করে এই ব্রহ্মান্ড সৃষ্টি করার পর দিনের শেষে তিনি যখন ঘুমাতে যান তখন শুরু হয় প্রলয় । এই প্রলয়ে তার বানানো এই স্বর্গ , নরক ও পাতাল - এবং সমস্ত ব্রহ্মান্ড ধ্বংস হয়ে যায় । পরের দিন সকালে উঠে আবার তিনি নতুন করে ব্রহ্মান্ড বানানো শুরু করেন । এখন আপনি ভাবছেন - এমন হয় নাকি , আপনি তো প্রতিদিন সকালে উঠে পৃথিবী একই রকম দেখেন । কোনোদিনও আপনি সকালে উঠে পৃথিবী ধ্বংস হতে তো দেখেননি !! কেন দেখেননি বুঝুন , আমাদের যেমন ২৪ ঘণ্টায় ১ দিন হয় , ভগবান ব্রহ্মার সময়কাল আলাদা নিয়মে চলে , একে বলে কল্প । এবার ১ কল্প মানে কত দিন সেটা বুঝিয়ে দিই আগে । 
হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী যুগ ৪ টে । সত্য , ত্রেতা , দ্বাপর ও কলি । এখন চলছে কলি যুগ । কলি যুগের সময়কাল হচ্ছে ৪৩২০০০ বছর । দ্বাপর যুগের সময়কাল কলি যুগের দ্বিগুন অর্থাৎ ৮লক্ষ ৬৪হাজার বছর । তেমনই ত্রেতা যুগ হল কলি যুগের ৩ গুন অর্থাৎ ১২লক্ষ ৯৬ হাজার বছর এবং সবথেকে বেশী সময়কাল হল সত্য যুগের - কলি যুগের চারগুন অর্থাৎ ১৭লক্ষ ২৮হাজার বছর । এখন এই চার যুগ মিলিয়ে মোট সময়কাল হল ৪৩লক্ষ ২০হাজার বছর । এটাকে বলে এক মহাযুগ । এইরমকম ১০০০ মহাযুগ নিয়ে তৈরি হয় ১ কল্প অর্থাৎ ভগবান  ব্রহ্মার ১ দিন । 
অর্থাৎ ভগবান ব্রহ্মার  ১ দিন  পৃথিবীর ৪.৩২ বিলিয়ান বছরের সমান । আপনাদের যাদের মনে হয় এমনটা হতে পারে না তারা হলিউডের বিখ্যাত ইন্টারস্টেলার সিনেমাটি দেখে নেবেন । সেখানে পরিস্কার ভাবে ব্রহ্মার সময়ের কনসেপ্ট ব্যবহার করা হয়েছে । দেখবেন মহাকাশচারীরা ভিন গ্রহে কয়েক মিনিট কাটালেই পৃথিবীতে কীভাবে কয়েক বছর কেটে যায় । সময় যে চতুর্থ ডাইমেনশান সেটা এই সিনেমাতে যেমন বোঝানো হয়েছে তেমনই হাজার হাজার বছর আগে হিন্দু শাস্ত্রে বলা আছে ।  

যাইহোক,  আপনারা জানেন হিন্দু শাস্ত্র মতে যা জন্মাবে তা একদিন মারা যাবেই , এই তত্ব ভগবান ব্রহ্মার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য , তিনি যেহেতু জন্মেছেন তাই তিনি প্রতি ১০০ বছর পর মারা যান এবং নতুন ব্রহ্মার সৃষ্টি হয় । কিন্তু ভগবান ব্রহ্মার এই ১০০ বছর হল  ৩১১.০৪ ট্রিলিয়ন মানব বছরের সমান । ১ট্রিলিয়ন মানে কত - গুগলে সার্চ করে নেবেন । 

