নামচি চারধাম ভ্রমণ গাইড , কীভাবে যাবেন ? কি কি দেখবেন ?

নামচি ,
নামচি চারধামের ট্যুর সহ বিস্তারিত জানতে পারবেন এই ভিডিও থেকে ।
পেলিং থেকে ২য় দিনের ট্যুর প্ল্যানে যেতে পারেন রাভাংলা ও নামচি । 
নিউ জলপাইগুড়ি থেকে গাড়ি রিজার্ভ করে সরাসরি নামচি আসা যায় দুরত্ব ৯৫ কিমি , সময় লাগে ৩ থেকে ৪ ঘন্টা । তবে পেলিং বা গ্যাংটক থেকে সাইট সিন হিসাবে নামচি ঘুরে নেওয়া বেশি ভালো । পেলিং থেকে গাড়ি ভাড়া করলে নামচি রাভাংলা ও টেমি টি গার্ডেন ঘুরিয়ে গাড়ি হোটেলে নামিয়ে দেয় , ভাড়া পরে গাড়ি পিছু ৩০০০ থেকে ৩৫০০ টাকা , অবশ্যই দরদাম করে নিতে হবে । রাভাংলা থেকে নামচি চারধামের দুরত্ব মাত্র ২৭ কিমি , কাজেই রাভাংলা ও নামচি এই দুটি স্থান এক ট্রিপেই ঘুরে নেওয়া উচিৎ । 

মহাভারত থেকে জানা যায় অর্জুনের কঠোর তপস্যায় সন্তুষ্ট হয়ে দেবাদিদেব মহাদেব  , কিরিটেস্বর রূপ নিয়ে অর্জুনকে দেখা দেন । এই ঘটনাটি ঘটেছিল ইন্দ্রকিলে । এই ইন্দ্রকিলেরই বর্তমান নাম সিকিম । সিকিমে একটি কিরিটেস্বর মন্দির আছে । অনেক গাড়িই সাইট সিনে এখানে যায় না ।  এই কিরিটেশ্বর মন্দিরের ৩২ কিমি দূরে ৫৫০০ ফুট উঁচু পাহাড়ের শিখরে চারধাম মন্দির  অবস্থিত । গাড়িপথে যেতে যেতে পাহাড়ের নিচ থেকেই দেখতে পাবেন পাহাড়ের চুড়ায় ধ্যানমগ্ন হয়ে বসে আছেন দেবাদিদেব মহাবেদ । পাহাড়ের গা বেঁয়ে আকাবাকা রাস্তা ধরে গাড়ি আপনাকে পৌঁছে দেবে চারধামের গেটের কাছে । গাড়ি থেকে নেমে সিড়ি বেঁয়ে উপরে উঠে যান , বা হাতে টিকিট কাউন্টার পাবেন । মাথাপিছু ৫০ টাকা করে টিকিট কেটে প্রবেশ করুন । সিকিউরিটি চেক পার করলেই সামনে দেখতে পারবেন  চারধামের ছোট রেপ্লিকা মডেল  । এটা ছাড়িয়ে সিড়ি বেঁয়ে উপরে উঠে গেলে ডানদিকে চটি, জুতো রাখার জায়গা দেখতে পাবেন । এখানে চটি জুতো রেখে কুপন নিয়ে এগিয়ে চলুন দর্শনের উদ্দেশ্যে । পায়ে হেঁটে ঘুরতে অসুবিধা হলে ব্যাটারি চালিত গাড়ি করেও ঘুরতে পারেন । 

কিছুটা এগিয়ে গেলেই দেখতে পারবেন ভারতের সব থেকে বিখ্যাত  তীর্থস্থান  যথা বদ্রিনাথ ধাম , জগন্নাথ ধাম , দ্বারকা ও রামেস্বরম ধামের মন্দিরের অনুকরনে তৈরি রেপ্লিকা মন্দির গুলি একইসাথে গলাগলি করে অবস্থান করছে । আর  মন্দির গুলির ঠিক মাঝখানে ১০৮ ফুট উঁচু কারুকার্যপূর্ণ মন্দিরের মাথায় আশীর্বাদ মুদ্রায় বসে আছেন ৮৭ ফুট উঁচু শিব ও শম্ভু ভোলানাথ। এই দৃশ্য আর চারিদিকে উচ্চারিত মন্ত্রের ধ্বনি আপনার মনে অভিনব এক ভক্তিভাব জাগিয়ে তুলবে । 
আমরা  সিদ্ধ্বেস্বর দুয়ার দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করেছিলাম, এখান দিয়ে প্রবেশ করলে  ঢোকার মুখে দেখতে পাবেন বিশ্বেশ্বর জোতিরলিঙ্গ ও মন্দির ,মুখ্য মন্দিরের চারপাশ ঘিরে ১২টি জোতিরলিঙ্গ ও মন্দির আছে ।  জোতিরলিঙ্গ মন্দির গুলি দেখে নিয়ে এগিয়ে যেতে পারেন মুখ্য শিব মন্দিরের দিকে । মন্দিরে প্রবেশের আগে মহাদেবের বিশালাকার মূর্তির পরিক্রমা করলে মনে এক অনাবিল আনন্দ অনুভব করবেন । মুখ্য শিব মন্দিরের ভিতরে প্রবেশ করলে দেখবেন ভিতরের দেওয়ালে শিব পুরানের অনেক গল্প খোদাই করে আঁকা আছে , সময় নিয়ে দেখবেন , অনেক কিছু দেখার আছে   ।  বিশেষ অনুমতি ছাড়া এই মন্দিরের ভিতরে ছবি তোলা বারন । বেরিয়ে আসার সময় মন্দির প্রবেশে দ্বারের কাছে সুন্দর একটি শিব মূর্তি ও শিব লিঙ্গ দেখতে পাবেন ।  এখানে যে শিবলিঙ্গ আছে তার চারপাশে যথাক্রমে নন্দি ,শ্রী গনেশ ,  ব্রহ্মাদেব ও ভগবান শ্রী বিষ্ণুর মূর্তি আছে , এই শিবলিঙ্গে অবশ্যই জল ঢালবেন  । 

