বিগ ব্যাং থিয়োরি সম্বন্ধে অজানা তথ্য জানিয়ে নোবেল পেয়েছিলেন এই দুই বিজ্ঞানী - জন সি. ম্যাথার ও জর্জ এফ. স্মুট এর জীবনী

জন সি. ম্যাথার ও জর্জ এফ. স্মুট

Jhon C Mather 
২০০৬ খ্রিস্টাব্দে পদার্থ বিজ্ঞানে নোবেল পেয়েছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দুইজন বিজ্ঞানী। তাঁদের মধ্যে একজন জন সি ম্যাথার ও অন্যজনের নাম জর্জ এফ. স্মুট। ছোট্টবেলা থেকে ম্যাথার ছিলেন এক আদ্যন্ত বিজ্ঞানপিপাসু মানুষ। সম্প্রতি এক স্মৃতিচারণে তিনি তাঁর ফেলে আসা দিনযাপনের কথা অকপটে স্বীকার করেছেন। সমবয়সী বন্ধুরা যখন মাছ ধরা কিংবা সাইকেলে ঘুরে বেড়াতে ভালোবাসতেন, তখন জন সি ম্যাথার অংকের আকিবুঁকির মধ্যে মুখ গুঁজে বসে থাকতেন। তখন থেকেই তাঁর জীবনের একমাত্র লক্ষ্য তথা উদ্দেশ্য ছিল কিভাবে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টি রহস্যের আবরণ উন্মোচিত করা যায়।
তারপর একটু বড়ো হলেন ম্যাথার। এলেন বিশ্ববিদ্যালয়ে। পড়ার অবসরে ছেলেমেয়েরা ঠাট্টা আনন্দে মশগুল হয়ে ওঠেন, কিন্তু ম্যাথারের সেদিকে নজর নেই। তিনি লাইব্রেরিতে বসে মোটা মোটা বই পড়তেন। মাথার ভিতরে চিন্তার পোকার কিলবিল করে। ভাবতে থাকেন এই যে বিশাল ব্রহ্মান্ড,  এর আদি কোথায়, অন্ত কোথায় ? যদিও ইতিমধ্যে আলবার্ট আইনস্টাইন প্রমুখ অনেক বিজ্ঞানী এই বিশ্বরহস্য উন্মোচনে উল্লেখযোগ্য গবেষণা করে গেছেন। কিন্তু ম্যাথারের কেবলই মনে হয়, কোথায় যেন একটা ফাঁক থেকে গেছে। কিছুতেই আমরা পৃথিবীর আসল রহস্যটাকে বুঝতে পারছিনা। কবে সেই রহস্য উন্মোচিত হবে ? একুশ বছরের ম্যাথারের এই প্রশ্ন তুলেছিলেন। তিনি একটি সংবাদপত্রে এই বিষয়ে প্রতিবেদন লেখেন। তখন থেকেই তাঁর নাম বিজ্ঞানী মহলে ঘুরতে থাকে। 
মার্কিন দেশে জন্মগ্রহণ করায় আধুনিকতম সুযোগ সুবিধা তিনি পেয়েছিলেন। সেই সুবিধাগুলিকে কাজে লাগিয়ে অল্প বয়সেই তিনি এক বিশিষ্ট গবেষক হিসাবে পরিচিতি অর্জন করেন। তিনি একদৃষ্টে তাকিয়ে আছেন শক্তিশালী টেলিস্কোপের লেন্সের দিকে। বিশাল মহাবিশ্বের বুকে কত-না ঘটনা ঘটে চলেছে। পৃথিবীর মানুষ হয়ে আমরা তার কতটুকু খবর রাখতে পারছি? ম্যাথার তখন থেকে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, একদিন তিনি মহাবিশ্বের এই রহস্য উন্মোচন করবেনই।
শেষপর্যন্ত বিগব্যাং থিয়োরি সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ন গবেষণা করে জন সি ম্যাথার পেলেন বিজ্ঞানে নোবেল পুরুষ্কার। অনেকদিন থেকেই আমরা বলে থাকি, ব্রহ্মান্ড আসলে একটি মহা বিস্ফোরণের ফল, যাকে বলে বিগ ব্যাং থিয়োরি। কিন্তু অনেক বছর আগে এই পৃথিবী কেমন ছিল? নাসার কৃত্রিম উপগ্রহ কসমিক ব্যাকগ্রাউন্ড এক্সপ্লোরারে সাহায্যে ম্যাথার এই গবেষণা করলেন। সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন তার এক সহযোগী আর-এক বিজ্ঞানী। তিনি হলেন জর্জ এফ. স্মুট। তাঁদের যুগ্ম গবেষণায় আমরা জানতে পারি, আজ থেকে অনেক লক্ষ বছর আগে মহাবিশ্ব ঠিক কিরকম ছিল। উপগ্রহের সাহায্যে গবেষণা চালিয়ে তাঁরা এই গুরুত্বপূর্ন তথ্য আমাদের হাতে তুলে দিয়েছেন। বিগ ব্যাং-এর ফলে তৈরি শক্তি এখনো বিশ্বব্রহ্মান্ডে ছড়িয়ে আছে। কিন্তু সব জায়গাতে তা সমান ভাবে ছড়িয়ে নেই। এর কারণও জানিয়েছেন ওই দুই গবেষক। জানিয়েছেন কোথায় ওই শক্তির পরিমান কম এবং কোথায় ওই শক্তির পরিমান কিছুটা বেশি।