আশাকরি অন্তত এটুকু বুঝেছেন  যে ভগবান ব্রহ্মা আপনার পাড়ার বুড়ো দাদু নন যিনি লাখ টাকা পন নিয়ে বিয়ে করার জন্য পাগল হয়ে গেছেন  । ইনি সৃষ্টিকর্তা । ইনি ব্রহ্মান্ড সৃষ্টি করেছেন এবং সাথে সাথে তিনি প্রকৃতিকেও সৃষ্টি করেছেন । প্রকৃতি হলেন শতরূপা , যে শত শহস্ত্র রূপ ধারন করতে পারে । ভাবুন আপনি আপনার চারপাশে যা যা দেখছেন সবই প্রকৃতিরই বিভিন্ন রূপ । এই প্রকৃতি হলেন নিখাদ নলেজ অর্থাৎ শুদ্ধ জ্ঞানের দেবী সরস্বতী । আর ভগবান ব্রহ্মা এই প্রকৃতি অর্থাৎ সরস্বতী অর্থাৎ শতরূপাকে নিয়ন্ত্রিত করতে চেয়েছিলেন অর্থাৎ তিনি প্রকৃতিকে নিজ ক্ষমতায় আনতে চেয়েছিলেন ।  আসলে  উনি অহঙ্কার বসে ভেবেছিলেন , আমি সৃষ্টিকর্তা , আমার নিয়ন্ত্রনেই থাকবে প্রকৃতি । এইখানে কিছু লোকে ভেবে বসে সরস্বতী বুঝি ব্রহ্মার মেয়ে আর ব্রহ্মা তাকে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন । আসলে যারা বিয়ে মানেই ভাবে মেয়েদেরকে নিয়ন্ত্রন করে রাখা তারাই এই নিয়ন্ত্রন করাকে বিয়ে মনে করে ।
 যাইহোক আসল কথা হল এই প্রকৃতিকে সৃষ্টি করে ভগবান ব্রহ্মা অস্থির হওয়া শুরু করেন । প্রকৃতি নিজে যেহেতু শত শহস্ত্র রূপ ধারন করতে পারেন তাই তিনি স্বনিয়ন্ত্রিত , তিনি স্বাধীন , তিনি ব্রহ্মার নিয়ন্ত্রনে থাকতে চান না । প্রকৃতিকে সর্বদা চোখে চোখে রাখার জন্য ভগবান ব্রহ্মার ৫ টি মাথার সৃষ্টি হয় , আসলে এটাও রূপক অর্থে ব্যবহার কয়া হয়েছে , ব্রহ্মার ৫ মাথার সৃষ্টি হয়নি , তিনি সব কাজ ভুলে শুধু প্রকৃতিকে নিজ নিয়ন্ত্রনে আনার কথাই ভাবতে থাকেন ।  ভগবান শিব ব্রহ্মার এই মানসিক অস্থিরতাকে নিয়ন্ত্রন করার জন্যই তার পঞ্চম মাথাটি খন্ডিত করে তাকে উপলব্ধি করান যে প্রকৃতি কারোর নিয়ন্ত্রনে থাকার নয় । সে শতরূপা , সে সর্ব শক্তিময়ী , সে স্বাধীন । 
আপনারাই ভাবুন , প্রকৃতিকে কি কেউ কোনদিন নিয়ন্ত্রন করতে পেরেছে না পারবে ? 
আমাদের তিন ভগবান - ব্রহ্মা বিষ্ণু ও মহেশ্বর , তিনজন প্রকৃতিকে তিন ভাবে দেখেছেন । ভগবান শিব প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল নন তাই তিনি উদাসিন সন্ন্যাসি হয়ে চোখ বন্ধ করে ধ্যানমগ্ন হয়েছেন  , আর ভগবান বিষ্ণু প্রকৃতিকে সঠিক সন্মান করে তাকে দেবী রূপে আহ্বান করেছেন ,  তাই তিনি যোগ্য সন্মানের অধিকারী কিন্তু ভগবান ব্রহ্মা প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রন করতে গেছেন ,তাই তিনি মানুষের কাছে তার ভগবান হিসাবে পুজো পাওয়ার যোগ্যতা হারিয়েছেন   । এখানে ভগবান শিব ও ভগবান বিষ্ণুকে সমান চোখে দেখা হচ্ছে । কিন্তু ব্রহ্মা যেহেতু প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রন করে নিজ বশে আনার চেষ্টা কিরেছিলেন তাই তিনি পুজো পাওয়ার যোগ্য নন । 

বর্তমান সমাজেও এই ব্যাপারটি সমান ভাবে প্রযোজ্য , আপনি কেমন মানুষ তা নির্ভর করে পরিবারের প্রতি ও সমাজের প্রতি আপনার ব্যাবহারে । যে মানুষ সমাজ ও পরিবার সম্বন্ধে উদাসিন তিনি সন্ন্যাসী তাকে নিয়ে ভাববার কিছু নেই ,  তিনি নমস্য ,  তিনি শিব । যিনি পরিবার ও সমাজকে সঠিক সন্মান দেন তাকে সমাজের মানুষ মাথায় তুলে রাখে আর পরিবারের লোকজনের কাছ থেকেও তিনি প্রানভরা ভালোবাসা পান , তিনি হলেন বিষ্ণু । আর যে মানুষ পরিবারের ও সমাজের মানুষদের নিয়ন্ত্রন করতে চান তিনি কারোর ভালোবাসা পান না , লোকে হয়ত তাকে ভয় পায় কিন্তু ভালোবাসে না ,তিনি হলেন ব্রহ্মা ।  তিনি ব্রহ্মার ন্যায় পুজো পাওয়ার অধিকার হারান অর্থাৎ মানুষের ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হন ।
আর  এবার আপনি ভাবুন , আপনি কোন ভগবানের স্বরূপ । 
আশাকরি , এই লেখাটি থেকে আপনি নিজের বুদ্ধি লাগিয়ে হিন্দু ধর্মের এই গভীর জ্ঞানটি বুঝতে পারলেন । এবার শেয়ার করার পালা । শেয়ার করে সমস্ত হিন্দু বিরোধী মানুষ গুলোকে জানিয়ে দিন - প্রকৃত সত্য । 

সরস্বতী দেবী আদৌ ব্রহ্মার মেয়ে ছিলেন না আর তাঁদের নিয়ে যে মিথ্যা প্রচার চালানো হয় তার প্রকৃত সত্যটা জানুন সরস্বতী দেবী আদৌ ব্রহ্মার মেয়ে ছিলেন না আর তাঁদের নিয়ে যে মিথ্যা প্রচার চালানো হয় তার  প্রকৃত সত্যটা জানুন Reviewed by Wisdom Apps on জানুয়ারী ২২, ২০২০ Rating: 5

1 টি মন্তব্য:

  1. আচ্ছা দাদা সরস্বতী পুরান যদি না থাকে তাহলে দাদা আপনি এই কাহিনিটা কোথা থেকে পেলেন?

    উত্তরমুছুন

Blogger দ্বারা পরিচালিত.