পাহাড়ের এত উঁচুতে হওয়ায় মাঝে মাঝেই দেখবেন মেঘের ভিতরে হারিয়ে গেছেন ভোলানাথ । আমরা ওনার সাথে একটা ছবি নিতে গিয়েছিলাম ।  দেখি উনি ইচ্ছুক নন তাই মেঘের কোলে হারিয়ে গেলেন  । অপেক্ষা করলাম , এক পশলা বৃষ্টি হওয়ার পর আবার দেখা দিলেন । তখন একটা সেলফি নিয়েছি । 



মন্দিরের বাইরে বেড়িয়ে দেখতে পারবেন বিশালাকার নন্দি মহারাজ গ্যাট হয়ে বসে মহাদেবের দিকে চেয়ে আছেন  ।নন্দি মহারাজের পাশ দিয়ে নেমে ডান দিকে  গেলে দেখতে পাবেন সাঁই মন্দির । 
সাঁই মন্দির দেখে একটু পাশে এলে দেখতে পাবেন দ্বারকা ধাম । ভিতরে দেখা পাবেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণের । 

দ্বারকা ধামের পাশেই রামেশ্বরম ধাম বা রামেস্বরম মন্দির ।  ভিতরে প্রবেশ করলে দেখতে পাবেন কষ্টি পাথরের তৈরি শিব লিঙ্গ , সামনে বসে নন্দী মহারাজ ।  

রামেস্বরম মন্দিরের পাশেই জগন্নাথ ধাম । প্রবেশ করলে দেখা পাবেন জগন্নাথ দেবের ।   

জগন্নাথ মন্দির দর্শন করে বাইরে এলে সামনে দেখতে পারবেন  ভগবান শিবের কিরিটেশ্বর মূর্তি ।



 এই মূর্তিটি সাড়ে ১৬ ফুট উঁচু , হাতে ধনুক , পিঠে তূণীর , গলায় শেষনাগ আর রুদ্রাক্ষের মালা  । জটাধারী কিরিটেশ্বরকে প্রনাম ঠুকে বেরিয়ে আসুন বাইরে । মনে রাখবেন চারধামের প্রতিটি মন্দির ও বিগ্রহগুলি আসল মন্দিরের অনুকরনেই তৈরি ।  আসল মন্দিরগুলির থেকে এগুলি বেশ কিছুটা ছোট হলেও এখানে সঠিক নিয়ম মেনেই পুজো দেওয়া হয়।  হাতে সময় থাকলে আপনার ইচ্ছামত মন্দিরে অবশ্যই  পুজো দেবেন । 

মন্দির ছাড়াও আশেপাশে আরও কিছু মূর্তি দেখতে দেখতে পাবেন , সময় নিয়ে ঘুরে দেখলে ভালো লাগবে । 
সমস্ত মন্দির ও মূর্তি দেখার পর ফেরত এসে চটি জুতো ফেরত নিয়ে পাশেই একটি ওপেন ফুড কোর্ট দেখতে পাবেন । এখানে নিরামিষ ভাতের ব্যবস্থা আছে । পুরোটাই সেলফ সার্ভিস । নিরামিষ থালি ২০০ থেকে ২৫০ টাকা / প্লেট । ফুড কোর্টের প্রবেশের মুখে একটা চকলেট, বিস্কুট , কোল্ড্রিঙ্কস এর দোকান পাবেন , এই দোকান থেকেই ভাতের কুপন কিনতে হবে । এই দোকানে সমস্ত প্যাকেট খাবারের দামের উপর ৫টাকা বেশী দিতে হয়  । এই ফুড কোর্টের ভিতরেই বেশ কয়েকটি বাথরুম আছে , ফ্রেশ হয়ে নিতে পারেন । 
ভাত খেয়ে এখানেই কিছুক্ষন রেস্ট নিয়ে নিতে পারবেন  ।


রেস্ট নিয়ে সিঁড়ি বেঁয়ে নীচে এলে ট্যাক্সি স্ট্যান্ডের সামনে এসে পরবেন ।  

মোটামুটি এই ছিল নামচি ট্যুর প্ল্যান । গাড়ি আপনাকে নামচি ঘুরিয়ে টেমি-টি গার্ডেন নিয়ে যেতে পারে । আমাদের হাতে একেবারেই সময় ছিল না তাই আমরা সরাসরি গ্যাংটক গেছিলাম । নামচী থেকে গ্যাংটক যাওয়ার পথ ভীষণ আঁকা বাকা । রাস্তায় হঠাত করে সন্ধ্যে নেমে এসেছিল । তার উপরে কুয়াশা ।  ভয়ংকর এক অভিজ্ঞতা হয়েছিল । পরবর্তী কোনো একটি ভিডিওতে এই ঘটনাটি জানাবো ।  অন্ধকার হয়ে এলে কোনোদিনও এই রাস্তায় যাবেন না । নামচি থেকে পেলিং ফেরত চলে যাওয়া অনেক ভালো ।


নামচি চারধাম ভ্রমণ গাইড , কীভাবে যাবেন ? কি কি দেখবেন ? নামচি চারধাম ভ্রমণ গাইড , কীভাবে যাবেন ? কি কি দেখবেন ? Reviewed by Wisdom Apps on আগস্ট ২৪, ২০১৯ Rating: 5

কোন মন্তব্য নেই:

Blogger দ্বারা পরিচালিত.