তাঁদের আর-একটি গবেষণার কথাও প্রসঙ্গে বলা উচিত। তাঁরা অনেকদিন থেকেই অনুমান করেছিলেন যে, ওই বিস্ফোরণের অন্তরালে কোনো একটা অদৃশ্য শক্তি নিহিত ছিল। এই শক্তিটি আসলে কি, তা এখনো পর্যন্ত কেউ বের করতে পারেননি। কিন্তু এই দুই বিজ্ঞানী বললেন, এই শক্তি হল প্রচন্ড সঙ্কুচিত বীজ যা বস্তু। তারা নানাদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এই বিজগুলির আকর্ষনে পদার্থ জমতে থাকে। তৈরি হয় নতুন বস্তুপিন্ড। 
কসমিক মাইক্রোওয়েভ ব্যাকগ্রাউন্ড এক্সপ্লোরারকে তাঁরা নানাভাবে কাজে লাগিয়েছেন। অসংখ্য ছবি তুলেছেন। তাঁরা দেখিয়েছেন যে মহাবিশ্বের বুকে এখনও নিরন্তর পরিবর্তন ঘটে চলেছে। ভবিষ্যৎকালে তাঁদের এই গবেষণার পথ ধরে আরও অনেক নতুন বিজ্ঞানী এগিয়ে আসবেন, এবিষয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই।
George Smoot 
এবার জর্জ এফ. স্মুটের কথা বলি। আত্মভোলা স্বভাবের এই মানুষটিকে দেখলেই মনে হয় না যে, তিনি মার্কিন দেশের বাসিন্দা। নামকরা বিজ্ঞানী হলে কি হবে, তার দিন কাটে একান্ত নিঃসঙ্গতার মধ্যে। সকলে যখন ঘুমে অচেতন, তখনও তিনি ল্যাবরেটরিতে আত্মনিমগ্ন থাকেন নিত্যনতুন গবেষণায়। এই প্রসঙ্গে স্ফুট তাঁর ফেলে আসা দিনযাপনের কথা স্বীকার করেছেন। মোটামুটি সম্পন্ন পরিবারের সন্তান হয়ে পৃথিবীর আলো দেখেছিলেন তিনি। ছোটবেলা থেকেই বিজ্ঞানের প্রতি উৎসুক ছিল ঘুমিয়ে। বড়ো হবার সঙ্গে সঙ্গে তা ক্রমশ বাড়তে থাকে। তুখোর ছাত্র হিসাবে খুব একটা পরিচিত ছিল না। মোটামুটি মেধাবী মানের ছাত্র ছিলেন তিনি। কিন্তু পরীক্ষাতে ফল করতেন খুবই ভালো। অচিরেই অধ্যাপকদের প্রিয়পাত্র হয়ে ওঠেন। গবেষণার কাজে আত্মনিয়োগ করার পর প্রথমদিকে ছিলেন নিষ্প্রভ অবস্থায়। চুপচাপ একা একা বসে ভাবতে ভালোবাসতেন। আত্মপ্রচার করা থেকে শত হাত দূরে থাকতেন। পরবর্তীকালে অবশ্য তাঁর চরিত্রের মধ্যে একটা লক্ষণীয় পরিবর্তন ঘটে যায়। তিনি হয়ে ওঠেন এক বিগদ্ধ বিজ্ঞানী।
এই দুই বিজ্ঞানসাধকের ছেলেবেলার দিনযাপনের কথা মনে করলে আমাদের অনেক কথাই মনে পড়ে যায়। আমরা অবাক হয়ে ভাবতে থাকি পরবর্তীকালে যাঁরা কিংবদন্তির মানুষ হয়ে ওঠেন, ছোট্টবেলা থেকেই বোধহয় শুরু হয় তাঁদের নীরব এবং কঠিন অনুশীলন। তা না হলে তাঁরা কিভাবে মানুষের মতো মানুষ হয়ে বেঁচে থাকবেন এই পৃথিবীর বুকে? 

বিগ ব্যাং থিয়োরি সম্বন্ধে অজানা তথ্য জানিয়ে নোবেল পেয়েছিলেন এই দুই বিজ্ঞানী - জন সি. ম্যাথার ও জর্জ এফ. স্মুট এর জীবনী বিগ ব্যাং থিয়োরি সম্বন্ধে অজানা তথ্য জানিয়ে নোবেল পেয়েছিলেন এই দুই বিজ্ঞানী - জন সি. ম্যাথার ও জর্জ এফ. স্মুট এর জীবনী Reviewed by Wisdom Apps on অক্টোবর ১৩, ২০১৮ Rating: 5

কোন মন্তব্য নেই:

Blogger দ্বারা পরিচালিত.