অল্প কথায় জেনে নিন - জৈন ধর্ম কি ? জৈন ধর্মের নীতি গুলি কি ? জৈন ধর্ম ও বুদ্ধ ধর্ম কি এক ?

 জৈন ধর্ম কি ?  জৈন ধর্মের নীতি গুলি কি ? 



জৈনধর্ম মূলত অহিংসা, অপরিগ্রহ এবং অনেকান্তবাদকে কেন্দ্র করে আবর্তিত এবং এই ধর্ম আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে পরমত সহিষ্ণুতা বৃদ্ধির সহায়ক। জৈনধর্ম অতি প্রাচীন। এই ধর্মের প্রাচীনত্ব-প্রতিপাদক কিছু বৈশিষ্ট্য হল

১। সর্বপ্রাণবাদ—জৈনধর্মে গাছপালা, উদ্ভিদ, জল, বায়ু, অগ্নি সমস্তকেই জীবন্ত বলে গণ্য করা হয়। এটা হল প্রাচীন সংস্কৃতির বিশুদ্ধতাজ্ঞাপক এবং এটাই জৈনধর্মের সর্বোচ্চ বিশ্বাস। ফলে সমগ্র জীবজগৎকে সম্মান করবার জন্য এই ধর্ম হল আদর্শস্বরূপ।

২। প্রতিমাপূজা—এটিও জৈনধর্মের প্রাচীনত্বের পরিচায়ক। জৈনরা মহান আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্বদের সম্মান করেন এবং তাঁদের জীবন থেকে নিজেদের আধ্যাত্মিক পরিশুদ্ধিলাভের প্রেরণা পান।

৩। কর্মবাদ—জৈনধর্মে রয়েছে— জীবাত্মা কর্মের বন্ধন থেকে মুক্ত হতে পারে এবং সাময়িক জীবনের আবরণের ভিতর পরমাত্মা অধিষ্ঠান করেন। এই তত্ত্ব প্রাক-আর্যদর্শনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।

৪। দিগম্বরত্ব - নগ্নতা এই ধর্মের অন্যতম বৈশিষ্ট্য এবং এটি জৈনধর্মে কঠোর তপশ্চর্যার সর্বোচ্চ আদর্শ হিসেবে স্বীকৃত।

৫। অনন্তের ধারণা—জৈনমতে জগৎ প্রাচীন, শাশ্বত ও স্থায়ী। জৈনধর্ম স্বীকার করে জগৎ অকার্য বা বন্ধ্যা এবং তপস্যায় নিহিত।

 মহাবীর কততম তীর্থঙ্কর ? 

মহাবীরের আবির্ভাবের আগে জৈনধর্মে তেইশ জন তীর্থংকর আচার্যের উল্লেখ পাওয়া যায়। মহাবীর সেই পরম্পরার চব্বিশতম তীর্থংকর। মানবজাতির কল্যাণের জন্য তিল তিল দুঃখ বরণ করে মহাবীর নিজের সাধনলব্ধ ঐশ্বর্যের দ্বারা হাজার হাজার আর্ত ও মুমুক্ষু প্রাণে নতুন আশা ও উদ্দীপনার সঞ্চার করেছিলেন। মহাবীরের জ্বলন্ত বৈরাগ্য ও অমৃতময় বাণী সেযুগে সত্যই আলােড়ন সৃষ্টি করেছিল। কঠোর তপশ্চর্যার দ্বারা তিনি উপলব্ধি করেছিলেন যে, কৈবল্য বা মােক্ষলাভে প্রত্যেক মানুষেরই জন্মগত অধিকার আছে। 

মহাবীরের প্রধান বানী কি ? 

মহাবীর বললেন, আত্মদর্শনই জগতের দুঃখ-দৈন্য থেকে মুক্তিলাভের উপায়। মােক্ষলাভই জৈনধর্মের প্রধান লক্ষ্য। নিজেকে নতুনভাবে গড়তে হবে। আর তার জন্য চাই কঠোরতা ও সংযম। তার ফলে অতীত কর্মের জন্য আসবে অনুশােচনা। এইভাবে মানুষ ধীরে ধীরে কর্মবন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে পরিশেষে মােক্ষ লাভ করবে এবং সফল হবেতাদের মানবজীবন ধারণের উদ্দেশ্য।

জৈন ধর্ম ও বুদ্ধ ধর্ম কি এক ? 

এই সময়ে ভারতবর্ষে বৌদ্ধধর্মেরও অত্যন্ত প্রভাব ছিল। জৈনধর্ম ও বৌদ্ধধর্মে বিশেষ বৈসাদৃশ্য নেই। বস্তুত উভয় ধর্মই অনেকাংশে হিন্দুধর্মের মতবাদের উপর প্রতিষ্ঠিত। উভয় ধর্মের ‘কর্মবাদ’ এবং বৌদ্ধধর্মের ‘আত্মার দেহান্তরবাদ’ হিন্দুধর্ম থেকে বিচ্ছিন্ন নয়। তাই জৈন ও বৌদ্ধধর্ম একই সময়ে পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী হলেও উভয়েই জনগণের সমর্থন লাভ করে।

শ্বেতাম্বর ও দিগম্বর কি ? 

 খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতকে জৈনগণের মধ্যে মতবিরােধ হয়। এর ফলে এই ধর্ম দুটি সম্প্রদায়ে বিভক্ত হয়ে পড়ে—শ্বেতাম্বর ও দিগম্বর। শ্বেতাম্বরগণ শ্বেতবস্ত্র পরিধানের পক্ষপাতী এবং তারা এই মত পােষণ করতেন যে,সাধনার দ্বারা স্ত্রী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলেই মােক্ষলাভের অধিকারী হতে পারে। কিন্তু দিগম্বরগণ নগ্ন থাকার পক্ষপাতী ছিলেন এবং একমাত্র পুরুষকেই মােক্ষলাভের আধার বলে মনে করতেন। এই মতভেদের ফলেই এই দুটি সম্প্রদায়ের উদ্ভব হয়। ভদ্রবাহু দিগম্বরদের এবং স্থলভদ্র শ্বেতাম্বরদের নেতা ছিলেন। এই সময়ে পাটলিপুত্রে জৈনগণের একটি সম্মেলন হয়। এরপর থেকে মহাবীরের উপদেশাবলি ‘দ্বাদশ-অঙ্গ’ বা‘সিদ্ধান্ত’ নামে পরিচিত হয়। কিন্তু দিগম্বরগণ একে প্রামাণ্য গ্রন্থ বলে স্বীকার করেন না।

অল্প কথায় জেনে নিন - জৈন ধর্ম কি ? জৈন ধর্মের নীতি গুলি কি ? জৈন ধর্ম ও বুদ্ধ ধর্ম কি এক ? অল্প কথায় জেনে নিন - জৈন ধর্ম কি ?  জৈন ধর্মের নীতি গুলি কি ? জৈন ধর্ম ও বুদ্ধ ধর্ম কি এক ? Reviewed by Wisdom Apps on অক্টোবর ১৬, ২০২১ Rating: 5

কোন মন্তব্য নেই:

Blogger দ্বারা পরিচালিত.